ব্যর্থতার দায় নিল পুলিশ

0
786

নগরীর কর্ণফুলীর শাহমীরপুরে একই পরিবারের চার মহিলাকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
বারো দিন পার হয়েছে কিন্তু ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা যায়নি। তিন

যুবককে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা জড়িত কি না তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে পুলিশ। ঘটনার পর এ কয়দিনে ১৮ থেকে ২০ যুবককে পুলিশ আটক করে থানায় আনলেও সন্দেহভাজন তিন জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। বাকীদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
মামলা নিতে গড়িমসি, আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া, লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা উদ্ধার করতে না পারাসহ প্রতিটি পর্যায়ে পুলিশের ব্যর্থতা রয়েছে। গতকাল সোমবার কর্ণফুলী থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বন্দর জোনের উপ–কমিশনার (ডিসি) হারুন–উর–রশিদ হাযারী। পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার ওই কর্মকর্তা বলেন, থানার ওসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করা হবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে ডিসি হারুনুর রশিদ দাবি করেন, মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে কর্ণফুলী থানার ওসির কোনো ধরনের অবহেলা ছিল না, বরং বাদী তথ্য গোপন করায় এমনটি হয়েছে। তার এ বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের তোপে পড়েন। কর্ণফুলী আর পটিয়া থানায় ঘোরাঘুরি করে পুলিশের প্রতি অনেকটা আস্থা হারিয়ে ছিলেন ঘটনার শিকার পরিবারের লোকজন। পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়। সাংবাদিকদের হাতে পুলিশের দেয়া লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ১৩ ডিসেম্বর রাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত তিনঘণ্টা ধরে শাহমীরপুর গ্রামের উক্ত বাড়িতে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। তারা উক্ত ঘরের বৃদ্ধা ও শিশুকে জিম্মি করে একই পরিবারের চার নারীকে ধর্ষণ করে। লুট করেছে প্রায় আট ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৮৭ হাজার টাকা। দুই তিনদিন পর তারা বিয়ষটি ডাকাতির ঘটনা থানায় জানালেও ধর্ষণের বিষয়টি বলেনি। বড় উঠান পটিয়া থানায় হওয়া তাদেরকে সেখানে পাঠানো হয়। পরে ১৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে দশটায় তারা থানায় মামলা করতে আসলেও আবারো ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং পরদিন এসে মামলা করবেন বলে জানান। মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি অস্বীকার করা হয় পুলিশের বক্তব্যে।
পুলিশের লিখিত বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোন মিল না থাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন–উর–রশিদ বলেন, পুরো ব্যাপারটিতে পুলিশের ‘আংশিক’ ব্যর্থতা ছিল। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাদের এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল। আমি এখানে যা পেয়েছি তা পুলিশ কমিশনারকে জানাবো।
ঘটনার বারোদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনও ঘটনায় জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি ধর্ষিতাদের আলামতও নষ্ট করা হয়েছে– এসব বক্তব্যের জবাবে হারুন–উর–রশিদ হাযারী বলেন, এ পর্যন্ত তিনজন সন্দিগ্ধ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথম গ্রেপ্তারকৃত আসামি আবুকে ভিকটিম পরিবারের লোকজন শনাক্ত করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তাই তাকে আদালতে পাঠিয়ে টি–আই প্যারেডের (শনাক্তকরণ) আবেদন করা হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর টি–আই প্যারেড হবে।
লিখিত বক্তব্যের বাইরে হারুন–উর–রশিদ হাযারী বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানে না বলেও দাবি করেছে। এরপরও কেন তাদের এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম গ্রেপ্তার আবুর সঙ্গে ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের অনেক মিল পাওয়া গেছে।
পুলিশের তদন্তের দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো আর সব বিষয়ে তদন্ত করতে পারব না। তবে পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং পেশাদারিত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল, সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী) জাহিদুল ইসলাম, কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুল মোস্তফা ও পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসান ঈমাম।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তারা। ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার পর ধর্ষিতারা থানায় আসলে কেন মামলা না নিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়, ধর্ষণের আলামত কেন জব্দ করা হয়নি কিংবা ধর্ষিতাদের কেন মহিলা পুলিশ দিয়ে ঘটনার বর্ণনা নেওয়া হয়নি – প্রশ্নের জবাব দেননি তাঁরা। গত ১২ ডিসেম্বর কর্ণফুলী উপজেলা বড় উঠান এলাকায় একই পরিবারের চার নারী ধর্ষিতা হন। ডাকাতরা ধর্ষণশেষে নগদ ৮৭ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এ ঘটনার পাঁচদিন পর ভূমি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ মামলা নেয়। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + 2 =