গৃহকর্মীর মূল্যায়ন ও মর্যাদা

0
1725

শাহ্ আব্দুল হান্নান

সম্প্রতি বনশ্রীতে গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে জনমনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত ছিল না। সব মানুষের বিবেক এখনো মরে যায়নি, তাই বিক্ষুব্ধ জনতা হত্যার বিচার চেয়েছে। এই ঘটনাসহ সব গৃহকর্মী হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ সঠিক বিচার না হলে গৃহকর্মীর মূল্যায়ন ও মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের বোধোদয় ঘটবে না।

ঘরে যারা কাজ করেন, তারা দুই ধরনের। এক গ্রুপে আছেন আমাদের মা, বোন ও স্ত্রীদের একটি অংশ। বাইরে আমরা যারা কাজ বা সার্ভিস করি, তাদের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেন এবং সময় দেন তারা। ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে তাদের কাজের সাধারণভাবে পূর্ণ মূল্যায়ন করা হয় না। এমনকি অনেকে মনে করেন তারা বেকার। তাদের কাজের মূল্য আসলে অনেক। তাদের ঘর পরিচালনার কাজ, সন্তানদের মানুষ করার কাজ, রান্নাবান্নার কাজ ইত্যাদির মূল্য যোগ করলে তার পরিমাণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর আয়ের চেয়ে অধিক হবে। কিন্তু বর্তমান আলোচনা তাদের বিষয়ে যারা বিভিন্ন গৃহে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন।

আমার পরিচিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বাসায় এক মহিলা কাজ করেন। তিনি সম্মানিত কৃষক পরিবারের কন্যা। অল্প বয়সে তার বাবা মারা যান। পরে আর্থিক দৈন্যের কারণে বাসার কাজ গ্রহণ করেন। তার বয়স চল্লিশ। কিন্তু বাসার ছেলেমেয়েরা তাকে ‘তুমি’ বলে, ‘বুয়া বলে। বুয়া শব্দটির উৎপত্তি যাই হোক না কেন, বর্তমানে তা তুচ্ছার্থেই ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে বাসায় যারা কাজ করেন, তাদের বেশির ভাগই কিশোরী বা মোটামুটি বয়স্কা নারী এবং তাদের বেশির ভাগই এসেছেন গ্রামের কৃষক সমাজ অথবা যারা কোনো কারণে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে এমন পরিবার থেকে। কৃষক সমাজ আমাদের দেশে সবচেয়ে সৎ সমাজ। তাদের মধ্যে নীতিহীনতা ও দুর্নীতি সবচেয়ে কম। কৃষক পরিবার থেকে আগত এসব মহিলার বা গার্হস্থ্য কর্মচারীর পদের নাম ‘বুয়া’ বা এ ধরনের কেন হবে? এটিও তো একটি কাজ বা জব যা ঘরে করা হয়। এটি বাইরের সার্ভিসের মতোই একটি সার্ভিস। কেন তাদের নাম গৃহ ম্যানেজার বা ম্যানেজার বা সহকারী ম্যানেজার হতে পারে না? রাসূল সা:-এর এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল? তিনি তো তাদের ‘আমার কন্যা’ বা ‘আমার পুত্র’ বলতেন। এর আলোকে দেখলে আজকে যাদের ‘গৃহভৃত্য’ মনে করা হচ্ছে, তাদের পদবির পরিবর্তন দরকার; যেমন আমি আগে উল্লেখ করেছি। তাদের বেতন, কাজের সময়, ছুটি, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে অনেক কথা আছে। এসব দিকে সবাইকেই নজর দিতে হবে। অসম্ভব কিছু নয়, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপই নিতে হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে আইন হয়েছে। এ আইনের পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 1 =