ঘুষ আদায় ও মামলার হুমকি: খালিশপুর থানার এসআই পলাশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) খালিশপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এক ঘের ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় এবং মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। আটক লিটনের স্ত্রী রেহেনা পারভীন এই অভিযোগটি জমা দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একটি ওয়ারেন্টভুক্ত মামলার আসামি সারোয়ারের ছেলে লিটনকে এসআই পলাশ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আবার লিটনকে আটক করে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, এসআই পলাশ ঘের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানকে ফোনে মাদক মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এই ফোনালাপের একটি কল রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। রেকর্ডে শোনা যায়, মেহেদী হাসান বারবার বলছেন— “স্যার, আমার নামে তো কোনো মাদক মামলা নেই…”। তবুও এসআই পলাশ কোনো কথা না শুনেই ফোনটি কেটে দেন।
ঘের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান দাবি করেন, “আমি একজন নিরীহ ঘের ব্যবসায়ী, আমার বিরুদ্ধে কোনো মাদক মামলা নেই। সম্প্রতি আমার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ৯ রাউন্ড গুলি চালায়। সেই ঘটনার ন্যায়বিচার চাইতে গিয়ে এখন পুলিশ আমাকেই উল্টো ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
গ্রেপ্তার লিটনের স্ত্রী রেহেনা বেগম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, “আমার স্বামী বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে গিয়েছিল, সেখান থেকেই তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি থানায় গেলে তারা জানায়, সে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, এবার তাকে ছাড়া হবে না। এসআই পলাশ সঙ্গে সঙ্গেই আমার স্বামীর কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে মোটরসাইকেল আর মোবাইল আনতে গেলে তিনি আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই কারণে আমাকে সারা রাত ১২টা পর্যন্ত থানার সামনে বসিয়ে রাখা হয় এবং আমার সঙ্গে কুকুরের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। আমি অবশ্যই এসআই পলাশের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাবো।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এসআই পলাশ তাকে হুমকি দিয়েছেন— টাকা নেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে তার স্বামী লিটনকে পুরনো পেন্ডিং মামলায় আসামি করে জেলে পাঠানো হবে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী রেহেনা পারভীন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বরাবরও পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে খালিশপুর থানার এসআই পলাশের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমার জানা আছে। তবে কাউকে মাদক মামলায় জড়ানোর বা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে এবং কোনো ধরনের অনিয়ম বা ক্ষমতার অপব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না।
এলাকাবাসী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও অভিযুক্ত এসআই পলাশের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।



