প্রযুক্তি

সোশ্যাল মিডিয়ায় মনেটাইজেশন থেকে উপার্জনের শারিয়াহ বিধান

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মনেটাইজেশন আয়ের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তবে উৎসটি কতোটা শরিয়াহসম্মত, এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। নিচে আমরা এ বিষয়ে কিছু ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করব।
মূলনীতি—
যেকোনো উপার্জন বৈধ হওয়ার জন্য একটি মৌলিক শর্ত হচ্ছে, উপার্জনমাধ্যমটি বৈধ হওয়া। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ায় মনেটাইজেশনের মাধ্যমে উপার্জন বৈধ হওয়ার জন্য ভিডিও কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপনগুলো শারিয়াহসম্মত হতে হবে। যদি ভিডিও কনটেন্ট অথবা মনেটাইজড বিজ্ঞাপনে হারাম পণ্য থাকে, প্রদর্শিত চিত্র শারিয়াহ পরিপন্থী হয় অথবা অ্যালকোহল, জুয়া, মিউজিক, বেটিং, বা শারিয়াহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো বিষয় থাকে তাহলে সেসব কন্টেন্ট এর মনেটাইজেশন থেকে প্রাপ্ত আয় বৈধ হবে না।
সুতরাং নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে মনেটাইজেশন থেকে কৃত আয় বৈধ হবে:
১. ভিডিও কনটেন্ট বা উপাদান শারিয়াহসম্মত হতে হবে।
২. প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে শারিয়াহকর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো বিষয় থাকতে পারবে না।
৩. বিজ্ঞাপনে বা উপস্থাপনায় প্রতারণা, মিথ্যা বিবরণ বা ধোঁকা দেওয়া যাবে না।
বিদ্যমান বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা:
বাস্তবতা হল, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে চ্যানেল-কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নানা বিজ্ঞাপন অটো প্রদর্শিত হয়ে যায়। মনেটাইজেশন অফ করা থাকলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ ওয়াচ হলেই বিজ্ঞাপন অন হয়ে যায়। হ্যা, মনেটাইজেশন অন করে ক্যাটাগরি ও ফিল্টারিং এর মাধ্যমে কিছু নিয়ন্ত্রণ তৈরি করা যায়। তবে সেগুলোও সকল ক্ষেত্রে শারিয়াহ মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় না। ফলে উদাহরণস্বরূপ রিলিজিয়াস ক্যাটাগরি নির্বাচন করার পরেও সেখানে ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্মের বিজ্ঞাপন চলে আসার মতো ঘটনা বাস্তবে পাওয়া গিয়েছে। অনুরূপ বিভিন্ন হালাল ক্যাটাগরির বিজ্ঞাপনে শারিয়াহ পরিপন্থী চিত্র, মিউজিক ইত্যাদি শারিয়াহ নিষিদ্ধ বিষয় পাওয়া গিয়েছে। এক কথায়, বর্তমান বাস্তবতায় পুরোপুরি নিজের মতো করে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
এ বাস্তবতায় কোনো কোনো শারিয়াহ স্কলার বৈধ প্রয়োজন ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল ওপেন না করার কথা বলেছেন। আবার অন্য অনেকের মতে, মূলগতভাবে বৈধ উদ্দেশ্যে চ্যানেল ওপেন করা যাবে। তবে যথাসম্ভব বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারি:

  • বিশেষ বৈধ প্রয়োজন না থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল না খোলা।
  • বৈধ প্রয়োজনে খুলতে হলে যথাসম্ভব মনেটাইজেশন বন্ধ রাখবে, যেন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন না করে।
  • তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যথাসম্ভব ক্যাটাগরি ও ফিল্টারিং সিস্টেম প্রয়োগ করে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্বে বর্ণিত শারিয়াহ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
  • যথাসম্ভব ফিল্টারিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের পরও যেসব শারিয়াহ পরিপন্থী বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হবে, সেগুলোতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এর দায় নিজের উপর আসবে না (ইনশাআল্লাহ), তবে এ থেকে ‍উপার্জিত আয় আনুপাতিক হারে দান করে দিতে হবে।
    মোটকথা ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটাইজেশন থেকে ইনকাম করা যেমন হালাল নয়, তেমনি সব ইনকাম হারামও নয়। হালাল বিজ্ঞাপন থেকে যতটুকু ইনকাম আসবে ততটুকু হালাল হবে। আর এই বিষয়টি যেহেতু সহজে নিরূপণ করা সম্ভব হয় না, তাই সাধারণভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটাইজেশন থেকে ইনকাম করা নিরাপদ নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button