স্বরাষ্ট মন্ত্রির দৃষ্টি আকর্ষন রাজাপুরের হত দরিদ্র দুলু বেগম হত্যা মামলার সঠিক বিচার তার পরিবার পাবে কি? নিরাপত্তাহীনতায় অসহায় পরিবার

0
1909

অপরাধ বিচিত্রাঃ সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার চাওয়াটা কি অপরাধ। নিজের ভিটায় বসবাস করাটাও কি অন্যায়, আজকের অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানি মূলক প্রতিবেদনে এক হৃদয় বিধারক নির্মম লোমহর্ষক হত্যা কান্ডের প্রতিবেদন তোলে ধরব। ঘটনাটি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার কানুদাশ কাঠি গ্রামের দুলু বেগম নামে এক অসহায় নারীর। সহায় সম্বল বলতে মায়ের নানা বাড়িতে ওয়ারিশ সূত্রে হওয়া মাত্র পাঁচ কাঠা জমিতে জরার্জিন বসতঘর। হতদরদ্রি দুলু বেগমের মা বাবা কেউ পৃথিবিতে বেচেঁ নেই। আতীœয় বলতে তিন বোন। সবার বড় দুলু বেগম বাকি দুই বোন কে ছোট রেখে মা বাবা মারা যায়। দুলু বেগম গ্রামের বাড়িতে ভিক্ষা করে, কখনো ঝি এর কাজ করে তিন বোন কে বুকে আগলে রেখে মানুষ করে, এর পরে দুলু বেগম এর সাথে একই গ্রামের আবদুর রহিমের বিয়ে হয়। কিন্তু সুখ বেশিদিন কপালে সইল না, বোনদেরও বিয়ে হয়ে গেল। দুলু তার মা বাবার ভিঠা বাড়ি থেকে আর কোথাও গেল না। বুকে শেষ সম্বল খড়কুঠো দিয়ে তৈরি পাচঁকাঠা জমির বসত ঘরে পরে রইল। কিন্তু দুলু বেগম এর শেষ সম্বল জমি টুকো অনেক এর কাছে কাল হয়ে দাড়ালো। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে দুলু বেগম কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলতে এক এর পর এক ওয়ারিশ সম্পত্তির ভোগদখল বিরোধ কে কেন্দ্র করে শত্রুতা করতে লাগলো। শত্রুদের চোখের বিষ হয়ে দাড়ালো দুলু বেগম, শেষ পর্যন্ত গত ২/১১/২০১৬ ইং তারিখ তুচ্ছ ঘটনা ডোবা থেকে চুলার মাটি তুলাকে কেন্দ্র করে  দুলু বেগম কে নৃশংস ভাবে দাড়ালো দা দিয়ে এক এর পর এক ৩০ টি উপুর্যপুরি কোপ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেললো দুলু বেগম কে। এর পরেও ঘটনার এখানে শেষ নয়। মানুষ নামের এই সকল নর পশুরা দরজার লাট দিয়ে মাথায় মারাত্বক আগাত করলে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরলো দুলু বেগম। পৃথিবীতে মানুষ এতটা নির্দয় হতে পারে? দুলু বেগম এর মৃত্যুতে সেদিন কানুদাস কাটি গ্রামের গাছের পাতাও শোকে ঝরে পরে ছিল। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে দুলু বেগম জবানবন্দি দিয়ে গিয়েছে কারা কারা তাকে হত্যা করেছে যা মোবাইলে রেকডিং রয়েছে। দুলু বেগমের মেজ বোন নীলুফা বেগমের সাথে মৃত্যুর আগ মুহুর্তে মোবাইলে কথা হয়। এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে রাজাপুর থানায় মামলা নং-২, ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা করা হয়। ঘটনার পরে রাজাপুর এলাকায় দুলু হত্যার ন্যায্য বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী ও আতœীয়রা মানব বন্ধন করেন। মামলার বাদী লাইজু বেগমের সাথে সরেজমিনে তদন্ত করে আমাদের এই অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন। দুলু বেগমের বোন নীলুফা আক্তার রিনা জানান আমার বোনের জন্য আমরা কিছুই করতে পারলাম না। নরপিশাচরা আমার বোনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিল। আমি আমার বোন হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
ঘটনার বিবরণঃ
গত ০২/১১/১৬ইং-২নং আসামী লাকী বেগম ২নং আসামী জামাল হোসেন ও ৫নং আসামী চেয়ার বানু তাহাদের বসত ঘরে প্রবেশ করে, আসামীরা বাংলা দা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার বোনকে খুন করার উদ্দ্যেশ্যে মাথায় লক্ষ্য করিয়া এলো পাথারি ৩০টি কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করে। এবং আসামী চেয়ার বানু  তাহার হাতে থাকা বটি দিয়ে দুলু বেগমের বাম হাতে ৩টি কোপ মেরে গুরুতর জখম করে। তখন দুলু বেগম অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে গেলে আবারও আসামী জামাল হোসেন তাহার হাতে থাকা দরজার লাট দিয়ে দুলু বেগমের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য এলোপাথারি ভাবে পিটিয়ে তাহার ঘরের দক্ষিন পাশে থাকা খালে নামিয়ে খালের পানিতে চুবাইয়া মারার চেষ্টা করিলে আশে পাশের লোকজন ও সাক্ষীরা এগিয়ে আসলে , দুলু বেগমকে খাল থেকে উঠিয়ে বাড়ীর পুর্ব পাশে রাস্তার উপরে ফেলে রাখে। তখন ৩নং আসামী সাহিদা ৪নং আসামী সাহেদ ৬নং আসামী ফাহিম বেগম ও ৭নং আসামী কালাম ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে” ওকে এখনো বাচাইয়া রেখেছ ? কেন শেষ করো নাই,” এর পরে ঘাতকরা নির্মম ভাবে প্রহার করিয়া দুলুর মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রায় ৪ ঘন্টা ৩০ মিনিট মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন। পরে  দুলু মৃত্যুর আগ মুহুর্তে মুমূর্ষ অবস্থায় জবানবন্দি দিয়ে গিয়েছেন কে কে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে, যা একজনের মোবাইলে সেট  এ সে মুহুর্তে সংরক্ষিত হয়।
মামলার বাদী লাইজু
বেগমের বক্তব্যঃ
বোনের মৃত্যুর পরে আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। মামলার ৭আসামীর মধ্যে ৫জন জামিনে রয়েছে মামলার ২নং আসামী জামাল খা আমাকে হুমকি দিয়ে বলে তুই যদি মামলা তুলে না নিস, তোর পরিনতিও তোর বোন দুলু বেগমের মত হবে। নির্মমভাবে তোকেও খুন করে ফেলব। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য দুই মাস আগেও আমাকে হুমকি দেয়। পরে আামি বিজ্ঞ আদালতে একটি জিডি করি। বোনের মৃত্যুর কাহীনি বর্ণনা করতে গিয়ে লইজু বেগম হাউমাউ করে কেঁদে বলে জনোয়ারদের নির্মম আঘাতে আমার বোন মৃত্যুর মুখোমুকি থেকেও বলেছিল আমার জানটা ভিক্ষা দে, আমি দূরে কোথাও গিয়ে ভিক্ষা করে খামু, জামাল তোমার সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। তারপরও নরপশুদের হাত থেকে আমার বোনটি রক্ষা পেল না। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন আছেন। মামলার চার্জসিট প্রদান করা হয়েছে। মামলার এজহারে ৭ জনকে আসামী করা হলেও তদন্ত কর্মকর্তা অদৃশ্য কারনে মামলা থেকে ৪ জন কে অব্যহতি দিয়েছে। মামলার আসামীরা হল ১) মোছা: লাকি বেগম (৩৫), পিতা-মৃত নয়ন তালুকদার, ২)  মোঃ জামাল খা (৪৫), পিতা-আমজেদ আলী খা, ৩) মোছা: সাহিদা বেগম (২৭), ৪) মোঃ সাহেব আলী উভয় পিতা-মৃত নয়ন তালুকদার, ৫) মোছা: চেয়ার বানু (৫০), ৬) মোছা: ফাহিমা বেগম (২২), ৭) মোঃ কালাম (৩৫), গ্রাম-কানুদাশকাটি, থান-রাজাপুর, জেলা-ঝালকাটি। আমার বোনকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্যঃ
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই চান মিয়া জানান, প্রকৃতপক্ষে দুলু বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাকী বেগম ও তার স্বামী জামাল খা তার মেয়ে জঘন্যভাবে কুপিয়ে দুলু বেগমকে হত্যা করে। দুলু বেগমের জবানবন্দি আমারা বিজ্ঞ আদালতে পেশ করেছি। সে রেকডিং এ দুলু বেগম তিনজন এর নাম উল্লেখ করেছে যারা তাকে হত্যা করেছে। চার্জসিটে আমি উল্লেখ করেছি দুলু বেগম কে ১৭টি কোপ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছে। আমি মনে করি এই মামলায় হত্যাকরীদের ফাঁসি হওয়া উচিত।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − 1 =