চিকিৎসায় অরাজক পরিস্থিতি ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত

0
1125

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে মাদকাসক্তিতে ভুগছে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। অথচ চিকিৎসক আছেন মাত্র ২২০ জন। মাদকাসক্তির চিকিৎসায় অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তাঁরা এ কথা বলেন।

‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আয়োজকেরা জানান, মূল দিবস ২৬ জুন। ওই সময় ঈদের ছুটির কারণে অনুষ্ঠানের আয়োজন আগে করা হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, মাদকাসক্তি চিকিৎসায় দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। একটির পর একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। অনুমতি দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিকিৎসার নামে নানা অপরাধ হচ্ছে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে না নিলে বিপর্যয় নেমে আসবে।  মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা স্বাভাবিক উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ন্যস্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। তিনি বলেন, ‘চাইলেই মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেওয়া যাবে না। এর জন্য বৈজ্ঞানিক যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি জনমত গঠন করা দরকার।’অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক মাদকাসক্তির চিকিৎসায় চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাত থেকে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করার দাবি জানান।

বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ‘মাদকাসক্তি রোগ, এটা কোনো অপরাধ নয়। তাই এই রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা উচিত।’ তিনি বলেন, মাদকাসক্তির চিকিৎসার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্ত হওয়ায় সমাজে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল উপস্থাপনায় ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, যারা মাদক নেয়, তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের মাদকাসক্তি রোগ দেখা দেয়। জাতীয় পর্যায়ে কোনো জরিপ না থাকলেও দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্তি রোগে ভুগছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাদকাসক্তির চিকিৎসা দেওয়ার মতো চিকিৎসক আছেন ২২০ জন। তবে ইনস্টিটিউট থেকে এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।অন্য উপস্থাপনায় একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকাসক্তির চিকিৎসায় ওষুধের দরকার হয়। এর চিকিৎসা শুধু চিকিৎসকদেরই করা উচিত। তিনি বলেন, ‘শুধু কাউন্সেলিং দিয়েই মাদকমুক্ত করা সম্ভব’, ‘সিগারেট কোনো মাদক নয়’, ‘মাদকাসক্তির চিকিৎসায় ওষুধ লাগে না’—সমাজে এ রকম নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো ফারুক আলম বলেন, ইনস্টিটিউটে যত মানসিক রোগী আসে, তার প্রায় ৩০ শতাংশ মাদকাসক্তির।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সভাপতি অধ্যাপক মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হেদায়তুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × two =