ইসলাম ধর্ম

দেখা দাও হে যমযম—–

শুরু হলো যমযমের উৎস সন্ধানে পিতা-পুত্রের নৈশ- অভিযান। শুরু হলো কাক-চিহ্নিত জায়গায় মাটি খোঁড়ার অভিযান। কোদাল নিয়ে আবদুল মুত্তালিব মাটি খুঁড়ে যাচ্ছেন আর টুকরি ভরে ভরে তা সরিয়ে রাখছে হারিস।কী দারুণ দৃশ্য!

অনেক দিন আগে এক পিতা-পুত্রের ত্যাগ ও কুরবানীর
ইতিহাসকে ঘিরে জন্ম নিয়েছিলো যে যমযম, আজ আবার তা পুনর্জন্ম লাভ করতে যাচ্ছে আরেক পিতা-পুত্রের হাতে!

জানতে চাও সেই পিতা-পুত্রের ত্যাগ ও কুরবানীর সেই
ইতিহাস? যমযমের সূচনা-ইতিহাস?.. শোনো তাহলে-

আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম
আল্লাহর নির্দেশে ছোট্টো ইসমাঈল এবং মা হাজেরকে মক্কার জন-মানবহীন খাঁ-খাঁ মরুময় প্রান্তরে রেখে চলে গেলেন। মা হাজের কি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন প্রিয় স্বামীর এই ‘অপ্রিয়’ আচরণে?
অসম্ভব!

তিনি যখন জানতে পারলেন যে, আল্লাহর ইচ্ছাতেই তিনি তাদের এখানে রেখে যাচ্ছেন, তখন আনন্দচিত্তে মেনে নিলেন এই কঠিন ‘মরুবাস’। কাঁটা হায় আলো তার চোখে গোলাপের মৃদু আঁচড় আর মরুযা গেলো শোভা ছড়ানো উদ্যান।

কিন্তু কী খাবেন তারা? ইবরাহিম আলাইহিস সালাম উ রেখে গিয়েছিলেন ছোট্টো ইসমাঈলের জন্যে? সামানা খুব সামান্য খাবার আর মশক-ভরা অল্প পানি। কিছ পানিশূন্য নির্জন মরুতে ক’দিন চলে সামান্য এই খাবারে আর অল্প এই পানিতে!

দিন যায় রাত আসে। রাত যায় দিন আসে। ফুরিয়ে যায় খাবার। ফুরিয়ে যায় পানীয়। নেই খাবার। আছে শুধু ক্ষুধা, অনন্ত ক্ষুধা। নেই পানি। আছে শুধু পিপাসা, অনন্ত পিপাসা বাঁ ক্ষুধায়-ক্ষুধায় আর পিপাসায়-পিপাসায় নিস্তেজ হয়ে আসে শিশু ইসমাঈলের দেহ। বেড়ে চলে তার ছটফটানি। বেড়েই দায় চলে। বেড়ে চলে মা হাজেরের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। পিপাসায় পন নিজের গলাও শুকিয়ে গেছে তার। সন্তানের ভয়ে শুকিয়ে ছিল গেছে কলিজাও।

কী করবেন তিনি?
কোথায় পাবেন একটু পানি?
পাওয়া যাবে কি ওই সাফা পর্বতে?
কিংবা ওই মারওয়া পর্বতে?

ছুটে যান তিনি একবার সাফায় আরেকবার মারওয়ায়। এভাবে বারবার। অনেকবার। কিন্তু কোথায় পানি? এ যে শুধু মান ‘নিষ্ফল’ ছুটোছুটি? কিন্তু এক পিপাসার্ত শিশুর জন্যে এক মমতাময়ী মা’র এই ছুটোছুটিকে নিষ্ফল বলছি কেনো? হতেই পারে না! আল্লাহ কি তাঁর বান্দাকে ক্ষুধা আর পিপাসায় কষ্ট দিতে পারেন? ভাবাই যায় না!

হঠাৎ মা হাজেরা দেখেন, শিশু ইসমাঈলের পায়ের কাছে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে ফোয়ারা-গতিতে শীতল পানির স্বচ্ছধারা! চারদিক ভেসে যাচ্ছে সেই বেগবান ধারায়।

আয় আল্লাহ,
তোমার কী কুদরত!

আনন্দে-কৃতজ্ঞতায় সেজদাবনত হলেন মা হাজের। তারপর তাড়াতাড়ি পানি আটকানোর ব্যবস্থা করলেন তিনি। বালি দিয়ে, পাথর দিয়ে বাঁধলেন পাড়।

ইতিহাসের এই যমযম কূপই নতুন করে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়লো আবদুল মুত্তালিবের কাঁধে। পিতা হাশিমের পর কাবার মেহমান-হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্বটা ছিলো তারই কাঁধে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button