প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল আদায়ের ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

0
551

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বুড়িগঙ্গা-চীন মৈত্রী সেতুর টোল আদায়ের ১২ কোটি টাকা অভিনব কৌশলে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। বিগত ৩ বছর যাবৎ বিনা টেন্ডারেই আদায় করা হচ্ছে এই সেতুর টোল। আদায়কৃত টোলের তিন ভাগের একভাগ সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে বাকী দুই ভাগ দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছে মামুনুর রশীদ সিন্ডিকেটের সকল সদস্যরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর টোল আদায়। বিগত তিন বছর যাবত টেন্ডার ছাড়াই টোল আদায় করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে টোল আদায়ে অনিয়মের ফলে প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ সেতু থেকে বছরে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা টোল আদায় হয়ে থাকে, যার মধ্যে সরকারী কোষাগারে জমা হয় এক-তৃতীয়াংশ। আর বাকী টাকা ঢুকে মামুনুর রশীদ সিন্ডিকেটের পকেটে। এজন্য বিভিন্ন অজু হাতে মামুনুর রশীদ টেন্ডার দেয়ার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেন না। কেরানিগঞ্জ সড়ক বিভাগ-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান ও সড়ক বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান থেকে শুরু করে ব্রিজের উপর টোল আদায়ে কাজের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি শ্রমিকই এই সিন্ডিকেটের সদস্য। ছোট নোট থেকে শুরু করে বড় নোট সিরিয়াল অনুসারে সবার পকেটেই ঢুকে এই টাকা।
১৯৮৯ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর পোস্তগোলা-কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদের দুই পাড়ে নির্মান করা হয় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। সেতুটি উদ্বোধন করেন তৎকালিন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোঃ এরশাদ। শুরু থেকে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত যানবাহন ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা হারে টোল নেওয়া নির্ধারিত থাকলেও দিনে দিনে এটা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৪০ টাকা ৫০ টাকায়। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে ? অন্তত ৫ থেকে ৬ হাজার উপরে ছোট বড় যানবাহন পারাপার হয়। সেই হিসাবে এখানে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়। মাসে ৬০/৭০ লাখ টাকা অনুসারে বছরে ৮/১০ কোটি টাকা। এ অর্থের তিন ভাগের একভাগ সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে বাকী অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় মামুনুর রশীদ, মোঃ কামরুজ্জামান ও আনিসুর রহমান সিন্ডিকেট। যখন ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝুটঝামেলা শুরু হয় তখন ভিতরের খবর প্রকাশ পায় প্রত্রিকার পাতায়। তদন্তে আসে উপর মহলের বড় বড় কর্মকর্তারা। তারা টাকার বান্ডিল নিয়ে চলে যায় আর বলা হয় ঈদের পরে ঠিক হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুড়িগঙ্গা টোল ঘরের সংশ্লিষ্ট সওজের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ গত তিন বছর যাবৎ এ সেতুর টোল আদায়ের টেন্ডার না দিয়ে কৌশলে টোল আদায় করে নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছেন। ব্রিজের টোল আদায় ঘরের সামনে টোল আদায়ের মুল্য তালিকা বাধ্যতামুলক টাঙ্গিয়ে রাখার কথা থাকলেও ইচ্ছে মাফিক অতিরিক্ত টোল আদায়ের জন্য তালিকাটি টানানো হয়নি। গত তিন বছরে এই সিন্ডিকেট অন্তত ১২ কোটির টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়েছে। যা কোন তদন্ত কমিটিই এটা তদন্ত করে বের করতে পারবে না। কারন যেহেতু টেন্ডারে বাৎসরিক টাকার পরিমান নির্ধারণ করা নাই, তাই বছরে কত টাকা আদায় হলো আর কতই বা সরকারের কোষাগারে জমা হলে তার সঠিক হিসাব রাখা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। আদায় হলো ১শ টাকা আর জমা দেয়া হলো ২০ টাকা। এটা ধরার কোন সুয়োগ নেই।
সুত্র জানায়, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে যানবাহন ভেদে টোল বৃদ্ধি করা হয় ২ থেকে ৩ গুন। সেই সঙ্গে টোলের আওতায় আনা হয় ছোট ছোট যানবাহন গুলোকে। ফলে অতিরিক্ত টোলের হার কমানো ও টোল মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো। আন্দোলনকারীরা টানা কয়েকদিন বন্ধ করে দেয় যান চলাচল। ফলে কর্তৃপক্ষ ছোট হালকা যানবাহনের টোল মুক্ত ও বর্ধিত ভাড়া আদায় কার্যকর স্থগিত করেন। এ অবস্থায় টেন্ডার থেকে বিরত থাকেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ৯০ দিনের জন্য টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ কেরানিগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগকে। কিন্তু দীর্ঘ ৩বছর অতিবাহিত হলেও কোন টেন্ডার দেওয়া হচ্ছে না। তাই এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে মামুনুর রশীদ সিন্ডিকেট। সওজ-এর তথ্যানুযায়ী ২০-২৬ নভেম্বর-২০১৬ তারিখ পর্যন্ত সাত দিনে টোল আদায়ের পরিমান ৯ লক্ষ ৮হাজার ৮শত টাকা। যার দৈনিক গড়ে টোল আদায়ের পরিমান ছিল ১ লক্ষ ২৯হাজার ৮শত আটাশ টাকা। বার্ষিক আদায়কৃত অর্থের পরিমান ছিল প্রায় ৪ কোটি ৭৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ২ শত ২০টাকা। এদিকে কেরানীগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের মৌখিক হিসাবানুযায়ী গত ১ বছরে টোল থেকে অর্থ আদায় হয় ৫ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু লিখিত কোন হিসাব দিতে তালবাহানা করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা। সূত্র মতে সর্বশেষ বাৎসরিক ইজারার পরিমান ছিল ৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। তখন টানা তিন মাস হরতাল অবরোধ থাকায় যানবাহন চলাচল কম থাকলেও বিগত এক বছরে এর সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুন।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ জানান, আমাদের জনবল কম। ফলে একাজে প্রায় ২৪ জন স্টাফ সম্পৃক্ত থাকায় অন্য কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া আমরা সচ্ছতার সাথে টোল মুক্ত অথবা নতুন হারে টোল আদায় করতে চাই। আমরা দ্রুত টেন্ডার দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে টেন্ডারের ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 1 =