রাজনীতি

বিধি লঙ্ঘন করে কেপিআইভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সম্মেলন আয়োজনে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেননি বিএনপি নেতারা। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারি স্পর্শকাতর স্থাপনার (কেপিআই) ভেতরে অবস্থিত।

কেপিআই নীতিমালা লঙ্ঘন করে দ্বিধাবিভক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির একটি পক্ষ আগামী রোববার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। পুরো মাঠজুড়ে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। এ কারণে মাঠে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, প্যান্ডেলের কারণে শিক্ষার্থীরা মাঠে প্রাত্যহিক সমাবেশ করতে পারছে না। জানুয়ারি মাসের মধ্যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ করার সরকারি নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে কেপিআইভুক্ত এলাকার ভেতরে অবস্থিত এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ দখলে রেখে সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিজিএফসিএল’র পক্ষ থেকে বিষয়টি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসককেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিজিএফসিএল’র আওতাধীন তিতাস গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র। এটি কেপিআই বা কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। কেপিআই নীতিমালার আলোকে এই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বিরাসারে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এ স্থাপনার পাশেই কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবাসিক কোয়ার্টার এবং দুটি উচ্চ চাপ সম্পন্ন গ্যাস কূপ রয়েছে। এ সকল স্থাপনা একই সীমানা প্রাচীর ঘেরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সকল শ্রেণির সবগুলো শাখায় পাঠদান চলমান আছে। প্যান্ডেলের কারণে স্কুল শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাসেম্বলি ও খেলাধুলা ব্যাহত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্মেলনের আয়োজক বিএনপির এ পক্ষটি গত ২৮ ডিসেম্বর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল। এজন্য গত ২৩ ডিসেম্বর সম্মতি চেয়ে বিজিএফসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আবেদন করেছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। কিন্তু পরে অধিকতর প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে ওই তারিখের সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর নতুন করে ১৮ জানুয়ারি সম্মেলনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা বিজিএফসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, স্কুল মাঠটি কেপিআইভুক্ত এলাকায়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে চিঠি দিয়েছি।

গত বছরের ১০ আগস্ট জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিভক্ত হয়ে পড়েন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজের নেতৃত্বে একটি পক্ষ এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকে। সর্বশেষ একটি পক্ষ ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সম্মেলন প্রতিহতের ডাক দেয়।

এ প্রসঙ্গে একটি পক্ষের নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, বিগত দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানে হয়নি। দলের বড় একটি অংশের নেতাকর্মীদের বাদ দিতেই তারা মূল শহর থেকে কিছুটা দুরে শহরতলী এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাঠে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, স্কুল মাঠটি কেপিআইভুক্ত নয়। আগামী ১৮ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সম্মেলন এই মাঠেই হবে। সম্মেলনের কারণে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনো ক্ষতি হবে না। সম্মেলনের পর মাঠ থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ সরানো হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button