ছাড়পত্র ছাড়া কীভাবে ইটভাটা চলে
দেশের নির্মাণ খাতের অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে ইট যে প্রয়োজন, তা অনস্বীকার্য। সেই ইট তৈরি হয় ভাটায়। আর ইটভাটা গড়ে তোলার বিষয়ে আছে সরকারি কিছু সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা। নয়তো যে এলাকায় ইটের ভাটা গড়ে ওঠে, সেখানকার পরিবেশ, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় নেমে আসবে। দুঃখজনক হচ্ছে আইন ও নীতিমালা না মেনেই দেশে পরিচালিত হচ্ছে বিপুল ইটভাটা। একইভাবে গড়ে উঠছে নতুন আরও ইটভাটা। যেমনটি দেখা যাচ্ছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। বিষয়টি বরাবরের মতোই উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনে জানানো হচ্ছে , বর্তমানে মির্জাপুরে ১১৪টি ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৬৯টি ভাটার পরিবেশগতসহ প্রশাসনিক ছাড়পত্র নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ভাটাগুলোর অধিকাংশই মির্জাপুরের পাহাড়ি অঞ্চল, আবাদি জমি, আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলপথ ও গ্রামীণ সড়কসংশ্লিষ্ট এলাকায় পড়েছে। এসব ভাটার মধ্যে নতুন করে চালু হয়েছে সাতটি ইটভাটা। এসব ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে তিন ফসলি জমিতে। ভাটাগুলোর তিনটি পড়েছে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা এলাকায়। এ ছাড়া বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে তিনটি এবং চান্দুলিয়া গ্রামে আরও একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।
আমরা জানি, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন। উপদেষ্টার এমন ঘোষণার পরও মির্জাপুরে কোনো ছাড়পত্র ছাড়া নতুন এই সাত ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে, তা–ও তিন ফসলি জমিতে। অথচ আইনে বলা আছে, এমন জমির ন্যূনতম এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ।
অনুমতি ছাড়া কীভাবে নতুন ভাটা স্থাপন করা হয়েছে, এ বিষয়ে একটি ভাটার মালিক বলেন, সাতটি ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। ইটভাটা স্থাপনের কাজ শুরুর পাশাপাশি রিটগুলো করা হয়। তবে এ বিষয়ে শুনানি হয়েছে কি না, তা জানাতে পারেননি। তার মানে আইনের তোয়াক্কা না করে কোনো না কোনো প্রভাব খাটিয়ে নতুন এ ভাটাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।
আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেবে। আইনি জটিলতার দোহাই দিয়ে এভাবে পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলতে পারে না। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা। শুধু সাতটি নতুন ভাটা নয়, মির্জাপুরের পরিবেশগতসহ প্রশাসনিক ছাড়পত্র ছাড়া ৬৯টি ইটভাটা কীভাবে চলছে, সে বিষয়টিও আমরা জানতে চাই। কেন তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে?