খোলা চিঠি

0
1115

মো. জাহাঙ্গীর হোসাই দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে- ৮বছরে রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে- ৭১% ভাগ। গ্রামের

 

মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয় বহুল নগরী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সরকার বার বার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলছে যে, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বাজেটে বছরের পর বছর বরাদ্দের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশ্ন হল- দেশের কত ভাগ মানুষের উন্নয়ন হয়েছে এবং বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের কত ভাগ ব্যয় হচ্ছে, আর কত ভাগ চুরি হচ্ছে। সরকারের লোকজন বার বার বাজেটে অর্থের পরিমান বৃদ্ধির কথা বলছে। উন্নয়নের কথা বলছে, কিন্তু এক বারও দুর্নীতির কথা বলছে না। বর্তমান সরকার অতি জোড় গলায় বলছে- তারা মুক্তিযুদ্ধের সরকার। হ্যাঁ, তাদের কথা কোন যুক্তি-তর্ক না করেই বিশ্বাস করলাম। এখানে প্রশ্ন হল- বর্তমান সরকারের এমপি, মন্ত্রী বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্টরা কি দুর্নীতিমুক্ত? যদি দুর্নীতিমুক্ত না হয়ে থাকে তবে পূর্বের সরকারগুলোর সাথে বর্তমান সরকারের তফাৎটা কোথায়? রাজাকাররাও দুর্নীতি করে আর মুক্তিযোদ্ধারাও দুর্নীতি করে। তাহলে পার্থক্যটা কি? তবে রাজাকাররা দুর্নীতি কম করে। কারণ তাদের ভয় রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের বা মুক্তিযোদ্ধাদেরতো কোন ভয় নেই। অনেক মুক্তিযোদ্ধার দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০০% ভাগ। বাসা ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে- দ্বিগুণেরও বেশি। পানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে- প্রায় ৬০% ভাগ। বাস ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে- ৫০% ভাগ। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার যেমন মান কমেছে, তেমনি তাঁদের পর্যাপ্ত খাদ্যের স্বাস্থ হানি ঘটেছে। এতে করে দেশের সাধারণ মানুষ দিশেহারা এবং জীবনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। অন্য দিকে দেশের আইন বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, এমপি-মন্ত্রীসহ স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি চলছে ফ্রি স্টাইলে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ঘুষ-বাণিজ্য ও দুর্নীতি সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দলীয়করণ যে একটা জাতির কত ক্ষতি করে, তার প্রমান আমাদের দেশের স্থানীয় সরকারগুলোর দিকে তাকালেই অনুধাবন করা যায়। সাধারণ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা একটু দুর্নীতিবাজরাই নির্বাচিত হয়। এ বারে তারা সরকার দলীয়ভাবে নির্বাচিত হয়ে তাদের আর কোন ভয়ই যেন নেই। তারা যেমন দুর্নীতি করছে, তেমনি স্থানীয়দেরকে হয়রানিও করছে। জনগণ এ সব অপকর্ম দুর্নীতি মেনে নেয়নি। জনগণের ক্ষোভ আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুযোগ পেলে ব্যালটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে এবং তার মাশুল এ সরকারকেই দিতে হবে। সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রতি শত ভাগ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা যখন যা বলছে ও যখন যা প্রত্যাশা করছে, তখনই তা যেন পেয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে- সরকার যেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। যা তাদের কার্যকলাপে প্রকাশ পাচ্ছে। রাজনীতি আর এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। রাজনীতি চলে গেছে দেশের আমলা-কামলা, ব্যবসায়ীরা ও অসৎ ব্যক্তিদের হাতে। আমাদের সংবিধানের ৭/১ অনুচ্ছেদে সুষ্ঠুভাবে লেখা আছে- “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”। ÒAll powers in the republic belong to the people.” সংবিধানের কথা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারী রাষ্ট্রীয় কোন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়াটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী। কোন কর্মচারী কোন মালিককে কখনো কোন আদেশ, নির্দেশ বা উপদেশ দিতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী কোন কর্মচারী সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হতে পারে না। এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলবেন যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অবসরে যাবার পর রাজনীতিতে এসেছে বা এই সব পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের যুক্তির সাথে আমি মোটেই একমত হতে পারবো না। যত দিন পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারী জনগণের করের টাকা প্রতি মাসে রীতিমত গ্রহন করবে, তারা ততদিন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। খোলামেলাভাবে বলল আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে, যে সব কর্মচারী পেনশন ভোগ করে থাকে, তারাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জনপ্রতিনিধি হতে হলে অবশ্যই তাকে জনগণের একজন হতে হবে। অন্যথায় সে জাতীয় সংসদসহ কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন করার যোগ্য নয়। তবে যদি কেউ রাজনীতি করতে চায়, তবে তাকে জনগণ কর্তৃক দেয়া সব সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করতে হবে। জনগণের অর্থ গ্রহণ করে আবার তাদেরকে উপদেশ-নির্দেশ দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। দেশ স্বাধীনতার পর সকল সরকারগুলো আমাদের সংবিধান লংঘন করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাজনীতি করার সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এ ব্যাপারে দেশবাসী সজাগ হয়ে জোরালোভাবে দাবি উত্থাপন করতে হবে। যদি রাজনীতিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, অসৎ ব্যবসায়ী আর দুর্নীতিবাজদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়, তবেই স্বাধীনতার সুফল দেশবাসী পেতে থাকবে। সরকারের ভুলের মাশুল দেশবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে- কঠিনভাবে। সরকারের ভুলের জন্য দেশবাসী যে কষ্ট স্বীকার করছে, তার মাশুল অবশ্যই এ সরকারকে দিতে হবে। সরকার প্রধানসহ অন্যান্যরা যতই বলুক- উন্নয়নের কথা, বাস্তবে তার উল্টো। হ্যাঁ, উন্নয়ন হয়েছে। তা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের হয়েছে। তাদের সাথে সাথে এমপি, মন্ত্রী, মেয়রসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদেরও হয়েছে। তাদের বেতন ১২৩% ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার বৈশাখী বোনাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা! বর্তমান সরকার প্রথমে ভুল করলো যাচাই-বাছাই না করে জাতীয় সংসদের নমিনেশন দিয়ে। অনেক জামাত বা স্বাধীনতা বিরোধী, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে এ সকল পদে বসানো হয়েছে। যারা কখনো সরকার বা সরকার প্রধানকে ভালো কোন উপদেশ বা পরামর্শ দেন না, যাতে দেশবাসীর মঙ্গল হবে। তারা শুধুই তাদের নিজেদের জন্য ভাবছে এবং এমন সব কর্ম করে যাচ্ছে, যা দেশবাসী খুশি মনে মেনে নিতে পারছেন না। এরা দুর্নীতি করে বা অবৈধ পথে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে দেশে-বিদেশে টাকার পাহাড় গড়ছে। তাদের অবৈধ কার্যকলাপের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সরকার প্রধানের ওপরেই বর্তাবে এবং মাশুল তাঁকেই দিতে হবে। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। এ দুর্নীতিবাজকে কেন বিদেশ যাবার সুযোগ দেয়া হল বা কেন দেশে থাকাকালীন এই সকল অভিযোগ উত্থাপন করা হল না? কেনই বা এমন এক বিতর্কিত ব্যক্তিকে একটি সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল? কেন নিয়োগের পূর্বে তার সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি? তাহলে কি বলবো- সরকার তাদের নিয়োগের ব্যাপারে ভুল করেছে? এখনও সময় আছে দুর্নীতি থামান। যারাই দুর্নীতিবাজ তারা আপনার, আমার আর দেশবাসীর শত্র“। এখানে জাতির জনকের কথাটি বলতে হয়- তিনি বলেছিলেন “সবাই পায় স্বর্ণের খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি।” এ জন্যই তিনি প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নতুন একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু বড়ই দুভার্গ্যের বিষয় তাঁকে কিছু কুলাঙ্গার, স্বাধীনতা বিরোধী নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতির লালিত স্বপ্ন চিরতরে ধুলিস্যাৎ করে দেয়। সরকার প্রধানকে সবিনয়ে বলতে চাই, আপনার দলের অনেক এমপি, মন্ত্রী, নেতা-নেত্রী দুর্নীতির সাথে জড়িত। তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনুন। এ চোরদের বিচার করে প্রমাণ করুন যে, আপনি বাঙ্গালী জাতির পরম হিতৈষী বন্ধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন দিন দুর্নীতির আশ্রয় নেননি। তিনি দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদেরকে ঘৃনা করতেন। তিনি কোন দিন কোন দুর্নীতিবাজদের সাথে সন্ধি বা আপোষ করেননি। আপনার প্রতি দেশবাসীর প্রত্যাশা ও অনেক বেশি। তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণে যা যা করণীয়, তাই আপনাকে করতে হবে। উপসংহারে বলছি, দেশবাসীকে বা জনগণকে বোকা বা নির্বোধ ভাববেন না। দেশবাসী সবই বোঝেন কিন্তু মুখ খুলে কিছু বলেন না। দেশবাসীকে বোকা ভেবেছিল আইয়ুব, ইয়াহিয়া ও জিয়া-এরশাদ। তাদের করুন পরিণতি যে কি হয়েছিল তা একটু ভেবে দেখতে বলবো। লেখক : মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক
ফোন # ০১৭১০৮৮৩৪১৩, ই-মেইল :jahangirhossain8431@gmail.com

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × four =