নীরব হত্যাকাণ্ড ॥ নিরাপদ খাদ্যের আইন আছে বাস্তবায়ন নেই ০ ভেজালবিরোধী অভিযান হলেও ভেজালের উৎস আজও চিহ্নিত হয়নি ০ থাইল্যান্ডের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশীদের বেশিরভাগ খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত

0
7791

এক সময় দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করাই ছিল চরম অপরাধ। পানি মেশানো দুধকেই ভেজাল হিসেবেও গণ্য করা হতো। এখন দুধে জীবনঘাতী উপাদানও মেলে। শুধু দুধ নয় দেশে সামগ্রিক নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তাই আজ হুমকির মুখে। ভেজাল ও বিষযুক্ত খাবার খেয়ে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও এ বিষয়ে সরকারের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। বিচারপতি খায়রুল হকের মতে, এটাও একটি হত্যাকাণ্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবার আগে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্প নিয়েও কোন লাভ হবে না। সরকার উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্পের পেছনে সময় ব্যয় করলেও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এটি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি করতে ব্যর্থ হলে জাতির জীবনে ভবিষ্যতে অন্ধকার নেমে আসতে পারে। বিষাক্ত ও ভেজাল খাবার খেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জাতি গঠন করা যায় না। আর একটি জাতির মস্তিষ্ক সুষ্ঠু স্বাভাবিক না থাকলে হাজার উন্নয়নেও কোন লাভ হবে না। ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্যের প্রভাব হতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে অতি বিত্তবান কেউ রেহাই পাচ্ছে না। ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্যের প্রভাবে দেশে এক ধরনের নীরব হত্যা ও অসুস্থতার মহামারী চলছে। অথচ এদিকে নজর দেয়ার সময়ই নেই সরকারের।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, দেশে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য উৎপাদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও এটি নিরসনের সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ খুব সামান্যই। শুধু মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে অভিযান সীমিত হয়ে আছে। আবার মোবাইল কোর্টে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই, অনুমাননির্ভর হয়ে। আসল অপরাধীকে আজ পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। অভিযানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপরাধী লোক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আসল অপরাধী সবসময় থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলেও ভেজালে উৎস কি, প্রকৃত অপরাধী কারা তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করতে না পারলে গুটিকতক নিরাপদ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ভেজাল রোধ করা যবে না। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য অনুসন্ধান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু জরিমানার মাধ্যমে খাদ্যের ভেজাল রোধ করা যাবে না। এমনকি ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদও এক সেমিনারের উল্লেখ করেছেন শুধু ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালিয়ে ভেজাল বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, প্রতিমাসেই ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে অভিযান করা হয়, অভিযানে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, তবু ভেজাল যায় না। অবস্থা এমন পর্যায়ের পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষ এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে খেতেও ভয় পায়।
ভেজাল বা বিষযুক্ত খাবার উৎপাদন বন্ধে সরকার কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা না গেলেও এর বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজন আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ হয়নি। বিচারপতি খায়রুল হক সম্প্রতি বলেন, আইন দিয়ে কোন কাজ হবে না। প্রয়োজন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন। বর্তমানে খাদ্যে বিষক্রিয়া যে পর্যায়ে চলে গেছে তা রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান অবস্থায় ভেজাল ও খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রয়োগের কারণে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ফলে দেশে নীরব গণহত্যার উৎসব চলছে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ভেজাল বা খাদ্যে বিষক্রিয়া রোধে রয়েছে এক ডজন আইন। সরকার ১৯৫৯ সালে নিরাপদ খাদ্য অধ্যাদেশ জারি করলেও এটি একাধিকারবার পরিবর্তন পরিবর্ধন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন পরিবর্তন ও সংশোধনে সরকার যে সময় ব্যয় করেছে, খাদ্যে ভেজাল রোধে সে পরিমাণ গুরুত্ব দেয় হয়নি। ভেজাল রোধে শুধু নিরাপদ খাদ্য অধ্যাদেশ নয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে একাধিক আইন রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য তৈরি, বিপণন এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রয়েছে ১৮৬০ সালের দ-বিধি আইন। এ আইনের ২৭২ ও ৭৩ ধারায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫ গ ধারায় খাদ্যে ফরমালিন মেশানোর সঙ্গে জড়িত ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে এবং ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদ- বা ১৪ বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে খাদ্যে ভেজাল মেশানো বা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রয়ের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এছাড়া সরকার সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ নামে একটি আইন করেছে। কিন্তু এসব আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে ভেজাল বা বিষযুক্ত খাবারের ছড়াছড়ি। এছাড়া আদালত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রত্যেক জেলায় ও মহানগরের খাদ্য আদালত গঠন, একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথা বললেও আজ পর্যন্ত সরকার এসব বাস্তবায়ন করেনি।
খাদ্যের বিষক্রিয়ায় কোন পর্যায়ে গিয়ে মিশেছে তা সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও) এবং খাদ্যনিরাপত্তা গবেষণাগারে এ বছরের এপ্রিল মাসের যৌথ পরীক্ষায় রাজধানীর ৮২টি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, ফল ও শাক সবজির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে নিষিদ্ধ ডিডিটি, এনড্রিন, হেপটাক্লোর এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। খাদ্যে এসব উপাদানের মাত্রা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাত্রার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এছাড়া এ গবেষণায় ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক সবজিতে বিষাক্ত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পাওয়া গেছে। চালের ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫টিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে। মুরগি ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এ্যান্টিবায়োটিক। আম ও মাছের ৬৬টি নমুনায় পওয়া গেছে ফরমালিন। লবণে পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ সীসা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন (২০১৪) উল্লেখ করা হয়েছে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের (আইপিএইচ) পরীক্ষাগারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে মোট ২৮ হাজার ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার ৪৯ শতাংশ ভেজাল মিশ্রিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে আইপিএইচ যথাক্রমে ৬ হাজার ৩৩৮টি, ৫ হাজার ৭৪৯টি, ৫ হাজার ৮১২টি, ৫ হজার ৩২২টি এবং ৪ হাজার ৯৬৭টি খাদ্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ভেজালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যথাক্রমে ২ হাজার ৯৮২, ২ হাজার ৯৯০, ৩ হাজার ১৪৭, ২ হাজার ৫৫৮ এবং ২ হাজার ১৩৭টি নমুনায়। ২০১১ সালের পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি ভেজালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যার মাত্রা ছিল ৫৪ দশমিক ৪ ভাগ। যদিও বর্তমানে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ০২ ভাগে।
পাবলিক হেলথের গবেষণায় পরীক্ষা করা খাদ্য নমুনার মধ্যে ছিল, সরিষার তেল, সয়াবিন, পামওয়েল, দুধ, গুঁড়া দুধ, জুস, ফ্রুট সিরাপ, মধু, মিষ্টি, ক্যান্ডি, বিস্কুট চকোলেট, কেক, দই আচার, শুঁটকি মাছসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য। এর মধ্যে ঘি, জুস মধু ক্যান্ডি ও সয়াবিল তেলের ৮০-৯৯ ভাগ ভেজালের নমুনা পাওয়া গেছে। জাতীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচ) অধীনে পরিচালিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশের মানুষ প্রতিদিন যে মাছ, মাংস, দুধ, ফলমুল, চাল, ডাল, তেল মসলা ও লবণ খাচ্ছে তার শতকরা ৪০-৫৪ ভাগ পর্যন্ত ভেজাল রয়েছে। এসব খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক যেমন এনড্রিন, ডিডিটি, হেপ্টাক্লোর মেথোক্সিক্লোর, ইথিয়ন (এক ধরনের ভারী সিসা জাতীয় পদার্থ) ও আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সামান্য মুনাফার লোভে, অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে এমন কোন খাদ্য নেই যাতে ফরমালিন, কার্বাইডসহ ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই ভেজালে ছড়াছড়ি। মূলত বিষাক্ত এসব কেমিক্যালের সহজপ্রাপ্ততা, আইনের দুর্বলতা এবং যথাযথ নজরদারির অভাবেই খাদ্যে ভেজাল মহামারীর আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে বিষযুক্ত ও ভেজাল খাদ্যের হাত থেকে দরিদ্র শুরু করে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীও রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের মতে, বিষযুক্ত, অনিরাপদ ভেজাল খাদ্যের কারণে দেশে এক ধরনের নীরব গণহত্যা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায়, অতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসয়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই কারণে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় পরিমাণ মতো কীটনাশকের ব্যবহারের অনুমতি দিলেও কি হারে ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোন নজরদারি নেই। দেখভালের জন্য প্রতিটি জেলা উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা থাকলেও তারা মঠে গিয়ে কৃষককে কখনও এ বিষয়ে সচেতন করেন না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১০ সালের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে গত দশ বছরের দেশে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে ১০ গুণ। এছাড়া কীটনাশক হিসেবে এমন সব পদার্থের ব্যবহার রয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এগুলোর ব্যবহার বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব রাসায়নিক যৌগের মধ্যে রয়েছে এমড্রিন ও এনড্রিন। বাংলাদেশে এগুলো নিষিদ্ধ থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ থেকে সবজি রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার।
তাদের মতে, সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। ভেজাল খাদ্য বিষাক্ত খাদ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর খাদ্যের কারণে প্রায় মানুষ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে খাদ্যে কৃত্রিম রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় হৃৎপি-, যকৃত, ও কিডনির বিভিন্ন সমস্যা, ক্যান্সার, হাঁপানি, অন্ত্রে ব্যথা, পেটের পীড়া, গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুর ক্ষতি, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, মাংশপেশীর সঙ্কোচন, বমি, মুখে লালা আসা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা চোখের মনি ছোট হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, দুর্বলতা, তলপেট ব্যথা, খিচুনি ইত্যাদি রোগের কারণ হতে পারে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। মূলত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই এ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ মেশানো হলে ফুসফুসের ক্ষতি, পেটব্যথা, বমি, ডায়ারিয়া, জ্বর মাংশপেশীর দুর্বলতা, দেখা দেয়া। কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল নার্ভাস সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে ২০১২ সালে দিনাজপুরে লিচু খেয়ে ১৪ শিশুর মৃত্যুর কারণ ছিল কীটনাশক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। থাইল্যান্ডের বামুনগ্রাদ হাসপাতলের বিশেষজ্ঞদের মতে, সেখানে চিকিৎসা নেয়া অর্ধেকের বেশি রোগীই বাংলাদেশের। যারা কিডনি লিভার ও প্রজনন সমস্যায় চিকিৎসার নিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদফতরের সবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ওপর রয়েছে। ফলমুল মাছ মাংস, দুধ সবজি কি পরিমাণ ফরমলিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, টেক্সটাইল ডাই, কীটনাশক রয়েছে তা পরীক্ষা করে জনগণকে অবহিত করা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে গবেষণাগারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব সংস্থার রয়েছে নিজস্ব গবেষণাগার, যা খাদ্য বিশ্লেষণ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করা হলেও নিজ দায়িত্বে তারা তথ্য জনগণকে অবহিত করছে না।
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা একটি হত্যাকাণ্ড। সাধারণ হত্যাকাণ্ডের মতো এটাও একটি অপরাধ। এর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমে দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভেজালে কারণে দেশ এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে চলে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen + sixteen =