আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত হতে পারেন বিএনপি নেতাকর্মী
বরগুনার পাথরঘাটায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অপসারণ চেয়ে আদালত ঘেরাও ও ঝাড়ু মিছিল করার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালত অবমাননার জন্য অভিযুক্ত হতে পারেন। গত ২১ অক্টোবর তারা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শরিয়ত উল্লাহর অপসারণ চেয়ে মিছিল করেছিলেন। এর পর থেকে পাথরঘাটার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মিছিলে আপত্তিকর স্লোগান ও আদালত অবমাননার ঘটনায় পরিকল্পনকারী, নেতৃত্বদানকারী ও অংশগ্রহণকারীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করছে পুলিশ।
বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাহবুব আলম ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশকে। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পাথরঘাটা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াকুব আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলা-ভাঙচুর মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া বরগুনা সদর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিমের জামিন মঞ্জুর নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম মনির পাথরঘাটা শহরের বাসায় ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হামলা-ভাঙচুর হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলার এজাহারে নাম নেই আবদুল হালিমের। গত ২০ অক্টোবর রাতে হালিমকে বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁকে মনির বাসায় হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তাঁকে জামিনে মুক্তি দেন বিচারক।
এতে ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা আদালত এলাকায় বিক্ষোভ ও অশালীন আচরণ করেন। সন্ধ্যার পর শহরে ঝাড়ু মিছিল করেন তারা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুক চৌধুরী, সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
তারা অভিযোগ করেন, ঘুষের বিনিময়ে আবদুল হালিমকে বিচারক জামিন দিয়েছেন। একই রাতে হালিমের জামিনদার অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল আলমের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাহবুব আলম পুলিশকে দেওয়া আদেশে উল্লেখ করেছেন, এজাহারে নাম নেই এমন বয়স্ক ব্যক্তিকে বিচারক জামিন দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতার রাস্তায় মিছিলের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, আদালতকে উদ্দেশ করে প্রকাশ্যে গালাগাল ও হুমকি প্রদান করা হয়েছে এবং আদালতের প্রতি মানহানিকর বস্তু প্রদর্শন করেছে মিছিলকারীরা। আসামির জামিন প্রার্থনাকারী আইনজীবীর চেম্বারও ভাঙচুর করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় পাথরঘাটায় গিয়ে আদালত পরিচালনা বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনা আবশ্যক।
মিছিলে নেতৃত্বদানকারী, পরিকল্পনাকারী ও অংশগ্রহণকারীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো. ফারুক বলেন, ‘আদালত অবমাননার অভিযোগে কোনো ব্যক্তি বা দলের নাম উল্লেখ করা হয়নি। আমরা আদালত অবমাননা করে কোনো বক্তব্য দিইনি। আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতে যারা আওয়ামী লীগের দালালি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলব।
পাথরঘাটা থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, মামলাটি তদন্তাধীন। ভিডিও ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত চলছে।