ইসলাম ধর্ম

আবার সংকট কিন্তু বিজয় কার


“”””””””””””””””””””””””””
ফায়সালার জন্যে বনু সা’দ গোত্রের এক জ্যোতিষীকে সবাই সালিশ মানলো। সে থাকতো লোকালয়ের বাইরে- মরুভূমিতে। আবদুল মুত্তালিব তখন সবাইকে নিয়ে তার খোঁজে মরুভূমির উদ্দেশে বের হলেন।

মরুভূমিজুড়ে সবাই জ্যোতিষীকে খুঁজে বেড়াতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে কেটে গেলো অনেক বেলা। এদিকে সবার মশকের পানিও প্রায় শেষ। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি চললো পানি নবীজির জন্ম ছাড়াই। কিন্তু মরু-আরবের প্রচণ্ড গরমে ‘পানি-ছাড়া’ কতোক্ষণ আর! পিপাসা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হলো, শুরু হলো জ্যোতিষী খোঁজা বাদ দিয়ে পানি খোঁজা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পানির কোনো সন্ধান পাওয়া গেলো না। পানি লাভের ক্ষীণ আশাটুকুও যখন ঢাকা পড়ে গেলো প্রবল হতাশার নিচে এবং প্রচণ্ড পিপাসায় সবাই যখন হয়ে পড়লো বে-সামাল, তখন বন্ধ হয়ে গেলো এই পানি খোঁজাখুঁজিও।

কিন্তু আবদুল মুত্তালিব?
তিনিও কি অন্য সবার মতো বসে গেলেন, দমে গেলেন?
তিনিও কি হতাশার কাছে পরাজিত হলেন?

না, তিনি দমে যান নি! তিনি হতাশও হন নি। মরুভূমির ‘জাহাজ’ (উট) নিয়ে চষে বেড়াতে লাগলেন আশপাশ- পানির খোঁজে। একবার ডানে। একবার বামে। একবার উঁচু টিলায় উঠে। কখনো ছুটে গেলেন দূরে, অনেক দূরে। মরুভূমির দিগন্তবিস্তৃত বালি-সমুদ্র পেরিয়ে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলেন-এ যে মরীচিকা! ফিরে এলেন দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে। তবু তিনি হতাশ হলেন না। আশায় বুক বেঁধে চষে বেড়াতে লাগলেন আশপাশ।

কিন্তু একটু আগে যার হাতে সমাপ্ত হলো যমযম পুনঃখননের শ্রেষ্ঠ সাফল্যগাথা, তিনি কি এখন ব্যর্থ হবেন? এও কি হতে পারে? কখনো না!!

হঠাৎ আবদুল মুত্তালিবের কানে মধু ঝরলো। থেকেই ভেসে আসা একটা শব্দের কলতানে মনটা ভরে গেলো। কলিজা শুকিয়ে যাওয়া পিপাসাটাও গেলো উধাও হয়ে। নিচে চোখ পড়তেই দেখলেন তিনি- মরু বুক চিরে সেখানে উৎসারিত হচ্ছে পানি। স্বচ্ছ পানি সীমাহীন আনন্দ আর অপরিসীম কৃতজ্ঞতায় নুয়ে এলো মাথা। আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন তিনি। তার হর্ষ- শুনে সবাই যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। সতেজ হয়ে উ সবার পিপাসা-জর্জরিত দেহটা। ছুটতে ছুটতে এসে তারা দেখলো, তাতে আনন্দের কোনো সীমা রইলো না। আবদুল মুত্তালিবের প্রতি শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় নুয়ে এলো সবার মাথা।
আল্লাহ কতো দয়ালু!
আল্লাহ কতো মেহেরবান!
বান্দার জন্যে কতো তাঁর দরদ ও ভালোবাসা!

ঊষর মরুতে তাঁর একদল বান্দা পিপাসায় ছটফট মারা যাবে-এও কি হতে পারে? হয়েছে কি কোনোদিন?

তবু কেনো মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়?
তবু কেনো মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়?
তবু কেনো মানুষ আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়?
মানুষ বড়ো অকৃতজ্ঞ!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button