পবিত্র কোরআনে পরকালের জীবন
আখিরাতের জীবন পবিত্র কোরআনের একটি মৌলিক আলোচ্য বিষয়। আখিরাত বলতে মৃত্যু-পরবর্তী অনন্তকালের জীবনকে বোঝায়। মানুষের মৃত্যু, কবর, কিয়ামত, হাশর, হিসাব, জান্নাত-জাহান্নামের মতো সব বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। মানুষের সৃষ্টি ও জীবনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে আখিরাত গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের কৃতকর্ম ও কর্মফলের সঙ্গেও আখিরাত সম্পর্কিত।
মানুষের পরিণাম সম্পর্কে কোরআনে খুব গভীরভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অনিবার্য মৃত্যুর কথা তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমাদের সবাইকে তোমাদের কর্মের পুরোপুরি প্রতিদান কেবল কিয়ামতের দিনই দেওয়া হবে।
অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে আর জান্নাতের বিপরীতে এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৮)
পবিত্র কোরআনে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাবে না, মানুষের সামনে মৃত্যুর পর আছে এক চিরস্থায়ী জীবন, যে জীবন জবাবদিহির জীবন, যে জীবন মানুষের সব কর্ম ও আচরণের প্রতিদানের জীবন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে এবং যা কিছু আছে পৃথিবীতে সেসব আল্লাহরই।
ফলে যারা অসৎ কর্ম করেছে তাদের তিনি প্রতিফল দেবেন, তাদের কৃতকর্মের আর সত্কর্মশীলদের দেবেন উত্তম প্রতিদান।
(সুরা : নাজম, আয়াত : ৩১)
পবিত্র কোরআনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ স্থানজুড়ে আখিরাতের আলোচনা স্থান পেয়েছে। মানুষের জীবন-মৃত্যুর উদ্দেশ্য, মৃত্যুযন্ত্রণা, কবর, হাশর, কিয়ামত, শিঙায় ফুঁক, মহাপ্রলয়, শেষ বিচার, আমলের হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি সর্বোপরি মুমিনদের মুক্তি আর কাফিরদের চিরস্থায়ী বঞ্চনার বৃত্তান্ত অত্যন্ত স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আলোচিত হয়েছে, যা দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব এবং ঈমান ও আমলের প্রয়োজনীয়তাকে মানুষের মনে এক জীবন্ত বাস্তবতার রূপে হাজির করে দেয়।
মৃত্যু যন্ত্রণা ও কিয়ামতের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মৃত্যু যন্ত্রণা (আল্লাহর নির্ধারিত সময় মোতাবেক) সত্যই আসবে। (হে মানুষ!) এটাই সেই জিনিস, যা থেকে তুমি পালাতে চাইতে এবং শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে।
এটাই সেই দিন, যেদিন সম্পর্কে সতর্ক করা হতো। সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে আসবে যে তার সঙ্গে থাকবে একজন চালক ও একজন সাক্ষী।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ১৯-২১)
শেষ বিচারের দিন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর দুনিয়ার জীবন তো খেলাধুলা ব্যতীত আর কিছুই না। আর আখিরাতের জীবন তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম, যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে, তবু কি তোমরা বুঝবে না?’
(সুরা : আনআম, আয়াত : ৩২)
কিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনের বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন সূর্যকে ভাঁজ করা হবে, যখন নক্ষত্ররা যে খসে খসে পড়বে এবং যখন পর্বতগুলোকে সঞ্চালিত করা হবে।’ (সুরা : তাকবির, আয়াত : ১-৩)
কিয়ামতের দিন মানুষের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অবশেষে যখন বিদীর্ণকারী আওয়াজ (কিয়ামত) এসে পড়বে। এটা ঘটবে সেদিন, যেদিন মানুষ পালাবে তার ভাই থেকে এবং তার পিতা-মাতা থেকে এবং নিজ স্ত্রী-সন্তান থেকেও।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৩-৩৬)
কোরআনে মহান আল্লাহ মুমিন ও কাফিরদের পরিণাম সম্পর্কে বলেছেন, মুমিনদের জন্য জান্নাত আর কাফিরদের জন্য জাহান্নাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, নেককাররা অবশ্যই প্রভূত নিয়ামতের মধ্যে থাকবে এবং পাপীরা অবশ্যই জাহান্নামে থাকবে। জাহান্নামে তারা প্রবেশ করবে কর্মফল দিবসের দিন। এবং তারা এই দিবস থেকে অন্তর্ধান করতে পারবে না। (সুরা : ইনফিতার, আয়াত : ১৩-১৬)
আখিরাতের বিশ্বাস মানুষের পার্থিব জীবনের কর্মকাণ্ড ও কর্মপন্থা নির্ধারণে গভীর প্রভাব রাখে। তাই কোরআনে বারবার বিভিন্ন আঙ্গিকে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং আখিরাতের জীবনের বিভিন্ন বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।