প্রযুক্তি খাতের গ্রাহকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান

0
1770

আজ ১৬ মে ২০১৭ইং মঙ্গলবার প্রযুক্তি খাতের গ্রাহকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তাঁর বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। বেলা ১২টায় সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন।
স্মারক লিপিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, আপনি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর টেলিকম ও প্রযুক্তির খাতে মনোপলি বাজার ভেঙ্গে প্রতিযোগিতা ও উন্মুক্ত বাজার সৃষ্টি করেছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে ভিষন ২০২১ রূপকল্প হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৭ইং যা আপনি মহাকাশে উৎক্ষেপন করবেন। আজ দেশের মুঠোফোন ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ১০ লক্ষ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং-এ এশিয়া মহাদেশে বাংলাদেশ ২য়। ২০১৩ সালে আপনি ৩এ প্রযুক্তি বাজারে এনেছেন। এছাড়াও সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক পৌছানোর কাজ এগিয়ে চলছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবস্থা আজ এমন পর্যায়ে পৌছেছে প্রযুক্তি ছাড়া আজ আর কোন কিছু ভাবা যায় না। এসকলই সম্ভব হয়েছে আপনার দূরদর্শিতা, আপনার সুযোগ্য সন্তান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের কল্যাণে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত প্রযুক্তি ও যোগাযোগের উন্নতি সাধিত হলেও এমনকি টেলিকম খাত থেকে মোট জিডিপি ৬.৫ ভাগ অর্জন সম্ভব হলেও এ খাতের যারা গ্রাহক তারা আজ বড়ই বিপদে রয়েছে। যদিও আপনার সময়েই ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ তৈরী হয়েছে। কিন্তু এ সকল আইনের কোথাও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের গ্রাহকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য কোন নিয়ম-নীতি বা আইন নেই। এমনকি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেরও প্রযুক্তি খাতের ফাকিবাজি রোধ করার বা গ্রাহকদের সুরক্ষা দেবার কোন বিধি ব্যবস্থা না থাকায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের দিন কে দিন প্রতারিত করে যাচ্ছে। গ্রাহকরা যখন দিশেহারা ঠিক সেই সময় ২০১৫ সালে আমাদের এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। এই সংগঠন অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন। যাদের মূল কাজই হচ্ছে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনসচেতনতা ও অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করা। ইতিমধ্যে আমাদের এই সংগঠনের কার্যক্রম স্বল্প পরিসরের হলেও গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা করার জন্য অনেক খানি কাজ করতে পেরেছি বলে আমরা মনে করি। যদিও আমাদের আর্থিক সংগতির কারণে সারা দেশ ব্যাপী কাজ করতে পারছি না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন আমাদের দেশের মানুষ সহজ, সরল ও প্রযুক্তির মার-প্যাচ এমনকি প্রযুক্তির খাতে শিক্ষার অভাব থাকায় এ খাতে ব্যবসায়ীরা যেমন: মুঠোফোন অপারেটর, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, কম্পিউটার সামগ্রি, মুঠোফোন ও এক্সোসরিস এমনকি ইন্টারনেট সেবা ও সিম কার্ড জালিয়াতি সহ অসংখ্য প্রতারণা এবং সাইবার অপরাধীদের উৎপাত, জালিয়াতি চক্রের ফাঁদ এ খাতে গ্রাহকদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এমনকি অনেকে নিঃস্ব সর্বসান্ত হয়েছে। এ খাতে জনসচেতনতা না থাকায় হরহামেশাই ঘটছে রেল দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা ও মুঠোফোন বিষ্ফোরণের মতো ঘটনা। এমতাবস্থায় চলতে থাকলে আগামী দিনে প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশ বড় সমস্যার সম্মুখীন হবে। জনগণের নানা সমস্যা গণমাধ্যমে লেখালেখি ও আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গত ২২ নভেম্বর ২০১৬ইং তারিখে একটি গণ শুনানির আয়োজন করে। তার ফলাফল আজঅবদি প্রকাশিত হয়নি। এখন এমন অবস্থায় দাড়িয়েছে যে, এই গণ শুনানির বিরুদ্ধে আরেকটি গণ শুনানির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। তাই আপনার সুদৃষ্টি আনতে আপনার দারস্ত হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সদয় অবগতির জন্য আমাদের কতিপয় দাবি ও সুপারিশ নি¤েœ উল্লেখ করছি।

দাবি ও সুপারিশ
০১.    মুঠোফোন নাম্বারকে জাতীয় পরিচয়পত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হোক। এতে করে স্মার্ট কার্ডের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে।
০২.    সিম নিবন্ধনের জালিয়াতি রোধ করতে সাবেক অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষক কমিটি গঠন করা হোক।
০৩.    কলড্রপের ন্যায্য হিসাব ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সঠিক পরিসংখ্যান বের করে গ্রাহকদের সমুদয় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক।
০৪.    নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা দ্রুত সচল করা হোক। সেই সাথে সারা দেশে টেলিকম নেটওয়ার্ক সমভাবে বণ্টন করা হোক। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ঠিক না করে এম.এন.পি ও ৪এ চালু না করা। কারণ ৩এ চালু হলেও বর্তমান নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ২এ ব্যবহারের উপযোগী নয়।
০৫.    সিটিসেল ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিনিয়োগের পূর্ণ অর্থ ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
০৬.    ইন্টারনেটের দাম নিয়ে লুটপাট বন্ধ করে গ্রাহকের কাজ থেকে আজ পর্যন্ত আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরৎ প্রদান করা হোক।
০৭.    বিটিআরসিকে প্রযুক্তি সম্পন্ন গ্রাহক বান্ধব ও পুনঃগঠন করা হোক।
০৮.    প্রযুক্তিখাতে গ্রাহকদের ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য একটি আলাদা ভোক্তা আইন প্রণয়ন করা হোক।
০৯.    মোবাইল ব্যাংকিং-এ বর্তমানে সার্ভিস চার্জ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সামর্থ্যরে বাইরে। তাই এর সার্ভিস চার্জ সর্বনি¤œ পর্যায়ে রেখে ১৬ কোটি মানুষের মোবাইল ব্যাংকিং চালু করা হোক।
১০.    নি¤œ মানের কম্পিউটার, হার্ডডিক্স, র‌্যাম, মাদারবোর্ড এমনকি সফ্টওয়্যার তৈরিতেও প্রতারণা নি¤œ মানের হ্যান্ড সেট ও এক্সোসরিস বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে।
১১.    প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহার রোধ করতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
১২.    মুঠোফোন ব্যবহার করে যারা রেল ও সড়কে প্রাণ দিয়েছে তাদের প্রত্যেককে ইন্সুরেন্সের আওতায় এনে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
১৩.    সরকার পরিচালিত টেলিটক দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো এর দুর্নীতি ও দুর্বল অবকাঠামো সর্বপরি অব্যবস্থাপনা ও ভিআইপি অবৈধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যা কিনা অন্য অপারেটরদের অসৎ কাজে উৎসাহ যোগিয়েছে। তাই টেলিটকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৪.    টেলিকম খাতের রাজস্ব ২১.৭৫ শতাংশ। যা আমাদের দেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত ব্যয় বহুল। তাই আসছে বাজেটে এ খাতের রাজস্ব কমিয়ে মূল্য সংযোজন কর ৭ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ২ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশ রাখার জন্য অনুরোধ করছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর অতিরিক্ত ১ শতাংশ সার চার্জ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে করে রাজস্ব না কমে আরো বৃদ্ধি পাবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 − three =