এক্সক্লুসিভ

লোহাগাড়ায় উপজেলা প্রশাসনে এখনো বহাল তবিয়তে আওয়ামী আশীর্বাদ প্রাপ্ত প্রশাসন

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি , স্বেচ্ছাচারী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা এবং জুলাই বিপ্লব মামলার এজাহার ভূক্ত আসামিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনার, দুদক বরাবর অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় যে, আওয়ামী দুঃশাসনের কবল হতে ৫ আগস্ট ২৪ এ পুরো দেশ মুক্ত হলেও আওয়ামী প্রশাসনের কবল হতে মুক্ত হতে পারেনি লোহাগাড়ার জনগণ। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইনামুল হাছান ৩৫তম বিসিএসের (প্রশাসন) একজন কর্মকর্তা। তার নিজ জেলা ফেনী। তিনি মুক্তিযুদ্ধা কোটায় বিসিএস প্রশাসনে স্থান করে নেন বলে জানা যায়। তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। সে সুবাদে ওনার চাকুরি জীবন ওনার নিজ জেলা ফেনীর সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলায় কাটিয়ে আসছেন। বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল বিভিন্ন পদে প্রশাসনে দাপটের সহিত কর্মজীবন অতিবাহিত করে আসছেন এ নির্বাহী কর্মকর্তা। ওনি চাকুরী জীবনে সুবিধাজনক স্থানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন, কাট্টলি সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পটিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দাপটে এ কর্মকর্তা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। নভেম্বর ২০২৩ এ চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে এখোনো আছেন সেই আগের মতোই ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস এখনো আওয়ামী দোসরদের আশ্রয় স্থল। লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন কমিটিতে নির্বাহী কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতায় নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের পদলেহনকারী ব্যক্তিদের পদায়ন করেছে বলে জানা যায়। উপজেলা ক্রীড়া কমিটিতে জুলাই বিপ্লবের মামলার আসামীকে স্থান করে দিয়ে আলোচনায় আসেন এ কর্মকর্তা। সরকারি গেজেটে মন্ত্রণালয়ে অনুমতি থাকলেও লোহাগাড়ার অধিকাংশ উচ্চ বিদ্যালয় এবং দাখিল মাদ্রাসার গভর্নিং বড়িং কমিটি অনুমোদন না দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতায় নিজেই সব প্রতিষ্ঠানের পদ ধারণ করে আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক জানান – “গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি অর্থায়নে বিভিন্ন বৃত্তি দেওয়ার নিয়ম চলে আসলেও সম্প্রতি সময়ে এ কর্মকর্তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হতে ১৫-২০ করে টাকা নিয়েই সরকারি সহয়তার নামে তামশা করে আসছে। খেলা-ধুলার জন্য সরকারি বাজেট থাকলেও স্কুল-মাদ্রাসা হতে টাকা দিতে বাধ্য করেই উপজেলা প্রশাসনের অধীনে ক্রীড়া পরিচলনা করে আসছে। ঐ প্রধান শিক্ষক জানান, আগে প্রতিবছর ক্রীড়া ফান্ডে ৫০০ টাকা দিলেও এ বছর প্রতি স্কুল হতে ২০০০ টাকা দিতে বাধ্য করেছে। “
উপজেলা প্রশাসনের এ নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ ও কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির চাপা ক্ষোভ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলছেনা বলে জানান। এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হল, লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় ওনার অফিসের রাস্তার বিপরীতে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ দোকান ও স্থপনা গড়ে উঠলেও এগুলো উচ্ছেদে কোন ভূমিকা নাই। বরং ওনি সেই দোকানগুলো হতে মোট অংকের টাকা ও মাসিক চাঁদা গ্রহণ করে আসছেন বলে জানা যায়। তাছাড়া উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন সরকারি জমিতে গড়ে উঠা দোকান প্রতি ২ লক্ষ টাকা অগ্রীম গ্রহণ এবং মাসিক ভাড়া এ কর্মকর্তার এজেন্টের মধ্যমে গ্রহণ করে আসছে বলে জানা যায়।

উপজেলা প্রশাসনের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থের লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে এ নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলা প্রশাসনের একজন স্ট্যাপ নাম প্রকাশের শর্তে জানান যে, “I Love Bangladesh ” নামে একটা সাইনবোর্ড করেই হাতিয়ে নিয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। যদিও বিভিন্ন ব্যক্তির উপঢৌকনেই করা হয়েছে এ সাইনবোর্ড। উপজেলা প্রশাসনের ফুল গাছ রোপণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি এবং সংস্কারের নামে এ কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪০ (চল্লিশ লক্ষ) টাকা। এ জন্য সরকারি বাজেট ৪০ লক্ষ টাকা হলেও মাত্র কয়েক হাজার টাকার লোকদেখানো ফুলেল চারা লাগিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানান ঐ কর্মকর্তা। লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনের এলাকা ঘোরে দেখা যায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা এবং অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ডালপালা পড়ে আছে সর্বত্র।
লোহাগাড়া উপজেলায় হাট-বাজার, বালু লুটেও রয়েছে এ কর্মকর্তার ব্যাপক স্বেচ্ছাচারীর অভিযোগ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এবং জুলাই বিপ্লবকে কলঙ্কিত করতেই গনবিরোধী কার্যকলাপের কারণে ক্ষোভ বাড়ছে জনগণের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান লোহাগাড়া বটতলী স্টেশনে বাজার ইজারার নামে ব্যবসায়ীদের উপর চলছে জুলুম ও চাঁদাবাজি। এ চাঁদাবাজির সরাসরি মদদ এবং কমিশন ভাগাভাগি করে আসছে এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। লোহাগাড়া বটতলী বাজার ঘোরে জানতে পারি ৫ আগস্ট ২৪ এর আগে যেখানে সাধারণ ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ হতে নামে মাত্র ২০/৩০ টাকা করে ইজারা নিতো সেখানে বর্তমানে এ কর্মকর্তার মদদে ১০০-৫০০/১০০০ টাকা পর্যন্ত দৈনিক নিচ্ছে। যার ফলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হচ্ছে নিঃস্ব।ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা। তাই বাধ্য হয়েই, ব্যবসায়িরা ক্রেতাদের কাছ হতে নিচ্ছে অতিরিক্ত মূল্য। দেশের অন্যান্য বাজারের তুলনায় লোহাগাড়া কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস এবং ফলের দাম লোহাগাড়ায় বেশি নিচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা। একটি ঘটনা উল্লেখ করলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবে এই, লোহাগাড়া বটতলী মাছ বাজারে মাছ কাটতে গিয়ে একজন প্রবাসী প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দিচ্ছিল। মাছ কাটার ছেলেটা বলল স্যার, এখন হতে প্রতি কেজি মাছ কাটা ২০ টাকা করে দিতে হবে। তখন জিজ্ঞাসা করল, কেন? আগে ১০ টাকা ছিলো, এখন ২০ টাকা কেন? ঐ মাছ কাটার ছেলেটা বলে, এখন প্রতিদিন ৪০০ টাকা বাজারে ইজারা দিতে হয়। আগে যেখানে ১০০ টাকা দিতাম। যদিও মাছ বাজার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে। তাই জমিদারকেও দৈনিক ভাড়া দিতে হয়। এভাবে প্রতিটি দোকান হতে ইজারা বহুগুণ বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে এ নির্বাহী কর্মকর্তা।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর বৈশাখের আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি ইজারা/চাঁদা দাবী করায় ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গেলে ঐ কর্মকর্তা চাঁদাবাজদের পক্ষে দাঁড়ায় এবং ব্যবসায়িদের তাদের দাবী মতো টাকা দিতে শাসিয়ে দেয়। ব্যবসায়ীরা এ কর্মকর্তার খবরদারির কারণে চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে পারছেনা বলে জানান।
লোহাগাড়ায় মাটি কাটা থেমে নেই। মাটি খাটার বিষয়ে বিভিন্ন সময় এ কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। মাটি কাটার কাজে এবং বহন করার কাজে ব্যবহারিত একজন সিন্ডিকেট ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য, মাটি কাটার প্রতিটি স্পষ্ট হতে মাটি খাটার জন্য এ কর্মকর্তার অফিস গ্রহণ করে দৈনিক ৬০০০ টাকা। যার ম্যাক্সিমাম অর্থ যায় এ কর্মকর্তার পকেটে। তাছাড়া প্রতিটি বালু ও গাছের গাড়িতেও চলছে এ কর্মকর্তার হরদম চাঁদাবাজি ও হয়রানি।

এ নির্বাহী কর্মকর্তার অনিয়ম-দূর্নীতি আওয়ামী সরকারের চলমান প্রক্রিয়া বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ কর্মকর্তার ইন্ধনে লোহাগাড়া প্রশাসন নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি বলে জানা যায়। তার অনীহার কারনেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে অধিকাংশ জুলাই বিপ্লবের আসামীরা। তার ইন্ধনেই চলছে আওয়ামী পূনর্বাসনের প্রক্রিয়া। তার অফিসেই নিয়মিত আসা যাওয়া করে আওয়ামী লীগের এজেন্টগুলো।
এ নির্বাহী কর্মকর্তার এসব বিষয়ে অপতৎপরতার বিষয়ে কেউ কেউ স্বোচ্ছার হতে চাইলেই তার উপর নেমে আসে হয়রানি। ভয় দেখায় সেনাবাহিনী বা প্রশাসন দিয়ে শায়েস্তা করার। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে, “তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। একটি পক্ষের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।”
অভিযোগকারীদের এ বিষয়ে জানালে তারা বলেন, এটি তদন্তের বিষয়। দূর্ণীতি দমন কমিশন এবং সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষ এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করলে বিষয়টি উঠে আসবে বলে জানান। আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ পুষ্ট এ কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারণ করতে তারা সরকারের প্রতি দাবী জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button