খুলনা ময়ুর নদীর পানি দুষনের প্রতিকার কি

3
1169

খুলনা প্রতিনিধিঃ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোল ঘেঁষে থাকা ময়ূর নদীর তীরে নগরবাসীর বিনোদনের চাহিদা মেটাতে গড়ে ওঠেছে লিনিয়ার পার্ক। পার্কটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সুবিশাল পরিকল্পনা থাকলেও অধিকাংশ কাজ রয়েছে অসমাপ্ত। পাশে ময়ূর নদীর নোংরা ও দুগর্ন্ধযুক্ত পানি পরিবেশকে বিষাক্ত করছে। লিনিয়ার পার্কের ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ ও গরুর গাড়ি ও রাখালের সুদৃশ্য ভাস্কর্য ও কাঁটা দিয়ে ঘেরা টাওয়ারের সিঁড়ি। আছে দোলনা, জাম্পি প্যাডসহ শিশুদের অসংখ্য

খেলনা সামগ্রী। এছাড়া দেখা যাবে পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ময়ূর নদীর নোংরা কর্দমাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। দূরদূরান্ত থেকে বিনোদনের জন্য এখানে আসা দর্শনার্থীরা নানা অভিযোগ করেছেন। কয়রা থেকে আসা জাহিদ হাসান বলেন, লিনিয়ার পার্কের নাম শুনেছি। কিন্তু দেখতে আসা হয়নি কখনো, তাই আজ সময় করে বন্ধুরা মিলে এখানে এসেছি। কিন্তু ময়ূর নদীর পানির গন্ধে বমি আসার উপক্রম। বসুপাড়ার মাজহারুল ইসলাম জানান, সত্যিই নোংরা পানির সাথে এই পার্ক কোনোভাবে যায় না। সে জানায়, নগরীতে ভালো পার্কের অভাবে রয়েছে। তাই এখানে মাঝে মাঝে আসা হয়। ভালো পার্ক থাকলে এ বিষাক্ত পরিবেশে আসতাম না।

 

এই লম্বা পার্ক নদীর গা ঘেঁষেই অবস্থিত। যেখানেই আপনি বসবেন আপনার নাকে এই নদীর পচা দুর্গন্ধ আসবে। সুন্দরবন কলেজের শিক্ষার্থী শরীফ এবং শারমীন বলেন, এখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা করে নেয়া হয়। কিন্তু এটা আসলে আমাদের সাথে এক প্রকার প্রতারণা। আমারা না জেনেই এখানে এসেছি। ভাবছি এই নদী এবং এর ভেতরকার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ যতদিন না শেষ হবে, ততোদিন আমরা এখানে না আসার চিন্তা করেছি। খুলনা উন্নয়ন ফোরামের মহাসচিব এম এ কাশেম বলেন, শহরের ২২টি খালের সংযোগস্থল এই ময়ূর নদী। ফলে ২২টি খালের মাধ্যমে শহরের সকল ময়লা এই নদীতে নামছে।

 

এছাড়া নদীতে জোয়ার ভাটা না থাকায় বদ্ধ জায়গায় পানি থাকায় পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পার্কের ইজারাদার আলী আকবর টিপু বলেন, এখনো পার্কের শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। আমরা পার্ককে কিভাবে আরো দৃষ্টি নন্দিত করা যায় তাই ভাবছি। আগামীকালকে পার্কের ব্যাপারে চায়না যাচ্ছি। এছাড়া তিনি ময়ূর নদের পানির ব্যাপারে বলেন, পানির কারণে পার্কটি দর্শকরা সন্তোষজনক অবস্থানে নেই। কিন্তু আমরাতো শুধুমাত্র ইজারাদার। নদীর পানির ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না। এটা দেখাশোনা করবে কেসিসি। কেসিসির এস্টেট অফিসার মো. নূরুজ্জামান তালুকদার বলেন, পার্কের কাজ এখনো শতভাগ শেষ হয়নি। শতভাগ শেষ হলে পার্কটি আরও দৃষ্টিনন্দন হবে। তিনি নদীর পানির ব্যাপারে বলেন, আমরা নদীর পানি পরিষ্কারের জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়িই টেন্ডার হয়ে কাজটি শুরু হবে। তবে এই বিষয়টি কন্সারভেন্সী অফিসার তদারকি করছেন। জানা যায়, মহানগরবাসীর চিত্ত-বিনোদনের জন্য ময়ূর নদীর তীরে প্রায় ২১ কোটি টাকায় পার্কটি তৈরি করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)।

 

২০১৪ সালের জুনে পার্কের কাজ শেষ হয়। কেসিসির সূত্রে জানা গেছে, গল্লামারী এলাকায় ময়ূর নদীর তীরে লিনিয়ার পার্কের নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয় ২০০৯ সালে। প্রায় ১৪ একর জায়গা ঘিরে পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কটির সবচেয়ে আর্কষণীয় দিক হচ্ছে নদীর তীর ঘেঁষে যাওয়া পার্কটি সোয়া দুই (১.৭৫) কিলোমিটার লম্বা। এর ভেতরে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে রয়েছে। পার্কটি নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এছাড়া ভেতরে ৪ তলা একটি অবজারভেশন টাওয়ার, মাটির তৈরি বাঘ ও হরিণ, গরুর গাড়ি ও রাখালের ভাস্কর্য, ১০টি আমব্রেলা সেট, দু’টি টয়লেট কমপ্লেঙ্, একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু, দুটি পিকনিক শেড, ৮ আইটেমের খেলনা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × four =