ইমাম বুখারী রাহঃ এর জীবনী।
ইমাম বুখারীর (রহ.) নাম মুহাম্মদ। কুনিয়্যাত আবু আবদুল্লাহ। ইমামুল মুহাদ্দিসীন ও আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস উপাধিতে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন। বংশ : মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহীম ইবনে মুগীরা ইবনে বারদিযবাহ ইবনে বাযযা। পিতা ও পিতামহের নাম দু’টিতে বুঝা যায় যে, তাঁরা মুসলমান ছিলেন। ইমাম বুখারী (র.) ছিলেন আজমিয়্যুন নসল,
অর্থাৎ আজমী বংশোদ্ভূত। ইবনে হাজার আসকালানী লিখেছেন যে, মুগীরা ইমাম বুখারীর (র.) প্রপিতামহ যিনি বোখারার হাকিমের হাতে মুসলমান হলো। মুগীরা বোখারার অধিবাসী হন। ঐ সময় ইসলামের এই আইন ছিল যে, যার নিকটে যে মুসলমান হতো সে তার বংশ হিসেবে পরিচিত হতো। এজন্যই ইমাম বুখারীর (র.) বংশ পরিচয় দিতে গিয়ে যোয়াফী বলা হয়। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী ইমাম বুখারীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, মুগীরা ইমাম যু’ফীর হাতে মুসলমান হন।
তাই তাঁকে যু’ফীর বংশ ধরে নেয়া হয়। বুখারীর (র.) বংশে কোন ক্রীতদাস ছিল না। ইমাম বুখারীর (র.) বংশ পরিচিতিতে কোন প্রকার মতভেদ নেই। বারদিযবাহকে কেহ আহনাফ বলেছেন, যার অর্থ হচ্ছে বেশি জ্ঞানী। যেমন কোন ব্যক্তি দানশীল হলে তাকে হাতেম তাই বলা হয়। বারদিয বেশি জ্ঞানবান ছিলেন বলে তাঁকে আহনাফ বলা হয়। ইমাম বুখারীর (র.) পিতার নাম ইসমাঈল। আবুল হাসান তাঁর কুনিয়্যাত বা উপনাম। তিনি ইমাম মালিক (র.)-এর খাস ছাত্র ছিলেন। তাঁর লিখিত কোন কিতাবের উল্লেখ ইতিহাসে পাওয়া যায় না। আল্লামা ইসমাঈল আহমদ বিন যায়েদ, ইমাম মালিক, আবু মোয়াবিয়া, আবদুল্লাহ বিন মোবারক এবং ঐ জামানার খ্যাতনামা মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাফেজ ইবনে হিব্বান তাঁর কিতাবুস সিবতে উল্লেখ করেছেন, ইমাম বুখারীর পিতা ইসমাঈল ইবনে ইব্রাহীম নির্ভরশীল ব্যক্তি। তিনি আহমদ বিন যায়েদ এবং বহু পন্ডিত হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি অত্যন্ত পবিত্র লোক ছিলেন। আহমদ বিন হাফেয বর্ণনা করেন যে, আল্লামা ইসমাঈলের (র.) মৃত্যুর সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেছিলেন : আমার মালের ভিতর চার আনা অংশ সন্দেহযুক্ত নেই। মোকাদ্দামা আসকালানী দ্র:)। ইমাম বুখারীর (র.) পিতা বাল্যকালেই মৃত্যুবরণ করেন। পিতা এবং পুত্র উভয়েই হাদীসের মহাপন্ডিত ছিলেন।
ইমাম মুহাম্মদ বুখারীর (র.) মাতা আবেদা পরহেজগার, সাহেবে কারামত, খোদাভীরু ও আশিকে ইলাহী ছিলেন। ইমাম বুখারী (র.) মাতৃগর্ভ থেকে অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বহু হেকিম কবিরাজের চিকিৎসায় কাজ হয়নি। তাঁর মা তাঁর চোখের জন্য রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ। আমার ছেলেকে চক্ষুদান কর। হঠাৎ একরাতে তাঁর মা স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এসেছেন এবং বলছেন, হে মুহাম্মাদের মা! তোমার দোয়া ও কান্নাকাটির ফলে আল্লাহ তোমার ছেলের চোখ ভাল করে দিয়েছেন। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখেন তার ছেলের দু’টি চোখই ভাল হয়ে গেছে। ইমাম বুখারীর জন্ম খোরাসান এলাকার প্রসিদ্ধ শহর বোখারার মাউন-নহর অঞ্চলে।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক আল্লামা হুমাবী ‘মো’জামে বিলদান’ কিতাবে লিখেছেন, তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান গনি’র পুত্র সাবিদ আমির মোয়াবিয়ার খেলাফতকালে ৫৫ হিজরীতে বোখারা জয় করেন। আল্লামা আসকালানী ইমাম বুখারীর বাল্যকালীন শিক্ষা সম্পর্কে লিখেছেন যে, মায়ের কোল থেকেই ইমাম বুখারী শিক্ষালাভ করেছেন। ইমাম বুখারী তাঁর মা’র দুধ পান করা থেকে শুরু করে দুধ পান শেষ করা পর্যন্ত মা’র নিকট শিক্ষালাভ করেন। তাঁর মা ছিলেন হাদীসের একজন পন্ডিত। ইবনে হাজার আসকালানী ফতহুল বারীর ভূমিকায় লিখেছেন-ইমাম বুখারীর বাল্যকালে তাঁর পিতা মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদের লালন-পালন তাঁর মাতাই করেন।
বাল্যকাল থেকেই তিনি হাদীস মুখস্থ এবং ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা করেছিলেন। কেন হবে না? তাঁর পিতাও একজন হাদীসের পন্ডিত ছিলেন এবং মাতাও ছিলেন হাদীসের একজন পন্ডিত। মুহাম্মাদ বিন হাতেম এরাক (ইমাম বুখারীর (র.) ছাত্র) বলেন, আমি ইমাম বুখারীর নিকট শুনেছি তিনি বলেছেন, আমি বাড়িতে পড়াকালীন হাদীস হেফয করার ইচ্ছা করি। আবু জাফর এরাক বলেন, আমি আমার উস্তাদকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কত বৎসর বয়সে হাদীস পড়া শুরু করেছিলেন?
তিনি বলেন : আমার বয়স যখন ১০ বৎসর, তার আগে থেকেই হাদীস পড়া আরম্ভ করেছিলাম। ইবনে হাজার আসকালানী ফতহুল বারী’র ভূমিকায় লিখেছেন, ঐ এলাকার প্রসিদ্ধ শিক্ষক আল্লামা দাখেলীর নিকট তিনি শিক্ষালাভ করেন। ইমাম বুখারীর (র.) উপস্থিতিতে তিনি তাঁর ছাত্রগণকে একটি হাদীসের সনদ নিম্নরূপে লেখাইতেছিলেন- ‘সুফিয়ান আন আবি যোবাইয়ের আন ইব্রাহীম।’ ইমাম বুখারী (র.) বললেন, হুজুর! আবু যোবাইয়ের সাথে ইব্রাহীমের সাক্ষাৎ হয়নি। এই সনদ ভুল হয়ে গেল। আল্লামা দাখেলী ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন যে, তুমি কি বলছে? বুখারী (রঃ)
বিনয়ের সঙ্গে বললেন, হুজুর সনদ ভুল হয়েছে, আবার হাদীসের দিকে ভালভাবে দেখুন। আল্লামা দাখেলী আবার সেই কিতাবটা দেখে নিজের বুল বুঝতে পারলেন এবং মনে মনে খুশি হয়ে সনদ সম্পর্কে ইমাম বুখারীকে পরীক্ষা স্বরূপ বললেন: (কাইফা হুয়া গুলামু) অর্থ, ওহে ছেলে সহীহ সনদটা তাহলে কি হবে বলতো দেখি? ইমাম বুখারী বললেন, আন জুবাইরিন অহুআদি আন ইব্রাহীমা অর্থ-জুবাইর হলেন আদির পুত্র। তিনি বর্ণনা করেন ইব্রাহীম থেকে। প্রথম বাক্যের অর্থ ছিল জুবাইরের বাপ ইব্রাহীম হতে বর্ণনা করেন, কিন্তু জুবাইর-এর পিতার সঙ্গে ইব্রাহীমের সাক্ষাৎ হয়নি।
আল্লামা দাখেলী বললেন, ও ছেলে, তোমারটাই সহীহ, আমি ভুল করেছিলাম। ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করা হলো এ ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন আপনার বয়স কত ছিল? ইমাম বুখারী উত্তরে বললেন, সে সময় আমার বয়স ছিল ১১ বছর (সিরাতুল বুখারী ৪৭ পৃ.)। ইমাম বুখারী যখন ১০ বৎসরের তখন থেকেই কোন হাদীস সহীহ্ কোন হাদীস যয়ীফ কোন হাদীস মওযু ইত্যাদিকে পার্থক্য করার ক্ষমতা মহান রাব্বুল আলামীন তাঁকে দিয়েছিলেন। বুখারীর প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের নিকট তিনি প্রথম শিক্ষালাভ করেছিলেন। যেমন, মুহাম্মদ বিন বাইকান্দি, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ বাইকান্দি, আবদুল্লাহ বিন মো. মুসনাদী, ইব্রাহীম বিন আসয়া’স ইত্যাদি। এ সকল প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের নিকট বিদ্যা অর্জন করার তৌফিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে দান করেছিলেন।
আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ মুসনাদী এ জন্যই বলা হয়, কারণ তাঁর প্রত্যেকটি হাদীস সহীহ সনদসহ নবী (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছত। ইবনে ওয়ানা কুযাইল বিন ইয়াস মোহতাবমার ইবনে সোলাইমানের ছাত্র ছিল তাঁর জন্ম ১১২ হি. ও মৃত্যু ২২৯ হি. (তাজ কেরাতুল হুফফাজ)। ইব্রাহীম বিন আসয়া’স ফজল বিন ইয়াস ইবনে অয়নার ছাত্র, তিনি ইবনে হুমায়েদের ছাত্র, যিনি মুহাম্মাদ হুমাইদি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। ১৬ বৎসর পর্যন্ত বোখারা ইরাক এর ভিতরে এলেম হাসেল করেন। প্রত্যেকটি শিক্ষকই তাকে ¯েহের চোখে দেখতেন এবং দোয়া করতেন। ইমাম বুখারীর একটি ঘটনা আল্লামা সলীম বিন মুজাহিদ এরূপে বর্ণনা করেন যে, আমি একদিন মুহাম্মদ বিন বাইকান্দির নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন, কিছুক্ষণ আগে যদি তুমি আসতে তাহলে একটা বালককে দেখতে পেতে, সে ৭০,০০০ সত্তর হাজার হাদীসের হাফেয।
একথা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে ছেলেটাকে তালাশ করতে লাগলাম। হঠাৎ ছেলেটোর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাকে বললাম, তুমি নাকি ৭০ হাজার হাদীসের হাফেয? ইমাম বুখারী বললেন, এর চেয়েও বেশি হাদীমের হাফেয আমি। (সুবহানাল্লাহ)। তিনি আরো বললেন, শুধু তাই নয়, কোন হাদীস মাওকুফ, কোন হাদীস মারফু, কোনটা মুত্তাসিল ও মারাসিল তাও আমার জানা আছে। হাদীসের রাবী (বর্ণনাকার), তাদের শিক্ষা স্থান ও তাদের মৃত্যুর তারিখও আমার জানা আছে। মোকাদ্দামায়ে আসকালানীতে লেখা রয়েছে, আল্লামা মোহাম্মদ বিন সালাম বাইকান্দি,
ইমাম বুখারীর সফরের পূর্বে বলেছিলেন: ও ছেলে, তুমি আমার লিখিত কিতাবগুলো দেখ। যেখানে ভুল পাবে সেখানে শুদ্ধ করে দিও। একব্যক্তি আশ্চর্য হয়ে বাইকান্দিকে জিজ্ঞেস করলো আপনি একজন শায়খুল হাদীস হয়ে ছোট একটি বালকের কাছে আপনার ভুল সংশোধন করে চাইলেন, এর কারণ কি? তিনি বললেন, এ ছেলে আমার ছাত্র বটে কিন্তু পৃথিবীতে এর সমকক্ষ দ্বিতীয় আর কোন ব্যক্তি নেই। (লায়সা মিসলুহু আহাদুন)। আল্লামা ইবনে আসকালীন বলেন আল্লামা বাইকান্দি বর্ণনা করেছেন : মো. বিন ইসমাঈল যখন আমার দরসে আসতা, আমি ভয় পেতাম যে, মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল কখন আমার ভুল ধরবে। “
বিদেশে হাদীস সংগ্রহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা
ইবনে সিলায় লেখা আছে, হাদীস শাস্ত্রকে ভালবাসে পুরুষ লোকে, আর হাদীস শাস্ত্রের প্রতি শত্রুতা করে স্ত্রীলোকে। বহু সাহাবী একটি হাদীসের তাহকীকের জন্য বহু সাহাবীর নিকট সফর করে গেছেন। তার প্রমাণ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ইত্যাদি। এরূপ ইমাম বুখারী (র.) হাদীস তালাশের জন্য বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন, যার কিছু নমুনা দেয়া হলো। কুতাইবা বিন সাঈদ সাকাফী বলতেন, ইমাম বুখারী যদি সাহাবী হতেন, বড় মর্যাদার সাহাবী হতেন। কিন্তু যদি তাবেয়ী হতেন তাহলে সবচেয়ে বড় তাবেয়ী হতেন। ইমাম বুখারীর কয়েকজন শিক্ষক ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানীফার জামানার লোক। যেমন: ইমাম বুখারীর শিক্ষক মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আনসারী তাঁর শিক্ষক হুমায়েদ, তাঁর শিক্ষক আনাস বিন মালেক সাহাবী।
ইমাম বুখারী (রঃ) সাকিফ বিন ইব্রাহীম, ইয়াযিদ বিন আবু ওবায়েদ, সালমা বিন আকও সাহাবী। ইমাম বুখারী, আলী ইবনু আয়াস, আবি ইবনে ওসমান, মো. বিন বাসর সাহাবী। ইমাম বুখারী আবু নয়ায়েস, আনাস, সাহাবী মাখয়ুম। ইমাম বুখারী, ওবায়দুল্লাহ বিন মুসা, আবু তোফায়েল, আলী (রাঃ) সাহাবী। ইমাম বুখারী, খান্নাত বিন ইয়াহিয়া, ঈসা বিন তাহমা, আনাস সাহাবী। ইমাম বুখারী, ঈসা বিন খালেদ, হারিস বিন উসমান, আঃ বিন বোসার সাহাবী। ইমাম বুখারী ও রাসূল (সাঃ) এর মাঝে তিনজন রাবী পার্থক্য। ইমাম মালিক ও ইমাম আবু হানীফার শিক্ষকের ভিতরে ইমাম বুখারীর শিক্ষক
যেমন: সাফিক বিন ইবরাহীম ও ইয়াযিদ বিন আবু ওবায়েদ জাফর সাদেকের ছাত্র। ইবনে মুয়ীন ইমাম বোখারীর শিক্ষক (মৃত্যু ২১৫ হিঃ)। আলী ইবনে আসাখা ২০৫ হিঃ মৃত্যুবরণ করেন। লায়েছ এবং হাফেজ বিন ওসমানের ছাত্র। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম মুয়ীন ইমাম বোখারী শিক্ষক। আবু নঈম ফজল বিন ছকাইন যিনি আমির বিল হাদীস নামে প্রসিদ্ধ তিনি আহমদের ছাত্র (মৃত্যু ২০৯ হিঃ)। ওবায়দুল্লাহ বিন মুসা (মৃত্যু ২৯৩ হিঃ), ইবনে যয়ীও হেশামের ছাত্র ছিলেন। হেছাম বিন খালেদ ২১৫ হি: মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি হাফেয বিন ওসমানের ছাত্র ছিলেন। ইমাম নাসাঈ বলেন, খারেদ বিন ইয়াহিয়া সালমি মালিক বিন সিগওয়ালের (মৃত্যু ২১৭ হিঃ) ছাত্র ও আইম্মারে হাদীস ছিলেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও ইমাম আবু দাউদ বলেন, ইমাম বোখারী ১৬ বছর পর্যন্ত নিজের দেশের শিক্ষকের নিকট হাদীস সংগ্রহ করেন। অতঃপর মূলকে হেজাজ যেখানে ইসলামের এলমের খনি ছিল। যে জমিনে রাসূলের (সা.) প্রতি অহি অবতীর্ণ হতো সেখানকার শিক্ষকগণের নিকট ইমাম বোখারী শিক্ষালাভ করেন।
ইমাম বোখারীর শ্রেষ্ঠ ছাত্র আবু হাতেম বলেন, ইমাম বোখারী বলছিলেন, আবদুল্লাহ বিন মুবারক, আকি বিন জাররার কিতাবগুলো মুখস্থ করার পর হানাফিদের কথা খুব ভাল বুঝতেছিলাম। ইহার যাচাইয়ের জন্য হেজাজে সফর করলাম। তখন আমার বয়স ১৬ বছর ছিল। অরাক বলেন, ইমাম বোখারীর প্রথম ভ্রমণ ২০০ হি:, প্রথম হাদীসের শিক্ষা ২০৪ হি: এবং ২০৫ হিজরীতে (মোকদ্দামায়ে ফতহুল বারী)। ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ১৫ বছর বয়সে ২১০ হি: ইমাম বুখারী মায়ের সাথে হজ্জ সফর করেন। তাঁর সাথে তাঁর বড় ভাই আহমদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হজ্জ শেষে তিনি তাঁর ভ্রাতা ও মাতাকে বিদায় দিয়ে সেখানে হাদীস সংগ্রহে ব্রতী হন।
মক্কায় তিনি যে শিক্ষকগণের নিকট হাদীস সংগ্রহ করেছেন, তাদের ক’জনের নাম নি¤েœ প্রদত্ত হলো। ইমাম আবু অলিদ, ইয়াজিদ বিন ইসমাঈল, আবু বকর আবদুল্লাহ জুবায়ের, আল্লামা হুমাইদী ইত্যাদি। ইমাম বোখারী মক্কা থেকে হাদীস সংগ্রহ করে মদীনার পথে রওয়ানা হলেন। তখন তাঁর বয়স আঠার বছর ছিল (২১২ হিজরী)। মদীনায় পৌঁছে মদীনার যেসব বড় বড় মুহাদ্দেসের নিকট তিনি হাদীস সংগ্রহ করেন, তারা হলেন: ১) ইবরাহীম বিন মুনযার, ২) মুতাবর বিন আবদুল্লাহ ৩) ইবরাহীম বিন হামজাহ, ৪) মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ ৫) আঃ আজীজ বিন আবদুল্লাহ ওইসী ইত্যাদি। ঐ সফরেই ইমাম বোখারী এক চাঁদনি রাতে ‘তারীখুল বোখারী’ লিখেছিলেন।
মুলকে হেজায, মক্কা, তায়েফ, জিদ্দা, শাম ও মদীনাতে ৬ বছর কাল হাদীস সংগ্রহ করেন। তিনি বসরাও সফর করেন। সেখানে আবু আসেম বিন ববিন, সাফন বিন ঈসা, বদল বিন মোজার, হারসি বিন ইমারা, আফফান বিন মাসলিম, মোহাম্মদ বিন উরওয়া, সোলাইমান বিন হারস, আবু ওলিদ বিন তাইলাস, ইমাম আ’সিম, মুহাম্মদ বিন সালাফ প্রমুখ হাদীসবেত্তাগণের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন। বসরায় ইমাম বোখারী চারবার সফর করেন। আল্লামা মহিউদ্দিন নিওবী তাহমা বিন আসমা’র মধ্যে লিখেছেন, ইমাম বোখারীর কতিপয় কুফী শিক্ষকের নাম
যেমন: আবদুল্লাহ মুসা, আবু নঈম, আহমদ বিন আবি ইয়াকুব, ইসমাঈল বিন আবান, হাসান বিন আবি, খালিদ বিন মুখাল্লাদ, শহীদ বিন আফল, তালাক বিন গেনাম, উমর বিন হাফস প্রমুখ। ইমাম বোখারীর কয়েকজন বাগদাদী শিক্ষকের নাম যেমন: ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুহা: বিন ঈসা, মুহাম্মদ বিন সায়েক, সরীদ নওমান প্রমুখ। অষ্টম সফরে যখন ইমাম বোখারী আহমদ বিন হাম্বলের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন তখন ইমাম আহমদ দুঃখের সাথে ইমাম বোখারীকে বললেন, আহ! তুমি আহলে এলেম মুহাদ্দেসগণকে ছেড়ে খোরাসান যাচ্ছো? সেখানকার লোকেরা কি তোমার মর্যাদা বুঝবে? ইমাম বোখারীকে বোখারার হাকীম আবু তাহের দেশ থেকে তাড়াবার জন্য প্রচেষ্টা চালালেন।
ইমাম বোখারী কেঁদে কেঁদে বললেন, আমার শিক্ষক আহমদ বিন হাম্বল এ কথাই বলেছিলেন। এরূপ শামদেশ, মিসর, জজিয়া খোরাসান, সমরখন্দ, মারও, বালাখ, হিরাত, নিসাপুর প্রভৃতি শহরে হাদীস সংগ্রহ করার জন্য সফর করেছেন। পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধি হবার আশঙ্কায় তার অন্য শিক্ষকের নাম দেয়া হলো না। ইমাম বোখারী বলেন যে, আমি নির্ভরশীল শিক্ষকগণের নিকট হাদীস সংগ্রহ করেছি তাদের সংখ্যা এক হাজারের অধিক। “