জীবিকার মাধ্যম ফেলনা কলাগাছ

0
2005

কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত- খনার সেই বচন এখন সত্যে পরিণত হচ্ছে। এতদিন কলা ফলনের পর কৃষক যে গাছগুলো কেটে ফেলে দিতেন, সেই ফেলে দেয়া গাছই এখন তাদের জীবিকার মাধ্যম। শুধু তুলা আর পাট থেকেই নয়, এবার কলাগাছের আঁশ থেকেও উৎপন্ন হচ্ছে সুতা। আর এতে ভাগ্য খুলছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের। কলা আর

ছোট চারা বিক্রি করা ছাড়াও কলা উৎপন্ন হওয়ার পর গাছ কেটে ফেলে না দিয়ে কলাগাছ হতে আঁশ তৈরি হচ্ছে। এখন আর ফেলনা নয় কলাগাছ। শিল্পের তালিকায় উঠেছে এই গাছ। ঠাকুরগাঁওয়ে কলাগাছের ডোঙ্গা ও ডাঁটা থেকে তৈরি হচ্ছে মূল্যবান আঁশ। এই আঁশ বিদেশে রফতানি করছে প্রক্রিয়াজাত একটি প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, এ বছরের শুরুতে ব্যক্তি উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর তেলিপাড়া গ্রামে মাসহারুল হক সেতু ও হরিপুর উপজেলার গেদুরা ইউপির মন্নাটলী হাটপুকুর গ্রামের দুরুল হুদা কলাগাছের ডোঙ্গা ও ডাঁটা থেকে আঁশ উৎপাদন করছেন। এই আঁশ কিনছে ঢাকার ওয়েস্ট এগ্রো নামের একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম ও মাহমুদুজ্জামান মৃদুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলাগাছের ডোঙ্গা ও ডাঁটা থেকে উৎপাদিত আঁশের তৈরি সুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে দামি শাড়ি-কাপড়সহ বিভিন্ন বস্ত্র। এই সুতা ভারত হয়ে চীন, জাপান ও জার্মানিতে যাচ্ছে। দেশে তৈরি একটি মেশিনে আট ঘণ্টায় উৎপাদন করা যায় ৪০ কেজি আঁশ। প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট এগ্রোর তত্ত্বাবধানে এই মেশিন তৈরি হচ্ছে দিনাজপুরে। প্রতিটি মেশিনের দাম পড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আঁশ উৎপাদনকারী দুরুল হুদা বলেন, সুতা ছাড়াও কলাগাছের আঁশ দিয়ে নানা বিলাসপণ্য, দোলনা, দড়ি ও তোষক তৈরি করা যায়। এ ছাড়া জৈব সার, পোলট্রি ও মাছের খাবার, কীটনাশক ও সাবান-সোডা, এসিড ওয়াটার তৈরির উপকরণ হিসেবেও কলাগাছের বিভিন্ন অংশ কাজে লাগানো যেতে পারে। দুরুল হুদা পেশায় একজন শিক্ষক। এমপিওভুক্তি না থাকায় তিনি যখন আর্থিক টানাপড়েনে ছিলেন, এরই একপর্যায়ে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে তিনি কলাগাছের বিভিন্ন অংশ থেকে আঁশ উৎপাদন করে সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। আঁশ উৎপাদন করে এখন তার মাসিক আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানান এই শিক্ষক। তার এই সাফল্য দেখে অনেকে এখন এ কাজে এগিয়ে আসছেন। জেলার হরিপুর উপজেলার কৃষক আবদুর রশিদ ও কবিরুল জানান, কলাগাছ থেকে আঁশ উৎপন্ন হয়, এ কথা তারা জীবনে শোনেননি। এটি জানার পর প্রথমদিকে তারা খুবই অবাক হয়েছিলেন। তারা জানান, কলাবাগান থেকে কলার কাঁদি কেটে নিয়ে এতদিন গাছ দূরে ফেলে দিতে হতো। কিন্তু এখন ‘অপ্রয়োজনীয়’ সেই গাছগুলো বিক্রি করে বাড়তি আয়ের পথ পেয়েছেন তারা। হরিপুর, রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায় অনেক কলার বাগান রয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কলাগাছ থেকে আঁশ তৈরি করে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু আঁশ তৈরির মেশিনের দাম বেশি। লাখ টাকারও বেশি দামে এই মেশিন কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া মেশিন কিনে কলাগাছ থেকে আঁশ উৎপাদনের পর বিক্রির নিশ্চয়তা থাকতে হবে শতভাগ। কারণ এগুলো কিনে নেয়ার আরো প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে হবে। উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সম্ভাবনাময় এই শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 + eighteen =