ভাইভাই রাইস মিল বন্ধের দাবী বুড়িচং থানার রামপুরে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ-ক্যান্সারে আক্রান্ত এলাকাবাসী

0
1229

মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারীঃ
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার রামপুর গ্রামে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে রাইচ মিল। গ্রামবাসির সকল প্রকার সুখ-শান্তি বিনষ্ট করে ভাই ভাই রাইচ মিল দুটি গড়ে তুলে নির্বিঘেœ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবত। চালের মিল দুটির  মালিকের নাম হচ্ছে ফজলু ও আলী আশ্রাফ। তাঁরা আওয়ামিলীগের প্রভাবশালী নেতা, ধনে জনে পরিপূর্ণও অসীম ক্ষমতার দাপটে মুখ খুলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। রাইচমিল গুলি স্থাপন করা হয়েছে বসতবাড়ীকে দেওয়ালের মাধ্যমে ভাগ করে। যে গ্রামের শান্তি প্রিয় নিরিহ মানুষেরা শতশত বছর ধরে এই গ্রামে শান্তিতে শৃংখলায় নিরবে নিবৃত্তে বসবাসের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস। এ অঞ্চলে কখনো পরিবেশগত অভিযোগ কিংবা  জনসাধারণের দুঃখ কষ্ট তেমন একটা ছিলনা। প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে মিল দুইটি স্থাপনের পর থেকে এই এলাকায় মানুষের উপর নেমে এসেছে সিমাহিন অবর্ণনীয়  দুঃখ কষ্ট। এই প্রভাবশালীদর ক্ষমতার দাপটে মিল দু’টি স্থাপনের মাধ্যমে এই এলাকার সকল মানুষকে ফেলে দিয়েছে সীমাহীন জনদুর্ভোগের মাঝে। প্রভাবশালী মালিকপক্ষ সারারাত মিল চালু রাখার কারনে মিলের শব্দে বৃদ্ধলোক, রোগী, শিশু, কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও এই দুষ্ট চক্রের নির্যাতন ও অত্যাচারীদের হাত থেকে কোনভাবেই রেহাই পাচ্ছে না। দিনের বেলায় আকাশে কালো ধোয়া ও ছাইয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে লোকজনের চোখ জালাপোড়া, বমি বমি ভাব, লেখাপড়ায় অমনোযোগীতা সহ এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে এক নতুন সমস্যা ও হতাশা। মাঠের ফসলি জমিতে কৃষকেরা বহু কষ্টের পরেও পর্যাপ্ত ফসল ঘরে তুলতে পারছেনা, একারণে কৃষকেরাও ক্ষতির শিকার হয়ে দারন ভাবে অসন্তুষ্ট। বিগত দশ বছর যাবত বুড়িচং থানার রামপুর গ্রাম এলাকায় অনবরত নষ্ট হচ্ছে গাছপালা ও পরিবেশের। অনেকেই জানিয়েছে এই এলাকায় এখন আর আগের মত গাছে আম, জাম ও কাঁঠালের ফলন ভাল হয় না। রাইস মিল গুলির আশে পাশে যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশই গরীব ও নিরিহ প্রকৃতির জনসাধারণ। মালিক কর্তৃপক্ষের ভয়ে টু-শব্দ করতেও কেউ সাহস পায় না। ফলে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে প্রভাবশালী দুই ভাই অত্যন্ত দাপটের সহিত আওয়ামীলীগের নামে চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিচারে সকল অপকর্ম। নিরীহ গ্রামবাসী নীরবে নিস্তব্ধে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে অত্যাচারীদের অত্যাচার। নিত্য ব্যবহার যোগ্য পুকুরের পানিতে মিলের গরম পানি ফেলে একদিকে মারা হচ্ছে মাছ, অপরদিকে ব্যবহারের অনোপযোগী হয়ে পড়ছে পুকুরের এই পানি। মাঝে মধ্যে পুকুর থেকে মরা মাছ ভেসে উঠার সংবাদও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। হাজার হাজার গ্রামবাসীর সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত হারিয়েছে এই বিতর্কিত রাইচ মিল স্থাপনের কারনে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন জীবীকা ধ্বংস ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে এই নিষ্ঠুর স্বার্থপর বিত্তশালী মালিকেরা দুই ভাই ফজলু ও আশ্রাফ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। মানুষের প্রতি এদের নেই বিন্দু মাত্র কোন দায়বদ্ধতা। এলাকাটিতে মারাত্মক পরিবেশ দুষণের কারণে একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার নাম হল শাহাজাহান। এনিয়ে এলাকায় নতুন করে চরমভাবে মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এছাড়া ও এখানে বিভিন্ন জন নানা রোগে প্রায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেছে। মিল মালিক ফজলু ও আলী আশ্রাফদের দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ ও জানমাল নিয়ে স্থানীয় জনগণ অবর্ণনীয় দু:খ কষ্টের মাঝে দিন কাটছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে মানুষ পড়লেও, মালিক পক্ষের কোন প্রকার সমস্যা নেই। কারণ তাদের রয়েছে প্রচুর অর্থ, কুমিল্লাতে রয়েছে বিশাল পাঁচ তলা বাড়ী। তাদের সন্তানেরা পড়া লেখা করছে শহরে। শহর-গ্রাম সব দিক মিলে তাঁরা রয়েছে শতভাগ নিরাপদে ও আরামে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজন জড়িত রয়েছে মালিকদের পক্ষে তাদের ক্ষমতার দাপটের কারনে যেন সবাই এখানে একেবারেই অসহায়। এখন প্রশাসনের লোকজন একদম চুপ মেরে বসে আছে, যেন এখানে কোন সমস্যা দেখার কেউ নেই, মানুষ বড়ই অসহায় এখানে।  কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মহাসড়কের পশ্চিম পার্শে এবং রামপুর মিলগেট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পশ্চিমে হল বুড়িচং থানার রামপুর এলাকায় হচ্ছে ভাইভাই রাইচ মিল দুটির অবস্থান। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর বর্তমান চেয়ারম্যান, বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এর বাড়ী এখানেই। এছাড়াও এই এলাকাটিতে আরো বেশ কয়েক জন কৃতি সন্তানের জম্ম স্থান এখানে। বিচারপতি মো: মমতাজ উদ্দিনের নামেই এ সড়কটির নামকরণ করা হয়। এই সড়ক দিয়ে একটু ভেতরে যেতে হয়। প্রথমেই বিচারপতির বাড়ী এবং মসজিদ। তারপরে দুটি দোকান এবং বাড়ীঘর এবং পরের অংশ হলো ভাই-ভাই রাইচ মিল দুটি, যা দাঁড়িয়ে আছে সমহিমায় এবং নিজ অঞ্চলের মানুষকে অত্যাচারের প্রতীক হিসেবে। পরিবেশ কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কোন মতে দায়সাড়া ভাবে ছাড়পত্র নিয়েছে বলে জানা যায়। অথচ পরিবেশ আইনানুযায়ী বসবাস কারী লোকজনের সাড়ে তিন কি:মি:দুরত্বের মধ্যে উৎপাদন মুখী কোন ইটভাটা-রাইচমিল স্থাপন বেআইনী। মিল মালিকরা বিদ্যুৎ অফিসকে টাকা পয়সা দিয়ে মেনেজ করে নিয়েছে বিদ্যুৎ লাইনটিও। তাদের এই অত্যাচারের বিষয়ে প্রশাসহনসহ নেতৃস্থানীয় কেউ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এভাবেই চলছে অত্যাচার, মানুষজন এনিয়ে চরমভাবে হতাশ। রাইচ মিল দুটির অবস্থান এবং অত্যাচারের কথা বুড়িচং থানার টিএনও এর নিকট ফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেননি, কিন্তু তিনি বলেন, এব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে তদন্ত সাপেক্ষে পরিবেশ দূষণ থেকে ভূক্তভোগী মানুষগুলিকে রক্ষা করার জন্য যা কিছু করা দরকার তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের নিকট বুড়িচং থানার অদূরে রামপুর এলাকার ভাই ভাই রাইচ মিল নামের দুটি রাইচ মিল স্থাপনের কারনে এখানে ভয়াবহ রপে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব দেখার দায়িত্ব তাদের ওপর নয়, এসব দেখার জন্য রয়েছে পরিবেশ কর্তৃপক্ষ। পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোঃ শামছুল আলমের নিকট এ সমস্যা নিয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখব এবং মিল স্থাপন কারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব। স্থানীয় নজরুল ইসলাম ওরপে নুরু মুহুরীর নিকট সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে কারো কোন অভিযোগ কিংবা তথ্য জানা থাকলে আমাদের জানান। সংবাদাতার নাম ঠিকানা গোপন রাখা হবে। চলবে..

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =