২৬৭ হজ্বযাত্রীকে প্রতারণার খলনায়ক সালমান!

0
827

অপরাধ বিচিত্রা ঈগল টিম ঃ
পবিত্র হজ্জ পালনের উদেশ্যে গমনকৃত ২৬২ জন হজ্জযাত্রীদের নিকট থেকে অন্তত ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে অনিশ্চতার মধ্যে ফেলে দেয় গুলশান-এ-মুহাম্মদীয়া হজ্জ এজেন্সীর পার্টনার আব্দুল আহাদ সালমান। হাজীদের সাথে সালমানের প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে হজ্ব মিশনের প্রধান বলেন এব্যাপারে তার কিছুই করার নেই। প্রতারিত হওয়ার পর ২৬২ জন হজ্জযাত্রী তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ৪৩ দিন মানবেতর জীবন যাপনের মাধ্যমে সৌদিআরব অবস্থান করে হজ্জ পালন শেষে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হাজীরা সালমানের প্রতারণার শিকার হয়ে কিভাবে হজ্জ পালন শেষে দেশে ফিরে এলেন সেই কষ্ঠের কথা সাংবাদিদের নিকট তুলে ধরেন। সেই সাথে হাজীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রতারক সালমানের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি সহ তাদের আর্থিক ক্ষতিপুরন আদায়ের দাবী করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলশান-এ-মোহাম্মদীয়া হজ্ব এজেন্সী, লাইসেন্স নং-৭৯৮, মালিক মুহাম্মদ হোসাইনের পার্টনার আব্দুল আহাদ সালমানের নিকট ২৬৭ জন হজ্বযাত্রীকে হজ্বে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং সহ যাবতীয় কাজের জন্য আবেদন করে। সালমান হাজীদের হজ্ব পালনের সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষে প্রতি হাজীদের নিকট থেকে ৩/৪ লাখ টাকা করে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ২৬৭ জন হাজীর মধ্যে ২৬২ জনকে ৩দিনের খাবার ও ৮ দিনের থাকার ব্যবস্থা করে হজ্জ পালনের উদেশ্যে সৌদি আরব পাঠান। বাকী ৫ জন হাজীর নিকট থেকে টাকা নিলেও তাদেরকে হজ্ব পালনে সৌদি আরব পাঠাতে ব্যর্থ হন। আর ২৬২ জন হাজী সৌদি গিয়ে জানতে পারেন সালমানের মহা প্রতারণা কথা। হাজীরা জানতে পারেন হজ্ব পালনের জন্য যে মিনা কার্ড প্রয়োজন তা তারা পাবেন না। কারন সালমান ২৬২ জন হাজীর মিনা কার্ড বাবদ ১লাখ ৩২ হাজার রিয়াল যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছেন পরিশোধ করেন নাই। ঐ টাকা পরিশোধ না করলে হাজীদের মিনা কার্ড দেওয়া হবে না। আর মিনা কার্ড ছাড়া কোন হাজী হজ্বে অংশ গ্রহন করতে পারবে না। অর্থাৎ হজ্ব করা হবে না। এঘটনায় হাজীদের মাঝে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। বিষয়টি হাজীরা মক্কায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ্ব কাউন্সিলের অফিসে হজ্ব মিশনের প্রধান জহিরুর ইসলামের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু হজ্ব মিশনের প্রধান হাজীদের কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। ফলে হাজীরা বিষয়টি আবার আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ এর নিকট জানালে তিনিও তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। হাজীরা উপায়ান্ত না পেয়ে বিষয়টি উপস্থিত হাজী হজ্ব মিশনের প্রধান জহিরুর ইসলামের নিকট পুনরায় লিখিত অভিযোগ করলে বলেন সালমানের প্রতারণার ব্যাপারে তার কিছুই করার নেই। তখন হাজীরা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়ে। তাদের হজ্ব করা হবেনা আর দেশে ফেরা কষ্ঠ সাধ্য হয়ে পড়বে। পরে হাজী এসপি মাহাবুব হোসেনের আন্তরিক সহযোগিতায় হাজীরা কেউ কেউ নিজেদের সাথে নেয়া রিয়াল থেকে, আবার কেউ কেউ ধার দেনা করে আবার কেউ কেউ বাড়ী থেকে টাকা নিয়ে ১লাখ ৩২ হাজার রিয়াল প্রদান করে মিনা কার্ড গ্রহন করে হজ্ব পালন করেন। তার পরেও সমস্যা থেকে যায়। কারন সালমান হাজীদের তিন দিনের খাবারের দিয়েছিল এবং মক্কা থেকে ৪ কিলোমিটার দুরে থাকার জন্য আবাসিক হোটেল ভারা করে দিয়েছিল। বিষয়টি হাজীরা পরে জানতে পারে। কারন তিন দিন পরে খাবারের ম্যানেজমেন্ট হাজীদের খাবার দেয়া বন্ধ করে দেয়। ৮ দিন পরে হোটেল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। হজ্বের সিস্টেম অনুযায়ী হাজীরা দ্রুত দেশেও ফিরতে পারেনা। ফলে হাজীরা ৪২ দিনের মানবেতর জীবন শেষে গত ৩/১০/১৭ তারিখ শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
কান্না জড়িত কন্ঠে গোপালগঞ্জের হাজী মোঃ আইয়ুব আলী বলেন, আমি হজ্ব পালনের জন্য সালমানকে ৩লাখ ৭৫হাজার টাকা নগদ দিয়ে ছিলাম, শর্তছিল হজ্বে যাওয়ার পর কোন অসুবিধা হবেনা। অসুবিধা হলে তিনি দেখবেন। মক্কার খুব কাছে ভালো মানের থাকার হোটেল দিবেন, ভালো মানের খাবার দিবেন। কিন্তু সে আমাদের সৌদি আরব পাঠানোর ভিসার খরচ ছাড়া আর একটা শর্তও পালন করেনি। সে আমাদের আগে পাঠিয়ে দিয়ে আর তার পরে আমাদের নিকট আসার কথাছিল। কিন্তু সে আসেনি। তার কোন প্রতিনিধিও পাঠায়নি। আমরা ২৬২ জন হাজী থাকা খাওয়ায় অনেক কষ্ঠ করেছি।
হাজী বায়োজিদ বলেন, আমি সালমানকে ৩লাখ ২০হাজার টাকা দিয়ে হজ্বে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। ৪৩ দিনের হজ্ব কাফেলায় থাকা খাওয়ায় অনেক কষ্ঠ করেছি। মিনা কার্ডের জন্য দেনা করে ৫শ রিয়াল জমা না দিতে পারলে হজ্ব করতে পারতাম না। হজ্ব মিশনের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুবিধা পাইনি। ধর্ম মন্ত্রী বলেছে তার কোন কিছু করার নেই। ৪৩ দিনে আরো ৫০ হাজার টাকার উপরে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। ২৬২ জন হজ্বযাত্রীর সাথে সালমানের এধরনের প্রতারণা সৌদি সরকারের নিকট বাংলাদেশের অনেক বদনাম হয়েছে। প্রতিবছরই আমাদের দেশের হজ্ব এজেন্সী গুলো হাজীদের সাথে প্রতারণা করে। যা বিশ্বের অন্য কোন দেশ এমন প্রতারণা করে না। সালমানদের কঠোর শাস্তি না হলে আমাদের মতো হাজীরা বার বার প্রতারিত হবে। সবচেয়ে কষ্ঠের বিষয় হলো আমাদের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের সেবায় নিয়োজিত কর্তা ব্যক্তিরা আমাদের সমস্যার কথা শুনে কোন সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
বায়োজিদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিমানবন্দরে অন্তত অর্ধশতাধিক হজ্বযাত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রতারক সালমানের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। সালমানের মতো আর যেন কেউ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না পারে।
কে এই সালমান ?
সালমান ফেনী সদর উপজেলার ধুমসাদ্দা গ্রামের মাওলানা আব্দুল আওয়ালের ছেলে। ৯ ভাই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। সে মুলত কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বেড়ে উঠেছে। সে তার দাদা হযরত মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের প্রতিষ্ঠিত ধুমসাদ্দা রশিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় কিতাবী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। ঢাকায় এসে মুফতি আবুল কাশেমের সান্নিধ্য লাভ করলেও জড়িয়ে পড়েন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী গুলশানে মুহাম্মদীয়া হজ্ব এজেন্সীর কর্নধার মুহাম্মদ হুসাইনের সাথে। হজ্ব ব্যবসার আড়ালে শুরু করেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। পুরানা পল্টনের ২/সি শাওন টাওয়ারের ১৪ তলায় এস খিদমাহ ওভারসিজ সার্ভিস নামে অফিস চালু করেন। গত ১০ বছরে ৫জন, ১০জন করে কিছু লোককে প্রতিবছরই হজ্বে পাঠিয়ে ভাল ইনকামের সাথে কিছুটা সুনাম অর্জন করেন। যার সুবাদে এবছর পেয়ে যান ২৬৭ জন হজ্বযাত্রী। আর এ সুযোগটি তারা হাত ছাড়া করেননি। সালমান ও তার মহাগুরু মুহাম্মদ হুসাইন ২৬৭ জন হজ্বযাত্রীর নিকট সরকারী নির্ধারিত ফি বাদে অন্তত ৬ কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন। হজ্ব এজেন্সী গুলোর সিন্ডিকেটের কারনে সালমান গংরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকার হজ্ব প্যাকেজের আড়ালে হজ্ব যাত্রীদের নিকট থেকে নিয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। তার পরেও তাদেরকে দেয়নি কোন সুযোগ সুবিধা। বরং তাদের টাকা আত্মসাৎ করার কারনে হাজীদের হজ্ব করাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ছিল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 4 =