রাজধানীর ১০২ বার ও ক্লাবে পুলিশের কোটি টাকার চাঁদাবাজি!

0
1196

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে রাজধানীর ১০২ বার ক্লাবের পুলিশের কোটি টাকার চাঁদাবাজি বাণিজ্যের খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ডিএমপির চার শতাধিক পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রক্ষক হয়ে ভক্ষক হওয়ার ঘটনায় এক শ্রেণীর অস, দুর্নীতিবাজ, অপরাধী পুলিশের কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর ৪৯ থানা পুলিশের প্রতি শুরু করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। পুলিশের তদন্ত কমিটি চলতি মাসে রাজধানীর কাফরুলের কচুক্ষেতের নিউওয়েভ ক্লাবে ডাকাতির অভিযোগে আটক ডিবির এক এসিসহ ১১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে শাস্তির সুপারিশ করার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশের তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৬ এপ্রিল পুলিশের তদন্ত কমিটি কাফরুলের নিউওয়েভ ক্লাবে ্যাব পরিচয়ে ডিবি পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রুহুল আমিনসহ ডিবির ১১ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। গত ১৮ এপ্রিল রাতে ্যাব পরিচয়ে ডিবির একটি দল কাফরুলের ওই ক্লাবে অভিযান চালায়। ডিবির ওই সদস্যরা দাবি করেন, ওই ক্লাব থেকে বিপুল ইয়াবা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করা হয়। ওই সময় চারজনকে আটক করে কচুক্ষেত ক্যান্টনমেন্টের গেট দিয়ে যাওয়ার সময় আটক চারজন গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করে ওঠে। তখন চেকপোস্টে কর্মরত মিলিটারি পুলিশ (এমপি) সদস্যরা গাড়িটি আটক করে। তখন একজন বলতে থাকেন, তারা (ডিবির সদস্য) ক্লাবে ঢুকে মারধর করে টাকাপয়সা মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে ওই ১১ জনকে থানায় সোপর্দ করে মিলিটারি পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ জনকেই সাসপেন্ড করা হয়। এরপর ওই ঘটনার তদন্তে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জামিল আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেনযুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় এবং মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহমেদ। একটি তদন্ত সূত্র জানায়, ‘নিউ ওয়েভক্লাব থেকে ডিবি পুলিশের চাঁদাবাজি করতে যাওয়ার আগেও ওই ক্লাব থেকে চাঁদার টাকা ডিবির পকেটে ঢুকেছে। এর পাশাপাশি কাফরুল থানা পুলিশও ওই ক্লাব থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেত। তদন্তে দোষী ১১ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে

গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে রাজধানীর ৪৯ থানার পুলিশের চাঁদাবাজি অপরাধী কার্যক্রম বন্ধে শুরু করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। পুলিশ সদস্যরা যাতে মাদক, চাঁদাবাজি, অবৈধ লেনদেন, সন্ত্রাসসহ কোন ধরনের অপরাধে জড়াতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা নজদারি শুরু করা হয়েছে। গোপনে গোয়েন্দা নজরদারির ফলে পুলিশ সদস্যদের কেউ বড় ধরনের অপরাধে জড়ানোর আগেই তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে পুলিশের মাঝে অপরাধপ্রবণতা কমে আসার পাশাপাশি সাধারণ মানুষজনের আস্থা বিশ্বাস অটুট থাকতে সহায়তা করবে। রাজধানী ৪৯ থানা এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছরে ঢাকা মহানগরীর ৪৯ থানাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চার শতাধিক পুলিশ সদস্যকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অস, দুর্নীতিবাজ, অপরাধী কার্যক্রমের সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর এই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধপ্রবণতা থামাতেই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৮ এপ্রিল কাফরুলের কচুক্ষেতের নিউওয়েভ ক্লাবে ডাকাতির অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পূর্ব বিভাগের সহকারী কমিশনার রুহুল আমিনসহ ১১ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার, সাসপেন্ডসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্ত করার পর প্রমাণ পেয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিভাগীয় তদন্তসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে ১০২ বার ক্লাব রয়েছে যাতে কোটি টাকার চাঁদাবাজির বাণিজ্য হচ্ছে প্রতিদিনের এই চাঁদাবাজির বাণিজ্যের ঘটনাওপেন সিক্রেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে স্থানীয় এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাও জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ধরনের এলাকা ভিত্তিক ছাত্রলীগ যুবলীগ নামধারী মাস্তানরা এসব ক্লাব বার থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকে। পাশাপাশি বার ক্লাবগুলোতে মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে নিয়োজিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল কচুক্ষেতের নিউওয়েভ ক্লাবে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার রুহুল আমিনসহ ১১ সদস্য মিলিটারি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২৩ এপ্রিল পরীবাগে পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত সাকুরা বারে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা জনি ওরফে বাবা জনিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে বারের কর্মকর্তাকর্মচারীরাই তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। পুলিশ বলছে, সাকুরা বার কর্তৃপক্ষ মাস্তানদের চাঁদা দিতে দিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এরই জের ধরে জনি চাঁদাবাজির সময় প্রতিবাদ করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ক্লাব বারগুলোতে অনেক অপরাধী তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাের পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগ রয়েছে

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকার অনুমোদিত রাজধানীতে ৫২ বার অনুমোদন ছাড়া আরও ৫০ বারসহ মোট ১০২ বার ক্লাব আছে, যার থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজির বাণিজ্য চলছে। এক সময় রাজধানীতে পুলিশের অবৈধ আয়ের বড় ৎস ছিল মাদক স্পট। কিন্তু মাদক স্পটের বিরুদ্ধে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে স্পটগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে গেছে। ওইসব স্পটে স্থানীয় থানা পুলিশের সঙ্গে উঠতি রাজনৈতিক নেতারা চাঁদাবাজি করে। কারণে পুলিশের অবৈধ আয়ের দৃষ্টি এখন বারগুলোর দিকে। একেকটি বার থেকে স্থানীয় থানা পুলিশ মাসে ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি করে। অবস্থাভেদে চাঁদার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এই চাঁদাবাজির বাণিজ্যের ভাগবাটোয়ারা এক শ্রেণীর অস দুর্নীতিবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, রাজনৈতিক দলের ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তির পকেটে চলে যাচ্ছে। যখনই ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিবাদ হচ্ছে, তখনই বিরোধের জের ধরে অপরাধী কার্যক্রম ঘটছে অপরাধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ধরা পড়ছে

ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধী যেই হোক তা বা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও হয় তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কোন এক ব্যক্তির অপরাধের জন্য প্রতিষ্ঠান কোন দায়ভার বহন করবে না

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × two =