পটুয়াখালী-৪মনোনয়নপ্রত্যাশীদের যাতায়াত বেড়েছে নির্বাচনী এলাকায়

0
402

কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসন। এ আসনের আওতায় রয়েছে-কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্র ও সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গুরম্নত্বপূর্ণ এ আসনে অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তৎপরতা শুরু করেছেন। এ আসনে কলাপাড়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভায় ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৪জন ও রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ভোটার ৭৪ হাজার ৮১৭জন। প্রথমদিকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। কিন্তু ৯০-এর পরে জাতীয় পার্টির কাছ থেকে আসনটি হাতছাড়া হয়ে আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। এ আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। সঙ্গত কারণে আসনটি ধরে রাখতে তৎপর আওয়ামী লীগ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরম্ন করে দিয়েছেন। পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অংশগ্রহণ বাড়ছে দলীয় কর্মসূচিতে। মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কাজ করছেন অনেকে। আবার যারা গত কয়েক বছরে নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি, তারাও নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি মাহবুবুর রহমান। তিনি এই আসনে তিনবার এমপি হন। ÿমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথমবার মাহবুবুর রহমান এমপি নির্বাচিত হলে তাকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। এরই মধ্যে এই এমপি পুরোদমে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। তবে মাহবুবের বিরম্নদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় নির্বাচনী এলাকায় ভাবমূর্তি কিছুটা সংকটে পড়ে। এমপি মাহবুবের অনুসারীদের দাবি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি টিকিয়ে রাখতে হলে এই আসনে মাহবুবুর রহমানের বিকল্প নেই।
অপর এক মনোনয়ন প্রত্যাশী আলাউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি একাধিকবার কলাপাড়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আমেরিকায় অবস্থানকালীন মেট্রো ওয়াশিংটন আ’লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি কলাপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করায় সাধারণ নেতা-কর্মীরা খুশি। তাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগ এ আসনে জিতবে বলেই নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি মরহুম আনোয়ার-উল-ইসলামের ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আব্দুলস্নাহ আল ইসলাম লিটন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন সাবেক এমপি আনোয়ারের ছেলে লিটন-এমন গুঞ্জন জোরেশোরে বইছে। তিনি নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ শুরম্ন করে দিয়েছেন।
এই দুইজন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মহিব্বুর রহমান মহিব। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইতে পারেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যÿ ও রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যÿ দেলোয়ার হোসেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আরিফ বিন ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাবিবুর রহমান মিলন, কলাপাড়া উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসির উদ্দিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদুল আলম টিটো ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম সোহাগ।
এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবং কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি এবিএম মোশারেফ হোসেন। মোশারেফ ছাড়াও মাঠে রয়েছেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. মনিরম্নজ্জামান মনির। তার বাবা বিএনপির সাবেক এমপি মরহুম মোয়াজ্জেম হোসেন। মনিরের বাবার ক্লিন ইমেজের কারণে তিনি মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন বলে ধারণা করছে অনেকেই। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইছেন কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্ত্মাফিজুর রহমান।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসন গঠনের পর ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় এবং প্রধান বিরোধী দলবিহীন বিতর্কিত ১৯৮৮ সালের ৩ মে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মরহুম আব্দুর রাজ্জাক খান এমপি হন। তিনি জাতীয় পার্টির আমলে পরপর দুইবার এমপি ছিলেন। প্রথম নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার-উল-ইসলাম নির্বাচিত হন। তখন থেকেই জাতীয় পার্টির কাছ থেকে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায়। কেবল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি বিরোধী দলবিহীন বিতর্কিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে খালি মাঠে গোল দেয়ার মতো বিএনপির মোস্ত্মাফিজুর রহমান নির্বাচিত হন। বিতর্কিত ওই নির্বাচনের চার মাস পর অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের আনোয়ার-উল-ইসলাম নির্বাচিত হয়ে আসনটি পুনরম্নদ্ধার করেন। এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহবুবুর রহমান জয়লাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরম্নদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মাহবুবুর রহমান এমপি নির্বাচিত হলে তাকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাহবুবুর রহমান তৃতীয়বার এমপি হন। এ আসন গঠনের পর থেকে বেশির ভাগ নির্বাচনে জিতেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 − nine =