পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা উন্মুক্ত কয়লার ডিপো কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে

0
660

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে খোলা স্থানে কয়লার ডিপো গড়ে তোলা হয়েছে। জাহাজ থেকে কয়লা খালাস, পরিবহন ও বিপণন– সবই চলছে খোলা পরিবেশে। কয়লা ছাড়াও পাথর ভাঙা হচ্ছে মেশিনে। কয়লা ও পাথরের ধুলোবালি এবং পাথর ভাঙার মেশিনের শব্দে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

তবে কয়লার ডিপো কর্মকর্তাদের দাবি– খনিজ কয়লা পরিবেশ দূষণ করে না। পরিবেশ অধিদপ্তর বলেছে. ‘খোলা অবস্থায় কয়লা রাখা ও পরিবহন করা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।’ পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, খোলা অবস্থায় কয়লার স্তূপ রাখা, জাহাজ থেকে খালাসের সময় চট দিয়ে ঘিরে রাখা ও পরিবহনের সময় ট্রাকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখলে পরিবেশ দূষণ কিছুটা রোধ করা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ–পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা পূর্বকোণকে বলেন, ‘নিজের কার্যক্রমে অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। পরিবেশ দূষণ হয় এমন কাজও করা যাবে না।’ কয়লার ডিপোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরে দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের কপি পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাড়ে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় খোলা স্থানে বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে কয়লা, পাথর ও বালুর ব্যবসা। সেতু নিচে নদীর তীর, চলাচলের রাস্তা ও সরকারি জায়গায় চলছে এসব ব্যবসা। কয়লার ডিপোর সামনে টিনে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। এতে দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত উন্নতমানের কয়লা সুলভমূল্যে বিক্রয় করা হয়। মাঝিরঘাট স্ট্যান্ডরোডের আমদানি, রপ্তানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সাহারা এন্টারপ্রাইজের নামে সাইনবোর্ডটি টাঙানো হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ– কয়লার ডিপোর কারণে আশপাশের লোকজন ও ব্যবসায়ীদের নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। বাতাসে ধুলোবালু আশপাশের ভবন, বাড়ি–ঘর, দোকান–পাট ও মসজিদে কয়লা এবং ধুলোবালু মিশে একাকার হয়ে যায়। জনজীবন অসহনীয় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তাহাজ্জুদ আলী খন্দকার পূর্বকোণকে বলেন, ‘খোলা অবস্থায় কয়লা রাখা ও পরিবহন করা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য আমরা জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর সময় চট দিয়ে ঘেরাও করে রাখার পরামর্শ দেই। কয়লা পরিবহনের সময়ও ট্রাকের ওপর ত্রিপল দিয়ে ঢাকা রাখতে হবে।’ গত শনিবার বিকেল দেখা যায়, একসঙ্গে দুটি কর্গো জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করে নদীর তীরে রাখা হচ্ছে। ৩০–৩৫ জন শ্রমিক খালাস কাজে নিয়োজিত ছিল। জাহাজ থেকে খালাস করে নদীর তীরে খোলা অবস্থায় তা রাখা হচ্ছে। বাতাস ও যানবাহন চলাচলের সঙ্গে কয়লার গুঁড়ি, বালু–পাথরের ধুলোবালুর উড়াউড়িতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রমপ্রায়। কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, কয়লা ও ধুলোবালির কারণে বসবাস কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সাহারা এন্টারপ্রাইজের বিতরণ ও সরবরাহকারী কর্মকর্তা মো. জাবেদ বলেন, কয়লা পরিবহনের সময় ট্রাকের ওপর ত্রিপল দিয়ে ডাকা থাকে। জনবসতি এলাকায় খোলা মাঠে কয়লার ডিপো স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাইডটি আমরা নতুন করেছি। কয়লা উড়াউড়ির কারণে পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ পরক্ষণে অফিসে এসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কাজী নুরুল হাসান বলেন, ‘খনিজ কয়লা পাথরের মতো শক্ত। তা পরিবেশের ক্ষতি করে না।’ কয়লার ডিপোর সঙ্গে একই এলাকায় চলছে পাথর ভাঙার কাজ। পাথর ভাঙার মেশিনের তীব্র শব্দ ও পাথরের ধুলোবালিতে পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। এছাড়াও ইট–বালুর ব্যবসা।
স্থানীয় লোকজন ও একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বালু, কয়লা, পাথরের ব্যবসা করে আসছে। বাতাসে কয়লা, ধুলোবালিতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। ধুলোবালু উড়াউড়ির কারণে আশপাশের ভবনগুলোর বাসিন্দাদের নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। এমনকি কয়লার ডিপো অদূরে অবস্থিত মসজিদেও দরজা–জানালা বন্ধ রাখতে হয়। প্রভাবশালীমহল এসব ব্যবসায় জড়িত থাকায় স্থানীয় লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসলেও প্রশাসনও কানা মামার ভূমিকা পালন করে আসছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 + seven =