লোকসানে পড়েছে কৃষক অঞ্চলভিত্তিক ফসল সংরক্ষণাগার না থাকায়

0
817

বর্তমানে যে পিঁয়াজ বাজারে ৯০-১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬-৭ মাস আগে উৎপাদন মৌসুমে এই পিঁয়াজই কৃষক ৮-১২ টাকায় বিক্রি করে নিঃস্ব হয়। অথচ গুনে মানে আমাদের দেশের পিঁয়াজ অনেক ভাল মানের। তাহলে কি সেই কারণ যে পানির দরের সেই পিঁয়াজ এখন ৯০-১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে? অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে কৃষি নিয়ে দেশে সুদুরপ্রসারী

পরিকল্পনার অভাব, অঞ্চল ভিত্তিক ফসল সংরক্ষনাগার বা কোল্ড স্টোরেজ না থাকা ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবই মূল দায়ী। যার ফলে ভুক্তভোগী কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। শুধু পিঁয়াজই নয় উৎপাদন মৌসুমে এই ৩ কারণেই সকল কৃষিপণ্য পানির দরে বিক্রি হলেও বছর ধরেই সে সকল পণ্য আমদানি করে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সরেজমিন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা আড়িয়ালখা অসংখ্য নদ-নদী খাল বিল সমৃদ্ধ মাদারীপুরের শিবচরের কৃষি জমিতে প্রতি বর্ষায় পর্যাপ্ত পলি পড়ে। ফলে প্রতিবছরই বাম্পার ও সুস্বাদু পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। তাই এ অঞ্চলের পিঁয়াজের কদর দেশজুড়েই সমাদৃত। কিন্তু উৎপাদন মৌসুমে সংরক্ষণের অভাবে কৃষক পিঁয়াজ পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
গত বছর মাদারীপুর জেলায় প্রায় ৪১শ’ হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদ হয়ে ৯০ হাজার মে.টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্র শিবচর উপজেলাতেই পিঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৪শ’ হেক্টর জমিতে। কিন্তু পচনশীল এ পণ্য শুধুমাত্র সংরক্ষণের অভাবে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয় এ অঞ্চলের কৃষক। গত বছর উৎপাদন মৌসুমে খুচরা বাজারে পিঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ১২-১৫ টাকায়। মন প্রতি বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬শ’ টাকায়। পাইকারি বাজার হয়ে কৃষকের হাতে তা পৌঁছায় আরো কম দামে। অথচ বীজ, সার, শ্রমিকদের টাকা দিয়ে পিঁয়াজ চাষে মণ প্রতি কৃষকের খরচ হয় ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা। তাই গত বছর অনেক কৃষককে মাঠেই পিঁয়াজ রেখে দিতে দেখা গেছে। চলতি বছর পিঁয়াজের উচ্চ মূল্য চলায় কৃষক বিপুল উৎসাহে আবাদ শুরু করেছেন। উচ্চ মুল্যের কারণে চলতি বছর কৃষক গত বছরেরও দ্বিগুনেরও বেশি জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ সারা জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে শিবচরেই এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদ হয়েছে। কিন্তু উৎসাহের মাঝেও হাসির কোন চিহ্ন মিলছে না কৃষকের মুখে। বীজ ও সারের বাড়তি দাম তাদের শুধু ভাবনার কারণ নয় এরসাথে রয়েছে উৎপাদন পরবর্তী সংরক্ষণাগার বা উপযোগী কোল্ড স্টোর না থাকার মহাচিন্তা। শুধু দুঃচিন্তার ভাজ এখানেই থেমে নেই। একই সময় বর্হিঃবিশ^ থেকে আমদানি বন্ধ না হওয়া, সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবসহ নানান সঙ্কটে চিন্তার ভাজ কৃষকের কপালে। কৃষি ও কৃষককে বাচাতে অঞ্চল ভিত্তিক যে ফসল বা সবজি যে এলাকায় ভাল হয় সংরক্ষণের জন্য সে এলাকায় কৃষি সংরক্ষণাগার বা কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের দাবি কৃষক ক্রেতা বিক্রেতা সকলের।
কৃষক বাবু খান বলেন, গত বছর পিঁয়াজ আবাদ করতে সার, বীজ, শ্রমিক খরচসহ প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু পিঁয়াজ ওঠার মৌসুমে বাজারে দাম খুবই কম থাকায় প্রায় দেড় লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। যদি পেয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারতাম তাহলে আমার এতবড় লোকসান হতো না। এজন্য আমাদের এলাকায় কোল্ডষ্টোর দরকার।
আরেক কৃষক ছলেমান শেখ বলেন, আমাদের পিঁয়াজ উৎপাদন মৌসুমে বিদেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানী বন্ধ করতে হবে আর যে সকল এলাকায় যে সকল ফসল ভালো হয় সেখানে সেই ধরনের সংরক্ষণাগার তৈরি করতে হবে। তা না হলে আমরা কৃষকরা লোকসানের বোঝা বইতে বইতে মরে যাবো।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম সালাউদ্দিন বলেন, এ অঞ্চলে খুবই ভাল মানের পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। পদ্মা, আড়িয়াল খা নদী বেষ্ঠিত এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলের পেয়াজ গুনে মানে দেশের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু উৎপাদন মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে পিঁয়াজ আমদানী হওয়ায় বাজারে পিঁয়াজের মূল্য অনেক নিচে নেমে যায়। ফলে কৃষকরা অনেক লোকসানে পড়েন। এ পিঁয়াজ যদি সংরক্ষণ করা যেত তাহলে কৃষকরা চাষাবাদের প্রতি আরো আগ্রহী হতো।
মাদারীপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ জিএম এ গফুর বলেন, মাদারীপুর, শরিয়তপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল পিঁয়াজ উৎপাদনে সমৃদ্ধ। কিন্তু উৎপাদন মৌসুমে পিঁয়াজের দাম খুবই কম থাকায় কৃষকরা অনেক লোকসানে পড়েন। সারা বছরই পিঁয়াজ আমাদের প্রয়োজন। এমতাবস্থায় এই এলাকায় যদি আঞ্চলিক একটি পিঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হয় তাহলে সারা বছর কৃষকরা পিঁয়াজ বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে আর ক্রেতারাও সহনীয় মূল্যে পিঁয়াজ খেতে পারবে। এ জন্য কৃষকদের সাথে সাথে আমাদেরও দাবি এ অঞ্চলে যেন পিঁয়াজসহ মসলা জাতীয় ফসলের জন্য সংরক্ষাণাগার নির্মাণ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 1 =