৪ বিবাহ নিয়ে হাদিসে কি বলেছে জেনে নিন
একজন পুরুষ চারজন মহিলাকে বিবাহ করতে পারে তবে শর্ত হলো সকলের মাঝে সমতা বহাল রাখার যোগ্য হতে হবে,মাহর স্ত্রীর হক, তাই তাকে প্রদান করা আবশ্যক বিষয়ে কোরআন তাফসির।
4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 2
وَ اٰتُوا الْیَتٰمٰۤى اَمْوَالَهُمْ وَ لَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِیْثَ بِالطَّیِّبِ١۪ وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَهُمْ اِلٰۤى اَمْوَالِكُمْ١ؕ اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِیْرًا
এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না। এটা মহাপাপ।
4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 3
وَ اِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِی الْیَتٰمٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ١ۚ فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَلَّا تَعُوْلُوْاؕ
আর যদি তোমরা এতিমদের (মেয়েদের) সাথে বে-ইনসাফী করার ব্যাপারে ভয় করো, তাহলে যেসব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো তাদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করো, তাহলে একজনকেই বিয়ে করো। অথবা তোমাদের অধিকারে সেসব মেয়ে আছে তাদেরকে বিয়ে করো। বে-ইনসাফীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটিই অধিকতর সঠিক পদ্ধতি।
4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 4
وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحْلَةً١ؕ فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَیْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِیْٓئًا مَّرِیْٓئًا
আর আনন্দের সাথে (ফরয মনে করে) স্ত্রীদের মোহরানা আদায় করে দাও। তবে যদি তারা নিজেরাই নিজেদের ইচ্ছায় মোহরানার কিছু অংশ মাফ করে দেয়, তাহলে তোমরা সানন্দে তা খেতে পারো।
তাফসীর: : আল্লাহ তা’আলা পিতৃহীনদের অভিভাবকগণকে নির্দেশ দিচ্ছেন-পিতৃহীনেরা যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌছে ও বিবেকসম্পন্ন হয় তখন তাদেরকে তাদের মাল পুরোপুরি প্রদান করবে। কিছুমাত্র কম করবে না বা আত্মসাৎও করবে না। তাদের মালকে তোমাদের মালের সঙ্গে মিশ্রিত করে ভক্ষণ করার বাসনা অন্তরে পোষণ করো না। হালাল মাল যখন আল্লাহ পাক তোমাদেরকে প্রদান করেছেন-তখন হারামের দিকে যাবে কেন? তোমাদের ভাগ্যে যে অংশ লিপিবদ্ধ তা তোমরা অবশ্যই প্রাপ্ত হবে। তোমাদের হালাল মাল ছেড়ে দিয়ে অপরের মাল যা তোমাদের জন্যে হারাম তা কখনও গ্রহণ করো না। নিজেদের দুর্বল ও পাতলা পশুগুলো দিয়ে অপরের মোটাতাজাগুলো হস্তগত করো না। মন্দ দিয়ে ভাল নেয়ার চেষ্টা করো না। পূর্বে লোকেরা এরূপ করতো যে, তারা পিতৃহীনদের ছাগলের পাল হতে বেছে বেছে ভালগুলো নিয়ে নিজেদের দুর্বল ছাগলগুলো দিতো এবং এভাবে গণনা ঠিক রাখতো। মন্দ দিরহামগুলো তাদের মালে রেখে দিয়ে তাদের ভালগুলো নিয়ে নিতো। অতঃপর মনে করতো যে তারা ঠিকই করেছে। কেননা, ছাগলের পরিবর্তে ছাগল দিয়েছে এবং দিরহামের পরিবর্তে দিরহাম দিয়েছে। তারা পিতৃহীনদের সম্পদকে নিজেদের সম্পদের মধ্যে মিশ্রিত করে দিয়ে এ কৌশল করতো যে, এখন আর স্বাতন্ত্র কি আছে? তাই আল্লাহ পাক বলেন-“তাদের সম্পদ নষ্ট করো না, কেননা, এটা বড় পাপ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-‘কোন পিতৃহীনা বালিকার লালন পালনের দায়িত্ব যদি তোমাদের উপর ন্যস্ত থাকে এবং তোমরা তাকে বিয়ে করার ইচ্ছে কর, কিন্তু যেহেতু তার অন্য কেউ নেই, কাজেই তোমরা এরূপ করো না যে, তাকে মোহর কম দিয়ে স্ত্রীরূপে ব্যবহার করবে, বরং আরও বহু স্ত্রীলোক রয়েছে তাদের মধ্যে তোমাদের পছন্দমত দুটি, তিনটি এবং চারটিকে বিয়ে কর।হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘একটি পিতৃহীনা বালিকা ছিল। তার মাল-ধনও ছিল এবং বাগানও ছিল। যে লোকটি তাকে লালন পালন করছিল সে। শুধুমাত্র তার মাল-ধনের লালসায় পূর্ণ মোহর ইত্যাদি নির্ধারণ না করেই তাকে বিয়ে করে নেয়। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
। তথায় বলা হয়-যখন পৃতিহীনা মেয়ের মাল ও সৌন্দর্য কম থাকে তখন তো অভিভাবক তার প্রতি কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না, সুতরাং এর কোন কারণ নেই যে, তার মাল ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার পূর্ণ হক আদায় না করেই তাকে বিয়ে করে নেবে। হ্যাঁ, তবে ন্যায়ের সাথে যদি পূর্ণ মোহর ইত্যাদি নির্ধারণ করতঃ বিয়ে করে তবে কোন দোষ নেই। নচেৎ স্ত্রীলোকের কোন অভাব নেই। তাদের মধ্যে হতে যেন পছন্দ মত সে বিয়ে করে। ইচ্ছে করলে দু’টি, তিনটি এবং চারটি পর্যন্ত করতে পারে।
পুরুষের জন্যে এক সাথে চারটের বেশী স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ, যেমন এ আয়াতেই বিদ্যমান রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং জমহুরের এটাই উক্তি। এখানে আল্লাহ পাক স্বীয় অনুগ্রহ ও দানের বর্ণনা দিচ্ছেন। সুতরাং চারটের বেশীর উপর সমর্থন থাকলেও অবশ্যই তা বলতেন।★ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেনঃ কুরআন কারীমের ব্যাখ্যাকারী হাদীস শরীফ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ছাড়া আর কারও জন্যে একই সাথে চারটের বেশী স্ত্রী একত্রিত করা বৈধ নয়।’ এর উপরই উলামা-ই-কিরামের ইজমা হয়েছে।★
মুসনাদ-ইশাফিঈর মধ্যে রয়েছে, হযরত নাওফিল ইবনে মুআবিয়া (রাঃ) বলেনঃ “আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার ৫টা স্ত্রী ছিল। আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ওদের মধ্যে পছন্দমত চারটিকে রাখ এবং একটিকে পৃথক করে দাও। ওদের মধ্যে যে সবচেয়ে বয়স্কা ছিল এবং নিঃসন্তান ছিল তাকে আমি তালাক দিয়ে দেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে খুশী মনে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও যা দিতে তোমরা স্বীকৃত হয়েছে। তবে যদি স্ত্রী ইচ্ছে প্রণোদিত হয়ে তার সমস্ত মোহর বা কিছু অংশ মাফ করে দেয় তবে তা করার তার অধিকার রয়েছে এবং সে অবস্থায় স্বামীর পক্ষে তা ভোগ করা বৈধ। নবী (সঃ)-এর পরে কারও জন্যে মোহর ওয়াজিব করা ছাড়া বিয়ে করা জায়েয নয় এবং ফাকি দিয়ে শুধু নামমাত্র মোহর ধার্য করাও বৈধ নয়।’মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত আলী (রাঃ)-এর উক্তি বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যখন কেউ রোগাক্রান্ত হয় তখন তার উচিত যে, সে যেন তার স্ত্রীর মালের তিন দিরহাম বা কিছু কম বেশী গ্রহণ করতঃ তা দিয়ে মধু ক্রয় করে এবং আকাশের বৃষ্টির পানি তার সাথে মিশ্রিত করে, তাহলে তিনটি মঙ্গল সে লাভ করবে। একটি হচ্ছে স্ত্রীর মাল যাকে আল্লাহ পাক তৃপ্তি সহকারে খেতে বলেছেন, দ্বিতীয় হচ্ছে মধুর শিকা এবং তৃতীয় হচ্ছে কল্যাণময় বৃষ্টির পানি। হযরত আবু সালিহ (রঃ) বলেন যে, মানুষ তাদের মেয়েদের মোহর নিজেরা গ্রহণ করতো। ফলে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং এ কাজ হতে বিরত রাখা হয়। (মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম ও তাফসীর-ই-ইবনে জারীর)
এ নির্দেশ শুনে জনগণ বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাদের পরস্পরের মোহর কি?’ তিনি বলেনঃ ‘যে জিনিসের উপরেই তাদের পরিবার সম্মত হয়ে যায়।'(Tafsir Ibn Kathir)
একাধিক বিবাহের শর্ত হল সুবিচার করতে হবে আর যদি সুবিচার করতে সক্ষম না হয় তাহলে একজনকে বিবাহ করবে অথবা কোন ক্রীতদাস বিবাহ করবে। তবে সুবিচার করা খুবই কষ্টকর
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَنْ تَسْتَطِيْعُوْآ أَنْ تَعْدِلُوْا بَيْنَ النِّسَا۬ءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيْلُوْا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوْهَا كَالْمُعَلَّقَةِ)
“আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করতে পারবে না; যদিও তোমরা প্রবল ইচ্ছা কর; অতএব তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখ না।”(সূরা নিসা ৪:১২৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তির দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তন্মধ্যে একজনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন তার অর্ধদেহ ধসাবস্থায় উপস্থিত হবে। (আহমাদ: ২/৩৪৭, হাকিম: ২/১৮৬)
সুতরাং বহু বিবাহ ইসলামী শরীয়তের অন্যতম একটি বিধান। এ সকল শরয়ী বিধান যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে এসেছেন তা কেউ ঘৃণা করলে সে কাফির হয়ে যাবে। এ জন্য মহিলাদের উচিত, একজন স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকাটা যেন তারা অপছন্দ না করে। কারণ এটা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধান। তবে স্বভাবগতভাবে এ বিষয়টাকে অপছন্দ করা, ভাল না বাসার অর্থ শরয়ী বিধানকে অপছন্দ করা নয়। এরূপ অপছন্দের কারণে ঈমানের কোন ক্ষতি হবে না। অথবা কতক পুরুষ যারা স্ত্রীদের মাঝে সমতা বজায় রাখতে পারে না এজন্য একাধিক বিবাহকে অপছন্দ করা দোষণীয় নয়। কিন্তু একাধিক বিবাহ করার শরয়ী বিধানকে অপছন্দ করলে মুরতাদ হয়ে যাবে। কারণ সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আনীত বিধানকে অপছন্দ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ذٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ)
“কারণ, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করছে; তাই আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছেন।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৯)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীদের মাহর সন্তুষ্ট মনে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। স্ত্রী যদি খুশি হয়ে কিছু ছেড়ে দেয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। এ আয়াত প্রমাণ করছে স্ত্রীকে মাহর প্রদান করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে সকল আলেম একমত। (আল ইসতিযকার, ইবনু আব্দুল বার ১৬/৬৮)
মাহরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কোন পরিমাণ নেই (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৬২)। যার যেমন সামর্থ্য সে সেই পরিমাণ দেবে, এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তা আদায় করে দেয়া উত্তম। মৃত্যুর সময় ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত নয়।।(Tafsire Fathul Majid)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক হারাম সম্পদ ও বস্তু অপবিত্র। আর প্রত্যেক হালাল সম্পদ ও বস্তু পবিত্র।
২. ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খাওয়া হারাম।
৩. একত্রে একজন পুরুষ চারজন মহিলাকে বিবাহ করতে পারে তবে শর্ত হলো সকলের মাঝে সমতা বহাল রাখার যোগ্য হতে হবে।
৪. মাহর স্ত্রীর হক, তাই তাকে প্রদান করা আবশ্যক।
৫. ইসলামের কোন বিধানকে অপছন্দ করা কুফরী কাজ, বরং আনুগত্যের সাথে সকল বিধানকে মেনে নিতে হবে।
৬. ইসলাম নারীর অর্থনৈতিক অধিকার দিয়েছে, তাদের অর্থে স্বামীরও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই