সংরক্ষণাগার ও পাইকারি বাজার না থাকায় নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা নওগাঁয় প্রতিবছর বাড়ছে ১ হাজার হেক্টরেরও বেশি আম বাগান

0
1294

নওগাঁর ঠাঠা হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র অঞ্চলের পতিত জমিতে প্রতিবছর এক হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। মাটির বৈশিষ্ট্যগত (এঁটেল মাটি) কারণে নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আমের ভরা মৌসুমে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও পাইকারি বাজার গড়ে না তোলায় আম চাষিরা নায্য মূল্য পান না। জেলায় আগামিতে আরো অধিক আম উৎপাদন করার লক্ষে আম গবেষণাকেন্দ্র, পাইকারি বাজার ও সংরক্ষাণাগার গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, বদলগাছী, পত্নীতলা, মান্দা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর ঠাঠা বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে হওয়ায় বছরের বেশি সময় ধরে জমি পতিত থাকে। বর্ষ মৌসুমে ঠাঠা এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে শুধু আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। ধানের চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে ঠাঠা বরেন্দ্রভূমির এসব অঞ্চলে দিনদিন শতশত বিঘা জমিতে উন্নত (হাইব্রিড) জাতের আম বাগান গড়ে উঠছে। গত পাঁচ/ছয় বছর আগে জেলা মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হতো। এ বছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় গত দু’বছর থেকে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

পোরশা উপজেলার নীতপুর বাজার এলাকার বাঙ্গালপাড়ার আমির উদ্দিন জানান, আমের বাগানে সরিষা, ডাল, গম চাষ করায় কৃষকরা এক বিঘা জমিতে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন। এ জন্যেই এলাকার কৃষকরা আম বাগানে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছে।

উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের নুরুজ্জামান জানান, আগে জেলায় ল্যাংরা, ফজলি, খিরশা জাতের আম চাষ করতেন এলাকাবাসি। তবে বর্তমানে উন্নত জাতের আম্রপালি ও বারি-৪ আম চাষ করা হচ্ছে। সাধারণ জাতের চেয়ে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম দ্বিগুণ উৎপাদন ও দাম বেশি পাওয়ায় উন্নত জাতের এ আম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

উপজেলার জালুয়া গ্রামের আম চাষি ও বিদ্যালয় শিক্ষক রইচ উদ্দিন জানান, জেলার মধ্যে বিশেষ করে পোরশার অঞ্চলের মাটি এঁটেল হওয়ায় সুস্বাদু হওয়ায় পোরশার আম সারাদেশে এর চাহিদাও বেশি। পোরশার আম রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই আম বাজারজাত করা হয়ে থাকে এমনটি জানালেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আম চাষি নয়ন বাবু জানান, আমের ভরা মৌসুমে আম বিক্রি করার জন্যে কোনো পাইকারি বাজার নেই। এ কারণে আম বাগানের মালিক ও চাষিরা আমের নায্য দাম পান না। এ সুযোগে ফরিয়া ব্যবসায়ীরা লাভবান হন।

সাপাহার উপজেলার বাজার এলাকার সাহাপাড়ার প্রদীপ সাহা জানান, জেলায় আম গবেষণা কেন্দ্র থাকা এবং আম সংরক্ষণাগার না থাকায় আম চাষিরা নায্য মূল্য পান না। আম গবেষণা কেন্দ্র থাকা এবং আম সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হলে আম চাষিরা বেশি লাভবান হতেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, জেলায় প্রতি বছর শতশত টন আম উৎপাদন হলেও পাইকারি বাজার না থাকায় দ্রুত আম কম মূল্যে বিক্রি করে দেন আম চাষিরা। গত পাঁচ/ছয় বছর আগে জেলা মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হতো। আম চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে সব সময় পরামর্শ দেয়ায় চলতি বছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার হেক্টররেরও বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় গত দু’বছর থেকে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, আগামী জুলাই মাসে ঢাকায় জেলা প্রশাসক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁয় আমের জন্যে হিমাগার ও বাজার স্থাপনের জন্যে কনফারেন্স কৃষি মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা হবে। জেলা প্রশাসক আশা করেন নওগাঁয় একটি হিমাগার ও একটি বাজার স্থাপনের অনুমতি পাবেন।

দিনদিন জেলায় শতশত বিঘা আম বাগান গড়ে উঠায় আগামিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়) জেলাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্যে আম গবেষণা কেন্দ্র, আম সংরক্ষণাগার ও পাইকারি বাজার স্থাপান দাবি জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − 1 =