২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়ত দিবস

0
1474

আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে আগামী ২৮ এপ্রিল দেশে ৫ম বারের মত জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-
‘‘বিরোধ হলে শুধু মামলা নয়
লিগ্যাল এইড অফিসে আপোষও হয়”।
দিবসটি উপলক্ষে ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০ টায় ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস – ২০১৭’ এর কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সারা দেশে লিগ্যাল এইড র‌্যালী,মেলা, পথ নাটিকা, টক-শো, গোল টেবিল বৈঠক, সভা-সেমিনার, মাইকিং ও রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ব্রিফিং-এ তিনি বলেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ, শোষন-বঞ্চনামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন একটি অনন্য সংবিধান। এই সংবিধানে স্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।
জনগণের উক্ত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদান কল্পে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণীত হয়।  গঠন করা  হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা।
এই আইনের সফল বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে অবহিতকরণসহ জনসচেতনতা গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারি আইনি সেবা প্রদানের বিষয়ে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৮ এপ্রিলকে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ ঘোষণা করা হয় এবং ওই বছর থেকেই ২৮ এপ্রিল  জাতীয়ভাবে আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে গতিশীল ও সেবাবান্ধব করার লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার আওতায় প্রত্যেক জেলায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপনসহ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, চৌকি আদালত এবং শ্রম আদালতে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসসমূহে একজন করে সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজ পদমর্যাদার অফিসারকে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্ণার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সরকারি আইনি সেবা প্রদান আরও বিস্তৃত ও সহজ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা নিতে পারছেন।
সংসবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭  সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৩১ হাজার ৬২৬ জনকে সরকারি আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে। ২০১২-২০১৭ পর্যন্ত ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৯ জনকে মামলায় আর্থিক সহায়তা, কারাগারে আটককৃত ৪০ হাজার ৭১৫ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৬৪ হাজার ৫৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের কার্যকর ও সময়োপযোগী এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এখন দেশের অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থীদের জন্য এক আলোক বর্তিকায় রূপ নিয়েছে। বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে বিদ্যমান মামলাজট কমানোর পাশাপাশি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, বিচারক, আইনজীবী, সরকারি-রেসরকারি সংগঠন ও গণমাধ্যমসহ সর্বস্তরের মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেলে সরকারি আইনি সেবা কার্যক্রম আরও কার্যকর, গতিশীল ও শক্তিশালী হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + 13 =