সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর থানাগুলোতে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল পালিত

0
1500

রিপোর্টার নানা : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশীর প্রতিবাদে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি ঘোষিত জনসভার অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী জেলা সদর, মহানগরসমূহ এবং ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় প্রতিবাদ সভার ঘোষনা দেয় বিএনপি। কিন্তু আজকের প্রতিবাদ সভা কর্মসূচিতেও ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্যাপক হামলা, বাধা প্রদান ও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৬টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহম্মদ রবিন, মতিঝিল থানা বিএনপি নেতা স্বপন, শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা শওকত আলী এবং মিন্টু, শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা ইব্রাহিম, বাবু, রবিউল, লাকী, কামরাঙ্গীরচর থানা শ্রমিক দল নেতা জসিমউদ্দিন, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর (পূর্ব) সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মানিক, ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক লিটন বিশ্বাস ও আলমগীর হোসেন রাজু, ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মিঠু ও আরিফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলার খোকসা ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ইয়াজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, সাবেক ছাত্রদল নেতা মনোয়ার হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি শামসুল হুদার বাড়ীর সামনে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতির সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং নেতাকর্মীরা শামসুল হুদার বাড়ীর ভেতর প্রবেশ করলে পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রেখে নেতাকর্মীদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন এবং জেলা যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের বাসায় পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী চালিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলাধীন করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। এধরণের ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে স্থানীয় প্রশাসন থেকে বিএনপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়ার সরকারী চক্রান্তেরই ধারাবাহিকতা। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে সাইফুল ইসলাম সুমন এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক তাকে স্বপদে বহালের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সরকার নিজেদের পতন ঠেকাতে পুলিশ ও দলীয় গুন্ডাদের দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও হামলা চালাচ্ছে, ন্যাক্কারজনক ও পৈশাচিক কায়দায় বাধা দিয়ে কর্মসূচি পন্ড করছে। সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে বলেই তারা বিএনপি’র কোন সভা-সমাবেশের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে।
রিজভী আহমেদ বলেন, নিজেদের পতন টের পেয়ে আওয়ামী সরকার সৃষ্ট দু:শাসন হিং¯্ররুপী অতি দানবে রুপধারণ করেছে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিরোধী দলের ওপর অব্যাহত ক্র্যাকডাউন চালিয়েই যাচ্ছে। জনমত, দেশ-বিদেশের নাগরিক সমাজের কোন প্রতিক্রিয়াকে গ্রাহ্য না করে সরকারের বিরোধী দলের প্রতি আচরণ যুক্তি ও বিবেকবর্জিত এবং নৈরাজ্যপ্রসু। পুরনো অন্ধ, বন্ধ্যা, বাকশালের লাশ পুণরুজ্জীবিত করার অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই বিরোধীদলশুণ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বর্তমান গণবিরোধী সরকার। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশকে সর্বনাশের ধাক্কায় খাদের কিনারে নিয়ে এসেছেন। সর্বশক্তি নিয়োগ করেই বিরোধীদলহীন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ বরাবরই ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই জনগণের অমোঘ শক্তির বিষয়ে ভুলে যায়। এই কারনেই গণবিরোধী আচরণ করতে দ্বিধা করে না। বর্তমান আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রকে যে অপহরণ করেছে এই গভীর সত্যকে লুকোনোর জন্যই মানুষকে আওয়াজ করতে বাধা সৃষ্টি করছে। সেজন্যই বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রতিবাদী শ্লোগানকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হয়। শেখ হাসিনা নানা ধরণের অভিনব রণকৌশল আবিস্কার করেছেন শুধুমাত্র তাঁর একদলীয় নিষ্ঠুর শাসনকে প্রসারিত করার জন্য। সেইক্ষেত্রে বিবেকহীন, অমানবিক হাড়শীতল অপকৌশল গ্রহণ করতে কোনরকম বিচলিতবোধ করেন না তিনি। যেমন-সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হীরু, চৌধুরী আলম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড আর অপহরণের অব্যাহত নির্দয়-নিষ্ঠুরতা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে গাড়ীতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে এর দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো নোংরা খেলা জনগণ প্রত্যক্ষ করছে। অপকর্ম, অনাচার কখনো চাপা থাকে না, মিথ্যার বেস্যাতি করে সেটিকে আড়াল করা যায় না। শাহবাগে ২০১৪ সালে একজন আওয়ামী লীগ নেতা তার নিজ পরিবহনে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে এগারজনকে হত্যার ঘটনার সত্যতা এখন অন্য আওয়ামী নেতাদের মুখ থেকেই বেরিয়ে আসছে। আসল সত্যকে কখনোই আড়াল করে রাখা যায়না। অথচ বিএনপি নেতাদের ওপর আওয়ামী নেতাদের সৃষ্ট জ্বালাও পোড়াও ও সন্ত্রাসের দায় চাপিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং গ্রেফতার করে কারাগারে ভরে রাখা হয়। এই চক্রান্তমূলক মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে বিএনপি’র অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জা করেই বিরোধী দলের ওপর হামলা-মামলা-কারা নির্যাতন এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার করা হয়। এমনিভাবে ২০১৪ ও ১৫ সালের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে গণবিচ্ছিন্ন  করার জন্য নানা জঘন্য প্রাণবিনাশী কুটকৌশল চালিয়ে নিজেদের ক্যাডারদের দিয়ে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। যার অসংখ্য প্রমান বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিহঙ্গ বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর ঘটনায় থলের বেড়াল বের হয়ে পড়েছে। একদলীয় কুশাসনের ফলাফল হচ্ছে সমাজজীবনে দুর্বৃত্তদের অসহনীয় দাপট, লুটপাট, হানাহানী, রক্তারক্তি চলছেই, আর চলছে হিংসাকলহ চর্চা। বিএনপি’র কর্মসূচিতে আক্রমণ নিবিড় নৈশব্দ সৃষ্টি করা, যাতে শেখ হাসিনার শাসন নিরপদ্রব থাকে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে আজ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen − twelve =