বাঁশের তৈরি মাচা। তার উপর বিছানো শিম গাছের কচি ডগা। সবুজ পাতায় ঘেরা কচি ডগায় উঁকি দিচ্ছে লাল–সাদা ফুল। শিশির বিন্দুতে রাতভর ভিজেছে ফুল। তাই পাপড়িতে চিকচিক করছে শিশির বিন্দু। সূর্যের আলো ফুটতেই নিজেদের মেলে ধরেছে। জমির আলে শিম। খালের পাড়ে শিম। বাড়ির আঙ্গিনায়। পতিত জমিতে। এমনকি বাদ
যায়নি গ্রামীণ রাস্তার দু’পাশও। শোভা পাচ্ছে সবুজ পাতা, ফুল আর তরতাজা শিম। এমন চিত্র চোখে পড়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ফসলের মাঠসহ গ্রামীণ জনপদের রাস্তার পাশে।
এবছর বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার আগে রোপণ করা শিমের চারা পচন রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা শেষে নতুন করে বীজ রোপণ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। বীজ রোপণের পর চারা বের হয়ে গাছের লতাপাতা মাচার উপরে উঠেছে। গাছে দেখা দিয়েছে শিম। থোকা থোকা শিমে যেন কৃষকের হাসি। আর মাত্র কটা দিনের অপেক্ষা। একটু পুষ্ট হলেই চলে যাবে বাজারে। তাই চলছে শেষ মুহূর্তে পরিচর্যা। অবশ্য অনেকে এখনই বিক্রি শুরু করেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চার–পাঁচটি গাছ নিয়ে একটি মাচা। প্রতি মাচায় লাগে তিনটি খুঁটি ও একটি বেড়া। আর সামান্য সার। খরচ বলতে এটুকুই। একটি মাচা থেকেই পাওয়া যায় চার থেকে পাঁচ কেজি শিম। অল্প পুঁজিতে এমন অধিক লাভের কারণে শিম চাষে ঝুকেছে কৃষক। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৩৭৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছে কৃষক। এরমধ্যে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভাল দাম পেয়ে কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমি আবাদ করে ৪০ থেকে ৫০ মণ শিম সংগ্রহ করা যায়। বিঘা প্রতি জমিতে আবাদে কমবেশি খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এর বিপরীতে প্রতি বিঘার শিম বিক্রি করে মুনাফা আসে কমপক্ষে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ধুনট উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান বলেন, এবার শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে অন্যান্য সবজির তুলনায় শিমের দামও ভাল। তাই শিম চাষ করে বন্যায় অন্য ফসলের ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।