শাকিব-অপুর সংসার শুরু পহেলা বৈশাখে

0
2378

একটি চলচ্চিত্রের অন্তরঙ্গ দৃশ্যে শাকিব ও অপু -সংগৃহীত
অবশেষে বরফ গলেছে। ফুটফুটে আবরার খান জয় পেয়েছে ছেলের স্বীকৃতি আর অপু বিশ্বাস পেয়েছেন শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের স্ত্রীর মর্যাদা। এবার একসঙ্গে সংসার করার পালা। কাল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ থেকে নতুন সংসার শুরু করতে যাচ্ছেন এ তারকা দম্পতি। বুধবার শাকিব খান যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাব। এর মধ্যে নতুনভাবে সংসার শুরু করার পরিকল্পনাও করেছি আমরা।’ শুধু তাই নয়, নববর্ষ উপলক্ষে আজ স্ত্রী-সন্তানের জন্য কেনাকাটাও করবেন তিনি। এদিকে শাকিব খানের কাছ থেকে স্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে বেজায় খুশি অপু ইসলাম খানও (অপু বিশ্বাস)। তিনিও জানান, বাংলা বছরের প্রথম দিনটি একসঙ্গেই কাটাবেন তারা।

শাকিব খান বলেন, ‘অপু বৈশাখে শাড়ি পরতে পছন্দ করে। নতুন শাড়ি কিনব তার জন্য। জয়ের জন্য অনেক খেলনা আগেই পাঠিয়েছি। ও এখনও অনেক ছোট। তবুও তার জন্য বৈশাখী পাঞ্জাবি কিনব। রাতেই উপহারগুলো অপুর বাসায় পাঠিয়ে দেব। দিনের প্রথম অংশে অপু আর জয়কে নিয়ে একসঙ্গে সময় কাটাব।’

পহেলা বৈশাখে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নে শাকিব বলেন, ‘জয় অনেক ছোট। ও কিছুটা অসুস্থ। ওকে নিয়ে বাইরে বের হওয়াটা অনেক প্রবলেম। তারপরও অপু যদি বাইরে বের হতে চায় তাহলে অবশ্যই বের হব।’

নববর্ষ উপলক্ষে দু’জন দু’জনকে কোনো উপহার দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অপু বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, ‘নতুন বছর শুরুর আগেই শাকিব আমাকে একজন নারীর জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছে। এতেই আমি অনেক খুশি। সে অনেক ব্যস্ত নায়ক। এ ব্যস্ততার মধ্যেও এবারের নববর্ষ আমরা একসঙ্গে পালন করতে যাচ্ছি, এটাও আমার জন্য বড় উপহার। এছাড়া শাকিবের পক্ষ থেকে আরও উপহার আসবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ আমি তাকে ভালো করেই জানি। আমি নিজেও তার জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। সেটা উপহার দেব তাকে। জয়ের জন্যও কেনাকাটা করেছি। তবে বাবার দেয়া উপহারটাই ছেলেকে নববর্ষে পরাব।’

বৈশাখ ঢাকাতেই পালন করবেন, না দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? অপু বলেন, ‘না আমাদের আবরার এখনও অনেক ছোট। ওকে নিয়ে এই মুহূর্তে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এছাড়া ক’দিন ধরে বেশ অস্বস্তিতে আছে জুনিয়র খান। তাই বাসাতেই থাকার পরিকল্পনা করেছি।’

পহেলা বৈশাখে সংসার শুরু করলেও আপাতত একসঙ্গে থাকা হচ্ছে না এ তারকা দম্পতির। এর কারণ ব্যাখ্যা করে শাকিব জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ও ভারত মিলে তার হাতে চারটি ছবির কাজ রয়েছে। নতুন ছবি ‘রংবাজ’ শুটিং করতে পহেলা বৈশাখেই ঢাকা ছাড়বেন তিনি। এ প্রসঙ্গে শাকিব যুগান্তরকে বলেন, ‘এমনিতেই আগামী দুই বছর আমার হাতে সময় একেবারেই নেই। তাই আলাদাভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকার সময় পাব না। আপাতত অপু তার মায়ের সঙ্গেই থাকবে। তার যখন ইচ্ছে হয় আমার বাসায় এসে থাকতে পারবে। আমি যখন ঢাকায় থাকব তখন অবশ্যই স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গেই সময় কাটাব। এছাড়া জয়কে আলাদাভাবে টেক কেয়ারের প্রয়োজন। নিজের মতো করে থাকতে পারলে সন্তানের যতœ নিতে পারবে অপু। আর আমিও নিশ্চিন্তে থাকতে পারব।’ এ প্রসঙ্গে অপু যুগান্তরকে বলেন, ‘শাকিব আমাকে যেখানে রাখতে চায় সেখানেই থাকব। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

রংবাজের শুটিংয়ের জন্য বৈশাখের প্রথম দিন বিকালে পাবনায় যাবেন শাকিব খান। এ ছবিটি নিয়েই অপু ও চিত্রনায়িকা বুবলীর মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বুবলীকে নিয়েই রংবাজ ছবির শুটিং শুরু হচ্ছে। পহেলা বৈশাখেই এ ছবিটির শুটিং শুরু করাতে অপুর কোনো আপত্তি আছে কিনা- এমন প্রশ্নে শাকিব খান বলেন, ‘এটা প্রযোজকের ব্যাপার। ছবির সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। কাল থেকে শুটিং শুরু। এ মুহূর্তে এসে নায়িকা পরিবর্তন করা মানে প্রযোজকের ব্যাপক লোকসান। তাছাড়া এখন অপুরও কোনো আপত্তি নেই। তাছাড়া আমি আগেই বলেছি, বুবলীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি অপু এখন বুঝতে পেরেছে।’

একই প্রসঙ্গে অপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ দিনের পুরো অংশ আমাদের সঙ্গে কাটাতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু শাকিবের হাতে সময় নেই। এটা আমি জানি। এ ছবিটির কাজ শেষ করে দ্রুত কলকাতায় চলে যেতে হবে তাকে।’ কিন্তু বুবলীকে নিয়ে আপনার আপত্তি ছিল, সেটা কী এখন নেই? উত্তরে অপু বলেন, ‘যেটা ঘটে গেছে সেটা নিয়ে এখন আর কথা বলতে চাই না। আমি সামাজিক স্বীকৃতি চেয়েছি। সেটা পেয়েছি। এখন ভালোভাবে সংসার করতে চাই। এর বাইরে কিছু ভাবছি না।’

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর শাকিব খান গুলশান নিকেতনে অপুর বাসায় যান। সে সময় সঙ্গে শাকিবের মাও ছিল। ওই সময় শাকিব তার সন্তান আবরার খান জয়কে কোলে নিয়ে আদর করেন। এরপর প্রায় ৩০ মিনিট অপুর সঙ্গে একান্ত আলাপ হয় শাকিবের। মূলত সে আলাপের মধ্য দিয়েই দু’জনার মধ্যে বরফ গলতে শুরু করে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ওই আলাপের মাধ্যমে অপু-শাকিব নিজেদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে নেন।

১০ এপ্রিল বেসরকারি এক চ্যানেলের লাইভে সন্তান নিয়ে হাজির হওয়ার পরই জনমত চলে যায় শিশুপুত্র আবরার খানের দিকে। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে লুকোচুরি আচরণে ভক্তরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাকিব খানের প্রতি। ওইদিন ছেলেকে স্বীকার করলেও অপুকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেন শাকিব। কিন্তু একদিন পর অপু বিশ্বাস ও সন্তানকে মেনে নিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘আমি কখনও বলিনি, অপুকে ত্যাগ করেছি। তাহলে তার কাছে ফেরার প্রশ্ন আসে কেন? অপুকে মেনে না নেয়ার প্রশ্নই আসে না।’

ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী শাকিব-অপুর বিয়ে হয়েছে। কাবিনে অপু বিশ্বাসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় অপু ইসলাম খান। তবে ঠিক কত টাকায় কাবিন হয়েছিল সে ব্যাপারে অপু কিছু বলতে রাজি হননি। বিষয়টি তিনি শাকিব খানের প্রতিই ছেড়ে দেন। শাকিব খানও এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, ‘আমি অপুকে কখনও ঠকাইনি। ভবিষ্যতেও ঠকাব না।’

নানা নাটকের পর শাকিব খানের স্ত্রী-সন্তানকে মেনে নেয়ার পেছনে দু’জন সাংবাদিক ও একজন প্রযোজকের ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা চেয়েছেন অপু তার সন্তানকে নিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি পাক। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সাংবাদিকের একজন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ‘অপু ও তার সন্তানের সামাজিক স্বীকৃতির বিষয়টি আমাদের খুব ভাবিয়েছে। আমরা দেখেছি অপু যে প্রকাশ্যে এসে সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছেন, এতে তিনি কোনো অন্যায় করেননি। একজন মেয়ে তার সন্তান ও নিজের সামাজিক স্বীকৃতি চাইতেই পারে। সেলিব্রেটি হওয়ায় ঘটনাটি প্রকাশ না করা অপুর জন্য বেশ বিব্রতকর ছিল। সামাজিকভাবে হেয় হতে হচ্ছিল। তাই প্রথম দিকে শাকিব উত্তেজিত থাকলেও পরে তাকে অন্তত সন্তানের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি এ সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেয়া হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, শাকিবকে অপুর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করছিল তারই কিছু কাছের মানুষ। শাকিব সেটা বুঝতে পেরে দ্রুতই অপু ও সন্তানকে মেনে নেন।’

শাকিব-অপুর প্রেমকাহিনী ছিল সিনেমার মতোই। ২০০৫ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে অভিনয় করার সময় দু’জনার মধ্যে পরিচয় হয়। এটি ছিল নায়িকা হিসেবে অপুর প্রথম ছবি। এ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে অপুর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন শাকিব। ওই ছবির ইউনিটের এক কর্মী যুগান্তরকে বলেন, শুটিং সেটে অপুর একটি মুচকি হাসির বেশ প্রশংসা করেন শাকিব। ওই প্রশংসা শুনে বেশ লজ্জা পান অপু। তারপর শুটিংয়ের প্রয়োজনে দু’জন আরও কাছে আসেন। পরে সেটা বাস্তব জীবনের প্রেমে রূপ নেয়। সেই থেকে শুরু। এরপর গোপনে দু’জন অনেক সময় কাটিয়েছেন। ২০০৬ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’ নামে নতুন একটি ছবিতে সাইন করেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। এর শুটিং শেষ হতে প্রায় তিন বছর লাগে। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল গাজীপুরের হোতাপাড়ায় ছবির গানের শুটিং চলছিল। গানের শিরোনাম ছিল, ‘কাছে আসা হল, ভালোবাসা হল, তারপর কী হবে বলো না/ আমি বউ হবো, এই তো মনের বাসনা।’ দুপুরের পর শাকিব-অপু কাউকে কিছু না বলে শুটিং স্পট ছেড়ে চলে যান। ওই ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক যুগান্তরকে জানান, ‘সেদিন বিকাল তিনটার দিকে আমরা যখন কস্টিউম নিয়ে শাকিব-অপুর খোঁজ করি, তখন তাদের পাওয়া যায়নি। শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। তাদের দু’জনকে ফোন দেয়া হলে অপু তখন ফোন ধরেননি। শাকিব খান ফোন রিসিভ করে জরুরি কাজে বাইরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। টেনশন করতে নিষেধ করে তখন শাকিব বলেন, আমরা সময়মতো সেটে হাজির হয়ে যাব। পরে সন্ধ্যার দিকে ইউনিটের একজন আমাকে বলেন, শাকিব-অপু কিছুক্ষণ আগে বিয়ে করেছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক আমি একটি জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিককে ফোন করে জানাই। কিন্তু পরে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।’

২০০৮ সালের পর শাকিব-অপুর সম্পর্ক নিয়ে মিডিয়ায়ও বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। বিয়ের খবরটি তখন চাউর হলেও দু’জনে অস্বীকার করায় সেটা চাপা পড়ে। তবে তাদের মধ্যে যে একটা গোপন সম্পর্ক রয়েছে সেটা অনেকেই আঁচ করতে পেরেছেন। তবে দু’জনে জুটি বেঁধে নিয়মিত ছবিতে অভিনয় করে গেছেন। এরপর ২০১০ সালের দিকে শাকিব-অপুর সম্পর্কে কিছুটা ফাটল ধরে। হঠাৎ করেই অপু সে সময় নির্মাণাধীন ছবির শুটিং বাদ দিয়ে কিছুদিনের জন্য আড়াল হয়ে যান। পরে নিজেই আড়াল ভেঙে বের হয়ে আসেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৩ সালে। আবারও অপু লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। তখনও এর জন্য শাকিব দায়ী বলে অনেকে বলেছেন। কিন্তু দু’জনের কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। প্রায় দুই বছরের মতো আড়ালে থেকে আবারও অপু প্রকাশ্যে আসেন। নতুন ছবিতে শুটিং করেন। তবে কেন আবারও আড়ালে ছিলেন সে ব্যাপারে মুখ খোলেননি। যদিও অনেকে এজন্য শাকিবকেই দায়ী করেছেন। কিন্তু বরাবরের মতো শাকিবও অপুর আড়ালের রহস্য এড়িয়ে গেছেন। এরপর সর্বশেষ গত বছরের শুরুর দিকে তৃতীয়বারের মতো অপু অন্তরালে চলে যান। এবার ফিরে এসে একেবারে বোমা ফাটালেন। জানালেন গত আট বছরের লুকোচুরির রহস্য।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + twelve =