জনতার ঢল বিএনপির বিজয় র‌্যালিতে

0
1257

জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শপথ ॥ জাতীয় পতাকা, নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও রঙিন বেলুন নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন লাখো নেতাকর্মী সমর্থক। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি আযোজিত বিজয় দিবসের  র‌্যালি শুরু হওয়ার আগে তিনি এ আহবান জানান।  মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত বিএনপির বিজয় র‌্যালিতে জনতার ঢল নামে। গতকাল রবিবার পূর্বনির্ধারিত বিজয় র‌্যালিতে বেকেল তিনটার আগেই নয়াপল্টন ও আশেপাশের সকল এলাকায় লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। : গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির শপথ নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের ৪৬তম বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করেছে বিএনপি। জাতীয় পতাকা, নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন-রঙিন বেলুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় লক্ষাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক। নেতা-কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও জিয়াউর রহমানের স্মরণে নানা শ্লোগান দেয়। গতকাল রবিবার দুপুর থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টন সড়েকের এসে সমবেত হ্য়। ফকিরের পুল থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত বেলা আড়াইটায় লাখ লাখ নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। : বিকাল ৩টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর হয়ে বিকাল পৌনে তিনটা ৩৭ মিনিটে মালিবাগের এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রাটির অগ্রভাগ যখন মালিবাগের মোড়ে তখনও শেষ ভাগ নয়া পল্টনের মোড় অতিক্রম করতে পারেনি। শোভাযাত্রাটি মোড় ঘুরে আবার পল্টনে দিকে চলে যায়। বিজয় শোভাযাত্রায় বিএনপির দলীয় পতাকার পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান-বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া-সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি নিয়ে আসেন নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রায় ব্যান্ড সঙ্গীতের দলও ছিলো। অনেকে সেজেছে মুক্তিযোদ্ধার সাজে। : শোভাযাত্রার আগে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধুমাত্র একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্যে, ক্ষমতায় টিকে থাকাবার জন্যে সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে আজ এই সরকার পদদলিত করতে চায়। আজকের এই দিনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আমরা করছি। এই দিনে বলতে চাই, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে জনগণের রায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। : বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব একাত্তরের শহীদদের প্রতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, একাত্তরে যে চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে যে স্বপ্নœ দেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। আজকে ৪৭ বছর পরও আমাদের দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বলতে হয়, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে মানুষ। তারা খুন হয়ে যায়, গুম হয়ে যায়। আজকে শত শত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যোদ্ধাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারা অন্তরীণ। এই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। কারাগার ভাঙতে হবে। আমরা সমৃদ্ধ স্বপ্নের বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, মানুষ তার মতপ্রকাশ করতে পারবে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে লিখতে পারবে; এই ধরনের মুক্ত বাংলাদেশ চাই। : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করতে’ সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে জনগণকে পদদলিত করতে চায় বলেও মত প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কখনই পদদলিত করে রাখা যায়নি, তাদের কখনো দাবিয়ে রাখা যাবে না। এদেশের মানুষ অতীতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, এবারও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় র‌্যালির মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য সোচ্চার হতে নেতাকর্মীসহ দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। : শোভাযাত্রা শুরুর আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৪৭ বছরেও মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।  বর্তমান ভোটার বিহীন সরকার বাকশাল কায়েম করতে গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। : শোভাযাত্রায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, হাসান মামুন, সালাহ উদ্দিন ভূইয়া শিশির, শেখ মো. শামিম, আ ক ম মোজ্জামেল হক, মোতাহার হোসেন পাটয়ারী, আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পদক নূরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদিকা সুলতান আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি  মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন, দফতর সম্পাদব এবিএম আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি,  জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রিপন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল রিয়াদ, যুবদল দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, বিএনপি নেতা দেওয়ান মো. নাজিম উদ্দিন, মো. ইসমাইল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মো. মিরাজ উদ্দিন, মো. মোস্তফা কামাল  হৃদয়, আনোয়ার হোসেন মন্ডল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মাদ রাসেল, ওমর ফারুক মুন্না, মেহবুব মাছুম শান্ত, কাজী মোখতার হোসেন, মির্জা ইয়াসিন আলী, সেলিনা সুলতানা নিশিতা, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক কাজী বাশার হোসেন, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সুমন, দফতর সম্পাদক তানভীর আহমেদ খান ইকরাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-গণ সংযোগ বিষয়ক সম্পাদক আমজাত হোসেন শাহাদাতসহ লক্ষাধিক নেতাকর্মী  শাভাযাত্রায় অংশ নেয়। এই শোভাযাত্রায় নয়া পল্টন থেকে মালিবাগ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve + 12 =