হেসে উঠলো পৃথিবী
“””””””‘””””””””‘””””””””””’
জ্যোতিষী সবাইকে জিজ্ঞাসা করলো,
‘তোমাদের ওখানে ‘দিয়ত’ (রক্তপণ) কতো?’
মক্কাবাসী জানালো,
‘দশ উট।’
জ্যোতিষী বললো,
‘এই দশ উট এবং আবদুল্লাহর মাঝে এখন লটারি হবে। প্রথমেই যদি আবদুল্লাহর পরিবর্তে উটের নাম উঠে আসে তাহলে খুব সহজেই হয়ে যাবে সমাধান। বেঁচে যাবে আবদুল্লাহ আর কুরবানী হবে দশ উট। কিন্তু প্রথমে আবদুল্লাহর নাম উঠে এলে উটের সংখ্য আরও দশটি বাড়াতে হবে। আবদুল্লাহকে বাঁচাতে হলে এভাবে যতোবার তার নাম আগে আসবে ততোবার দশটি করে উটের সংখ্যা বাড়িয়ে যেতে হবে।
শুরু হলো লটারি। কী আশ্চর্য! প্রতিবারই আবদুল্লাহর নাম উঠছে আর দশটি করে উটের সংখ্যা বাড়ছে। অ-নে-ক বার পর এলো উটের নাম! হ্যাঁ, ততোক্ষণে উটের সংখ্যা একশোতে এসে দাঁড়িয়েছে।
অবশেষে মুক্তি পেলেন আবদুল্লাহ। জবাই হলো এই একশো উট। সবার মুখে ফুটলো হাসির আভা। সবার চেহারায় দ্যুতি ছড়ালো স্বস্তির প্রভা। অযুত-নিযুত কৃতজ্ঞতার
ভাষা। আবদুল্লাহকে ফিরে পেয়ে সবাই যেনো নিজেদের জীবনই ফিরে পেলো।
আবদুল্লাহর জন্যে সবার বুকে লুকিয়ে ছিলো এতো যে ভালোবাসা-আবদুল মুত্তালিবের তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো। এই ভালোবাসাময় চেহারাগুলোর দিকে কৃতজ্ঞচিত্তে অনেকক্ষণ তিনি তাকিয়ে থাকলেন। তার খুশির কোনো সীমা রইলো না। একদিকে ছেলের প্রতি মানুষের এই উপচে-পড়া ভালোবাসায়, অপরদিকে ছেলেকে কুরবান না করেও মানত পুরা হওয়ায়-মন ছিলো তার অনির্বচনীয় পুলকে পুলকিত। অনাবিল আনন্দস্রোতে প্লাবিত।
অনেক আগে আবদুল্লাহর আরেক মহান পূর্ব-পুরুষ এমনই এক কুরবানী থেকে রেহাই পেয়েছিলেন-এক জান্নাতী দুম্বার বিনিময়ে। আজ আবদুল্লাহ নিজে রেহাই পেলেন-একশো উটের বিনিময়ে।
কী সুন্দর মিল!
আবদুল্লাহর পূর্ব-পুরুষ নবী ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সেই ঈমানদীপ্ত আত্মত্যাগের কাহিনি কি তোমরা পড়েছো?
আসলে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের কুরবানী- আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিলো না। আল্লাহ শুধু দেখতে চেয়েছিলেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার প্রিয় সন্তান ইসমাঈলকে আল্লাহর উদ্দেশে কুরবান করতে প্রস্তুত কি না। যখন দেখলেন যে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তখন ছোট্টো ইসমাঈলকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ আর কী নবীজির জন্ম
করবেন। পরীক্ষায় তো তিনি পাশ করেই ফেললেন। পরীক্ষায় পাশ করলে পুরস্কার মিলে না শাস্তি? নিশ্চয়ই পুরস্কার! আল্লাহও ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নানাভাবে পুরস্কৃত করলেন। প্রথমেই ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বদলে কুরবান হলো জান্নাতী দুম্বা। তারপর ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশেই তিনি পাঠালেন ইসহাক আলাইহিস সালামকে। তারপর ইসহাক আলাইহিস সালামের বংশে পাঠালেন ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে। তারপর ইউসূফ আলাইহিস সালামকে। এভাবে একের পর এক নবীর আগমন ঘটলো ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশে।
এখন বলো, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যদি সত্যি সত্যি কুরবান হয়ে যেতেন, তাহলে কী করে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করতেন তার বংশে?
হ্যাঁ, ঠিক এভাবেই যার ঔরসে জন্ম নেবেন আমাদের নবীজি, যাঁর আগমনে পৃথিবী ধন্য হবে হিদায়াতের আলোকরশ্মিতে, জন্ম নেবে বড়ো বড়ো সভ্যতা ও ইতিহাস, দিশেহারা মানুষ পাবে পথের দিশা, বিভ্রান্ত মানবতা পাবে মুক্তির ঠিকানা, সেই ‘প্রতীক্ষিত নবী’র আগমনের পূর্বেই পিতা আবদুল্লাহ দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন-এ কেমন করে হয়? এ জন্যেই ঠিক ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মতোই আবদুল্লাহকেও ছুরির নিচ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো।
কী সুন্দর মিল! তাই না?