নারীর ওপর সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতন প্রসঙ্গে :

0
1630

লেখক : এস ইবাদুল ইসলাম

নারীর ওপর সহিংসতা বা নির্যাতনের বিষয়টি নানাভাবে আলোচনায় এলেও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি অনেকটাই আড়ালে থেকে যায়।বেশির ভাগ ভুক্তভোগী-নারীই জানেনা যে এই নির্যাতনের বিষয়ে যে আইন সহায়তা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের নারীদের ওপর মানসিক নির্যাতনের সবচেয়ে বেশী ঘটনা ঘটেছে তার স্বামীর ঘরে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান (বিবিএস) প্রথম বারের মতো নারী নির্যাতন নিয়ে করা ভায়োলেন্স অ্যগেইনস্ট উইমেন (ডি এ ডব্লিউ) সার্ভে ২০১১ শীর্ষক জরিপ অনুযায়ী বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোন না কোন সময়ে, কোন না কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৮২ শতাংশই মানসিক নির্যাতনের শিকার। কোন ধরনের নির্যাতন কোথায় হয়, এ প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ নারীই স্বামীর ঘরে মানসিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ্য করেন। নারী নির্যাতন নিয়ে বিবিএস প্রথম জরিপ প্রকাশ করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ডি এ ডব্লিউ) সার্ভে ২০১৫ সালের শীর্ষক নতুন জরিপ সম্পন্ন করেছে বি বি এস। এ জরিপের ফলাফল আনুষ্টানিক ভাবে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
অন্যদিকে, ২০১০ সালের পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনে অন্যান্য নির্যাতনের পাশপাশি মানসিক নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে। তবে এ আইনের আওতায় মানসিক নির্যাতনের জন্য আইনি সহায়তা চেয়ে মামলার সংখ্যা হাতে ঘোনা বিগত ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (ব্লাস্ট) পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের আওতায় করা ৮০ টি মামলায় ভুক্তভুগী ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দেয়। এর মধ্যে ৩২ টি মামলা বিশ্লেষন করেন ব্লাষ্টের গবেষক মুহসিন হোসেন। এতে দেখা যায় ৩২ টির মধ্যে কেবল তিনটিতে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইনের সঙ্গেঁ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন দেশের নারীদের বেশীর ভাগই শারীরিক ও অর্থনৈতিক সহ অন্যান্য নির্যাতনকেই অপরাধ মনে করেন। মানসিক নির্যাতনও যে অপরাধ এবং এই বিষয়ে আইন আছে সেটাও অনেকে জানেনা ।
আবার মানসিক নির্যাতন পরিমাপ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার ফলে ও আইনের ব্যবহার কম হচ্ছে। পারিবারিক সর্ম্পক রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে পরিবারের অন্য কোনো নারী বা শিশু সদস্য শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতির শিকার হলে একে পারিবারিক সহিংসতা বোঝানো হয়েছে। মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা ভয় দেখানো বা এমন কোন উক্তি করা যার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত ব্যক্তি মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাকে মানসিক সহিংসতা অর্থে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া হয়রানি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তির ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশে বাধা দেওয়ায় ও এ নির্যাতনের অর্ন্তভুক্ত আইনে সংক্ষিপ্ত ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতি হলে বা ক্ষতির আশংকা থাকলে আদালতের কাছে ক্ষতিপুরনের জন্য আবেদন করার ব্যবস্থা বিধান রাখা হয়েছে।
যদিও এ আইনটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারনা এখনো কম। আইনের ব্যবহারটা ততোটাই বাড়ানো যাইনি। শিক্ষিত নারীরা মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি বোঝতে পারলেও বিভিন্ন কারনে আইনি সহায়তা নিতে চান না। এর কারন হিসাবে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস কারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ¯œাতকোত্তর পাশ এক নারী বলেন। স্বামীর টাকা আছে তবে পড়াশোনায় আমার থেকে কম। তাই স্বামী আমাকে চাকুরী দিতে চায়নি। সারাক্ষন আমাকে সন্দেহ করে তবে সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে সব কিছু সহ্য করে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × four =