চিকুনগুনিয়ার দায়-দায়িত্ব না নেয়া আদালত অবমাননার শামিল

0
1397

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন’র সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, চিকুনগুনিয়ার দায়-দায়িত্ব না নিয়ে এড়িয়ে যাওয়া ও একে অন্যের উপর দোষ চাপানো আদালত অবমাননার শামিল।
আজ ১৭ জুলাই’১৭ সোমবার সকাল ১১:৩০ টায় সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন “চিকুন গুনিয়া মহামারির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, চিকুনগুনিয়া ঢাকা শহর সহ সারাদেশে মহামারির ন্যায় ছড়িয়ে পড়ার পরও স্বাস্থ মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের একে অন্যের উপর দায় চাপানো জাতির জন্য লজ্জাকর এক ব্যাপার। ইতিমধ্যে যেহেতু আদালত থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করা হয়ে এমতাবস্থায় দায় না নেওয়ার এই মানসিকতা আদালত অবমাননার শামিল বলে আমরা মনে করি।
মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ২০০৮ সালের পূর্বে এনোফিলিস মশার জীবানু থেকে ম্যালেরিয়া জ্বর হতো। ম্যালেরিয়া সারা দেশে ভয়াবহতা ছড়ালে সারা দেশে মশা মারার জন্য হেলথ্ ইন্সপেক্টর দ্বারা ডিটিটি পাউডার ছিটানো হয়। পরে দেখা যায় ডিটিটি পাউডারে এনড্রিন এর পরিমান বেশী থাকায় জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। যার কারণে এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরবর্তীতে কোন সরকারই আ্জ পর্যন্ত সারা দেশে মশা মারার জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। এর পরেই ২০০৮ সালে অজ্ঞাত রোগে জ্বর শুরু হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেন এক প্রকার এডিস মশার কামড়ে এই জ্বর হচ্ছে। কিছু দিন আবার মশা নিধনের কার্যক্রম চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই এডিস মশাই ভয়াবহ আকারে চিকুনগুনীয়া মহামারী আকারে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয়েছে। এ নিয়ে সরকার ও সিটি কর্পোরেশন একে অপর কে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় গত ১৪ই জুলাই ২০১৭ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব আনিসুল হক সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে  চিকুনগুনীয়া মহামারীর দায়ভার নিতে অস্বীকার করেন এবং বিব্রতকর কিছু বক্তব্য জাতিকে মর্মাহত করেছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে পরের দিন তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমরা মনে করি সিটি কর্পোরেশন কোন ভাবেই দায় এড়াতে পারে না। কারণ যাদিও তারা অথরিটি না তার পরও তাদের যে দায়িত্ব ড্রেন, ডোবা নালা, খাল, রাস্তা-ঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা এ সকল করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আর এসকল জায়গায় মশা-মাছি দ্রুত বর্ধিত হয়ে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। সিটি কর্পোরেশন গুলোতে মশা মারার জন্য ফকার মেশিন এর মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ লক্ষ করা যায় যা একেবারেই অপর্যাপ্ত এবং এই ক্যামিকেল অকার্যকরও বটে। এ ঔষধ প্রয়োগের পর ঐ জায়গায় কিছুক্ষন পরেই আবার মশার উপদ্রপ শুরু হয়। এর সকল কিছুর মূল কারণ মশার ক্যামিকেল রেজিষ্ট্যান্স হয়ে যাওয়া। সিটি কর্পোরেশন এই সকল মশার ক্যামিকেল নিয়ে নতুন করে কোন পরিকল্পনা না থাকায় রেজিষ্ট্যান্স হওয়া ক্যামিকেল ছিটানো লোক দেখানো ও অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। এই ক্যামিকেল রেজিষ্ট্যান্স হওয়ার জন্য দায়ী মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ নষ্ট, ডোবা-নালা ও জলাধারে প্রবাহ না থাকা, উচ্চ মাত্রার কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ। আর এর ফলেই মশাদের শরীরে দিনে দিনে ক্যামিকেল সহ্য ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে তারা নানা রোগে ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে আমাদেরকে আক্রান্ত করছে। কখনো ম্যালেরিয়া কখনো ডেঙ্গু, আবার বর্তমানে চিকুনগুনীয়া নামে আক্রান্ত করে যাচ্ছে। আর এ সকল কিছুর জন্য মূলত যারা দায়ী তারা এ সকল মশাদেরকে ক্যামিকেল রেজিষ্ট্যান্স করে দিয়েছে। এদেরকে জাতির সম্মুখে চিহ্নিত করা প্রয়োজন বিধায় মানবিক বিবেচনায় আমাদের আজকের এই আয়োজন।
বিভিন্ন মহল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কে দোষারোপ করলেও প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা হয় নি। ইতিমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট চিকনগুনীয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরাও আশা রাখি সরকার অভিভাবক হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।
আমরা এবার দেখতে চাই মশার কয়েল উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাত এবং কীটনাশক প্রয়োগ গবেষণা ও নিয়ন্ত্রন করার প্রতিষ্ঠান কারা? সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বালাই নাশক বিভাগই হচ্ছে এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার আরেক পর্যায়ে দায়িত্ব রোগতত্ত্ব বিভাগ, তৃতীয়ত বিএসটিআই এর ভুমিকা এখানে নামমাত্র কারণ উপরের দুই বিভাগের ছাড়পত্র ছাড়া বিএসটিআই অনুমোদন দিতে পারেনা।
আমরা এই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পেলাম এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বেশীরভাগ লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে দূর্নীতির মাধ্যমে।
তাদের কোন প্রকার নজরদারী না থাকায় মশার কয়েল উৎপাদনকারী বেশীরভাগ বৈধ অবৈধ প্রতিষ্ঠানসমুহ গ্রাহকদের নজর কাড়ার জন্য উচ্চমাত্রার বা অনুমোদন ছাড়া ভিন্ন মাত্রার নকডাউন কীটনাশক ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছে। আর এই সকল ক্যামিকেল মশা গ্রহণ করতে করতে তারা কেমিকেল রেজিষ্ট্যান্স হয়ে গেছে। কৃষি জমিতেও একই অবস্থা বিরাজ
করছে। যদিও এ সকল উৎপাদনকারী অল্প সময়ের মধ্যে আজ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এদের সহায়তা করছে আরেক শ্রেণীর আমদানীকারক যারা উৎপাদনের নামে লাইসেন্স গ্রহণ করে বাজারে বিভিন্ন ক্যামিকেল বিক্রয় করে আসছে। এতে করে যা হচ্ছে সরকার বা সিটি কর্পোরেশন যে ক্যামিকেল ছিটায় তা দ্বারা মশা মরা তো দুরস্তান ডিম্বাশয়ও ধ্বংস করা যাচ্ছে না।
তাই আমাদের কতিপয় দাবী ও পরামর্শ নি¤েœ উল্লেখ করছিঃ
০১। সারা দেশে মশা নিধনের জন্য পূর্বের ন্যায় হেলথ্ ইন্সপেক্টর নিয়োগ করে মশা মারার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
০২। ঢাকাসহ সারা দেশে সকল জলাধার পরিস্কার করে জলপ্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। যত্রতত্রভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
০৩। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে সঠিক নজরদারী ও দূর্নীতিমুক্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় এনে অবৈধভাবে নেয়া সকল লাইসেন্স বাতিল এবং অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ বন্ধ করে দিতে হবে সেই সাথে উৎপাদন এর নামে আমদানী করা ক্যামিকেল খুচরা বাজারে বিক্রয় বন্ধ করতে হবে।
০৪। যে সকল অবৈধ উৎপাদনকারী অবৈধভাবে উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে চিকনগুনীয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করা হোক।
০৫। মশার ধরণের সাথে সাথে নতুন নতুন ক্যামিকেল আবিস্কার বা আমদানী করে সুষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
০৬। জনসচেতনতা তৈরী করার জন্য রাষ্ট্র ও সকল সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন সমুহকে একযোগে কাজ করতে হবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বও কম নয়। আমাদেরকে নিজ দায়িত্বে সকলের ঘর বাড়ি ও বাড়ির চারপাশ পরিস্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে।
০৭। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
০৮। সারা দেশে হাসপাতাল সমুহকে বিশেষ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সকল হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
০৯। সারা দেশে মশার কয়েল ও কীটনাশক কারখানাসমুহকে একসাথে করে একটি আলাদা পেষ্টিসাইড
শিল্পঅঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। এতে করে নজরদারী ও পরিবেশ উভয়ই রক্ষা হবে।
১০। মহামান্য হাইকোর্টের রুল দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, কৃষিবিদ ইন্সটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. আলাউদ্দিন পিকে, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরু, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান, কর্মসংস্থান আন্দোলনের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন, সংগঠনের মহাসচিব এড. আবু বকর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. ইসরাত হাসান, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির মহাসচিব মিজানুর রহমান মিজু, যুগ্ম সম্পাদক কাজী আমানুল্লাহ মাহফুজ, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক সহ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 + 5 =