ইসলাম ধর্ম

আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন সর্বদা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে

4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 71,আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন সর্বদা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সদা যেন অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত থাকে বিষয়ে কুরআনের তাফসীর আলোচনা

4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 71

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِیْعًا

হে ঈমানদারগণ! মোকাবিলা করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকো। তারপর সুযোগ পেলে পৃথক পৃথক বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে বের হয়ে পড়ো অথবা এক সাথে।

4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 72

وَ اِنَّ مِنْكُمْ لَمَنْ لَّیُبَطِّئَنَّ١ۚ فَاِنْ اَصَابَتْكُمْ مُّصِیْبَةٌ قَالَ قَدْ اَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیَّ اِذْ لَمْ اَكُنْ مَّعَهُمْ شَهِیْدًا

হ্যাঁ, তোমাদের কেউ কেউ এমনও আছে যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে গড়িমসি করে। যদি তোমাদের ওপর কোন মুসিবত এসে পড়ে তাহলে সে বলে আল্লাহ‌ আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, আমি তাদের সাথে যাইনি।

4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 73

وَ لَئِنْ اَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِّنَ اللّٰهِ لَیَقُوْلَنَّ كَاَنْ لَّمْ تَكُنْۢ بَیْنَكُمْ وَ بَیْنَهٗ مَوَدَّةٌ یّٰلَیْتَنِیْ كُنْتُ مَعَهُمْ فَاَفُوْزَ فَوْزًا عَظِیْمًا

আর যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তাহলে সে বলে—এবং এমনভাবে বলে যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোন প্রীতির সম্পর্ক ছিলই না,-হায়! যদি আমিও তাদের সাথে হতাম তাহলে বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।

4,আন্-নিসা,আয়াত নং: 74

فَلْیُقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ الَّذِیْنَ یَشْرُوْنَ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَا بِالْاٰخِرَةِ١ؕ وَ مَنْ یُّقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیُقْتَلْ اَوْ یَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِیْهِ اَجْرًا عَظِیْمًا

(এই ধরনের লোকদের জানা উচিত) আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরস্কার দান করবো।

৭১-৭৪ নং আয়াতের তাফসীর: : আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন সর্বদা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সদা যেন অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত থাকে যাতে শত্রুরা অতি সহজে তাদের উপর জয়যুক্ত না হয়। তারা সব সময় যেন প্রয়োজনীয় অস্ত্র প্রস্তুত রাখে, নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে এবং শক্তি দৃঢ় করে। নির্দেশ মাত্রই যেন তারা বীর বেশে যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে যায়। ছোট ছোট সৈন্যদলে বিভক্ত হয়েই হোক বা সবাই সম্মিলিত হয়েই হোক সুযোগমত তারা যেন যুদ্ধের অহ্বান মাত্রই বেড়িয়ে পড়ে।
মুনাফিকদের স্বভাব এই যে, নিজেও তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকে এবং অপরকেও যুদ্ধে না যেতে উৎসাহিত করে। যেমন মুনাফিকদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাকূলের কার্যকলাপ ছিল। আল্লাহ তা’আলা তাকে অপমানিত করুন।তাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহ তাআলার কোন হিকমতের কারণে যদি মুসলমানরা তাদের শত্রুদের উপর বিজয় লাভে অসমর্থ হয় বরং শত্রুরাই তাদের উপর চেপে বসে এবং মুসলমানদের ক্ষতি হয় ও তাদের লোক শাহাদাত বরণ করে তখন ঐ মুনাফিকরা বাড়িতে বসে ফুলতে থাকে এবং স্বীয় বুদ্ধির উপর গৌরব বোধ করে। তারা তখন তাদের জিহাদে অংশগ্রহণ না করাকে আল্লাহ তা’আলার দান বলে গণ্য করে। কিন্তু ঐ নির্বোধেরা বুঝে না যে, ঐ মুজাহিদেরা জিহাদে অংশগ্রহণের ফলে যে পুণ্য লাভ করেছে তা হতে তারা সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত রয়েছে। যদি তারাও জিহাদে অংশ নিত তবে মুসলমানদের মত তারাও গাযী হওয়ার মর্যাদা এবং ধৈর্য ধারণের পুণ্য লাভ করতে অথবা শহীদ হওয়ার গৌরব লাভ করতো। পক্ষান্তরে যদি মুসলমান মুজাহিদগণ আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ শত্রুদের উপর জয়ী হয় এবং শত্রুরা সমূলে ধ্বংস হয়ে যায় আর এর ফলে মুসলমানেরা যুদ্ধলব্ধ মাল নিয়ে ও দাস-দাসী নিয়ে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করে, তবে ঐ মুনাফিকরা চরম দুঃখিত হয় এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে এত হা-হুতাশ করে ও এমন এমন কথা মুখ দিয়ে বের করে যে, যেন মুসলমানদের সঙ্গে তাদের কোন সম্বন্ধই ছিল না। তাদের ধর্মই যেন অন্য। তারা তখন বলে, হায়! আমরাও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম তবে আমরাও গনীমতের মাল পেতাম এবং তাদের মত আমরাও দাস-দাসী ও ধন-সম্পদের অধিকারী হয়ে যেতাম।মোটকথা, দুনিয়া লাভই তাদের চরম ও পরম উদ্দেশ্য। সুতরাং যারা ইহকালের বিনিময়ে পরকালকে বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিহাদ ঘোষণা করা উচিত। তারা কুফরী ও অবিশ্বাসের কারণে দুনিয়ার সামান্য লাভের বিনিময়ে আখিরাতকে ধ্বংস করেছে। তাই মুনাফিকদের বলা হচ্ছে- হে মুনাফিকের দল! তোমরা জেনে রেখো যে, যারা আল্লাহ তাআলার পথের মুজাহিদ তারা কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তাদের উভয় হস্তে লাড়ু রয়েছে। নিহত হলেও তাদের জন্য মহান আল্লাহর নিকট রয়েছে বিরাট প্রতিদান এবং বিজয়ী বেশে ফিরে আসলেও রয়েছে গনীমতের মালের বিরাট অংশ।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “আল্লাহর পথের মুজাহিদের যামিন হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ। হয় তিনি তাকে মৃত্যু দান করে জান্নাতে পৌছিয়ে দেবেন, আর না হয় যেখান হতে সে বের হয়েছে সেখানেই যুদ্ধলব্ধ মালসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করার জন্য বের হয়, আল্লাহ তা‘আলার ওপর বিশ্বাস করে এবং রাসূলকে সত্য বলে জানে সে ব্যক্তির দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা নিয়েছেন। হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা তাকে গনীমত বা প্রতিদানসহ সেই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছিল। (সহীহ বুখারী হা: ৩১২৩, সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭৬)

তাই মু’মিনদের উচিত সদা শত্র“দের ব্যাপারে সর্তক থাকা, আর প্রয়োজনানুপাতে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করা।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মু’মিনদের সর্বদা শত্র“দের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
২. মু’মিনদের আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত।
৩. মুনাফিকরা সর্বদা মু’মিনদের অমঙ্গল কামনা করে।
৪. সর্বোত্তম মৃত্যু শহীদি মৃত্যু। আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় যুদ্ধ করলে উভয় অবস্থায় মহাসাফল্য

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button