লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে মাটি কাটার শ্রমিক নুরুল আমিনকে (৫৫) গ্রাম্য সালিসে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মোঃ তাছেব হোসাইনের করা জনস্বার্থে রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিশ্বদেব চক্রবর্তীর দ্বৈত অবকাশকালীন বেঞ্চ বুধবার (২১ জুন) দুপুরে এ রুল দেয়।
রিটকারী আইনজীবি মোঃ তাছেব হোসাইন বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান,আদালত নির্যাতিত পরিবারটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন। এসময় চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল করিব রিপনকে ৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১১ এগারটায় সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়।
এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসপি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জনস্বার্থে আদালতের নজরে এনে আইনজীবি মোঃ তাছেব হোসাইনের রিট মামলা (৯১৮০/২০১৭) দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়।
এদিকে সংবাদ দেখে তাৎক্ষনিক লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হোমায়রা বেগম একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য তিনি চিঠি দেন।
বুধবার (২১ জুন) দুপুর ৩ টার দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলেন। এসময় দেড় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকাল ১১ টার নির্যাতিত ব্যক্তিকে আমার কার্যালয়ে এসে তার গোপনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আহসানুল কবির রিপন ২য় রমজান গ্রাম্য সালিসে শ্রমিক নুরুল আমিনকে বাড়ি থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করেন। এসময় তার (চেয়ারম্যান) নির্দেশে গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর আলম ওই শ্রমিককে ১০ টি বেত্রঘাত করে।
নির্যাতনের শিকার দিনমজুর নুরুল আমিন জানান, তিনি জরিমানার ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চেয়ারম্যান আহসান কবির রিপনের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে লাঠিপেটা ও নাকে খত দেওয়া থেকে নিষ্কৃতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে লাঠিপেটা করার পাশাপাশি নাকে খত দিতে এবং শহীদ ও তার স্ত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এর দু’দিন পর জরিমানার ১০ হাজার টাকাও পরিশোধ করতে হয় তাকে। সেই বিচারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বুলবুল ইসলাম খান, নির্যাতিত নূরুল আমিনের স্ত্রী-সন্তানসহ শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় এক ব্যক্তির গোপনে ধারণ করা এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের সালিসে নির্যাতনের ভিডিওটি ১৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার পর থেকে নির্যাতিত নূরুল আমিনের পরিবারটি লোকলজ্জায় মানষিকভাবে বির্ধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে তেমন বের হন না। চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের ভয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তারা।
নূরল আমিনের স্ত্রী নাছরিন আক্তার জানান, এ ঘটনার পর তারা ও তাদের সন্তানরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। পরপর দু’বার অভিযোগকারী ও তার স্ত্রীর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও তারা রক্ষা পাননি। লজ্জায় তারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। অনেকে তাদের উপহাস করছে। তাদের ছেলেরা নানাবাড়ি হাসন্দী এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।