ইসলাম ধর্ম

প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সত্য পথের নির্দেশ, রহমাত আর আত্মসমর্পণকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।

সেদিন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব, আর (তোমার) এই লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে (হে মুহাম্মাদ!) আমি তোমাকে আনব। আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সত্য পথের নির্দেশ, রহমাত আর আত্মসমর্পণকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।

(১) তারা প্রত্যেক উম্মতের নবীগণ। কিয়ামতের দিন তারা তাদের উম্মতের উপর সাক্ষ্য হবেন। তারা সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা উম্মতের কাছে রিসালাত পৌছিয়েছেন, তাদেরকে ঈমানের দিকে আহবান জানিয়েছেন। [কুরতুবী]

(২) এ আয়াতাংশটি সূরা আন-নিসার ৪১ নং আয়াতের সমার্থবোধক। সেখানে এর বিষয়বস্তুর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

(৩) আয়াতের প্রথমাংশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাশরের মাঠে সাক্ষ্য বানানোর কথা ঘোষণা করার পর দ্বিতীয়াংশে কুরআন নাযিল করার কথা উল্লেখ করে সম্ভবতঃ এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যিনি আপনাকে কিতাব দিচ্ছেন এবং আপনার উপর তা প্রচার-প্রসার করা ফরয করে দিয়েছেন তিনিই আপনাকে এ ব্যাপারে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এ ব্যাপারে কুরআনের আরও আয়াত থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। [দেখুনঃ সূরা আল-আরাফঃ ৬, সূরা আল-হিজরঃ ৯২–৯৩, সূরা আল-মায়েদাহঃ ১০৯, সূরা আল-কাসাসঃ ৮৫]

(৪) ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কুরআন আমাদেরকে সবকিছুর জ্ঞান বর্ণনা করেছে এবং সবকিছু জানিয়েছে। মুজাহিদ বলেন, হালাল ও হারাম জানিয়েছে। তবে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথাটি বেশী ব্যাপক। কেননা কুরআন প্রতিটি উপকারী জ্ঞানসমৃদ্ধ, যা গত হয়েছে সেটার সংবাদ এবং যা আসবে সেটার জ্ঞান আর প্রতিটি হালাল ও হারাম। তেমনিভাবে মানুষ তাদের দুনিয়া ও দ্বীনের ব্যাপারে তাদের জীবিকা ও পুনরুত্থান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য এতে পাবে। অন্তরসমূহের জন্য এতে রয়েছে হেদায়াত এবং মুসলিমদের জন্য এতে রয়েছে রহমত ও সুসংবাদ [ইবন কাসীর] ইমাম আওযায়ী বলেন, আয়াতের অর্থ, আমরা কুরআনকে সুন্নাহ দ্বারা সবকিছুর স্পষ্টব্যাখ্যারূপে নাযিল করেছি। [ইবন কাসীর]

মোটকথা: কুরআন এমন প্রত্যেকটি জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে, যার ওপর হিদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে, যা জানা সঠিক পথে চলার জন্য একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। বস্তুত কুরআনুল কারীমে সব বিষয়েরই মূলনীতি বিদ্যমান রয়েছে। যেসব মূলনীতির আলোকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস মাসআলা বর্ণনা করেছেন। কুরআনেই সেটা করতে রাসূলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বলেছেন, জেনে রাখ! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং কুরআনের অনুরূপও দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩০]- তাফসীরে জাকারিয়া

[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক নবী তাঁর জাতির জন্য সাক্ষ্য দেবে এবং নবী (সাঃ) ও তাঁর উম্মত অন্যান্য সকল নবীদের ব্যাপারে সাক্ষী দেবেন যে, তাঁরা সত্যবাদী; তাঁরা অবশ্যই তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। (বুখারীঃ তফসীর সূরা নিসা)

[2] ‘গ্রন্থ’ বলতে আল্লাহর কিতাব ও নবী (সাঃ)-এর ব্যাখ্যা অর্থাৎ হাদীসকে বুঝানো হয়েছে। মহানবী (সাঃ) নিজ হাদীসকেও ‘আল্লাহর কিতাব’ বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন এক চাকরের প্রভু-পত্নীর সাথে ব্যভিচারের ঘটনা ইত্যাদিতে উল্লিখিত। (দেখুনঃ বুখারীঃ কিতাবুল মুহারেবীন, কিতাবুস সালাত প্রভৃতি) আর ‘প্রত্যেক বিষয়’ বলতে অতীত ও ভবিষ্যতের এমন সংবাদ যার জ্ঞান রাখা উপকারী ও আব্যশিক। অনুরূপ হালাল হারামের বিস্তারিত আলোচনা এবং দ্বীন ও দুনিয়ার এমন সব কথা বা ইহকাল ও পরকালের এমন সব ব্যাপার যা মানুষের জানা প্রয়োজন; কুরআন ও হাদীস উভয়েই সে সব পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে।- তাফসীরে আহসানুল বায়ান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button