শীতের সকাল

9
9592

লেখক : এস ই ইসলাম
পাখিদের কলরব আর গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ার টুপটাপ শব্দ আন্দোলিত করে বাংলার গ্রামীণ জীবন যাত্রাকে। আলস্যের চাদর অবমুক্ত করে কুয়াশার ধূ¤্রজাল চিরে পূর্ব আকাশে সূর্য নিজেকে জানান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠে। কোমল সূর্য রশ্নিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুগুলো মুক্তো দানার মত ঝলমল করে। মনে পড়ে সেই দিনের শীতের ¯িœদ্ধময় গ্রাম বাংলার শীতের সকালকে। শিশির ভেজা মেঠো পথ দিয়ে একদল শিশু খালি পায়ে হেঠে বেড়াচ্ছিল। আমিও তাদের সঙ্গী হলাম। কিছু পথ যেতেই দুচোখ জুড়িয়ে গেল সরিষাক্ষেত দেখে। যেন হলুদের চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কি অপরূপ প্রকৃতি।
ছোট বেলা খুব দূরন্ত ছিলাম। সকালে উনুনে জ্বাল হচ্ছিল খেজুর রস। দৌড় গিয়ে মগ ভরে রস খেয়ে নিলাম। সে যে কি মজা। যেন অমৃতের স্বাদ। এছাড়াও চিতই, পাটিসাপটা, পুলি, কুলি নানা ধরনের পিঠা হত।

 

কুয়াশার চাদর ভেদ করে সিম, কুমড়া, আর লাউসহ নানা রকমের সবজির ফুল যেন মাথা উঁচিয়ে তাদের সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে। গৃহযুদ্ধের খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে শীত উপক্ষো করে খাদ্যের সন্ধানে রাজ হাঁসের দল। শিশিরের পরশে শিম, বরবটি, লাউ আর কুমড়া গাছ গুলো হয়ে উঠেছে আর সতেজ। হাসি খুশি মা জননীর সুনিপুন হাতের খেজুর গুড় আর নারিকেল দেওয়া গরম ধোঁয়া উঠা ভাঁপা পিঠা। তখন আমরা ছিলাম পরম মমতার ¯েœহ ও ভালবাসার এক পারিবারিক অটুট বাঁধনের পরিবারে যা চিরায়ত গ্রাম বাংলার চিরচেনা। শৈশবে আমার শীতের এক আলাদা অনুভূতি ছিল। শীতের সকালে মুখ খুললেই ধোয়া বের হতো যা দেখে অবাক হয়ে যেতাম। ঘুম ভাঙ্গলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইতো না।
যদিও নগর জীবনে শীতের আবেদন আলাদা। গ্রামের চিত্র অনুভব করলে আসে শীতের প্রতিটি পদক্ষেপ আলাদা। গ্রামে মেঠো পথের পাশে তাকালে দেখায় প্রায় প্রতিটি খেজুর গাছের আগায় ঝুলছে ছোট্ট রসের হাড়ি। কত যে খেয়েছি গাছে উঠে ধানের শীষ দিয়ে টেনে টেনে কাঁচা রস। আহ্ সেদিন আর ফিরে পাব না। ফসলের মাঠ জুড়ে সোনালী আভায় সকালে সন্ধ্যা জমে হিম হিম কুয়াশা। এসময় খাল, বিল, পুকুড় শুকিয়ে যায়। কোথাও হাটুজলে আবার কোথাও খট খটে চর জাগে। মাছ ধরা কাজে কিশোর কিশোরীরা মেতে উঠে। খাবারের খোঁজে মাঠেঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে নামে সাদা বকের ঝাঁক। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা ফুলের মত বসে থাকা বকের শুভ্রতা সেও এক অপরূপ দৃশ্য। গ্রাম ও শহরের হাঁট বাজার সবজী, পসারীরা, ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, শালগম, ওলকপি, গাছের টমেটো চোখ জুড়ায়, মন ভড়ায়।
আমাদের গ্রামের থেকে মোটামুটি কয়েক কিলোমিটার দূর গ্রাম্য বাজার। হেটে যেতে হয়। সকালে দাদীর বকাঁ খেয়ে কম্বলের নিচ থেকে উঠে সকালের নাস্তা খেয়ে হেঁটে যেতাম বাজারে। এক কাপ চা খাওয়ার জন্য। তবে চা খাওয়া মূল উদ্দেশ্য ছিল না। মূল উদ্দেশ্য হলো- সকালের মনোরম দৃশ্যটা একটু উপভোগ করা।
বর্তমান ঢাকার দালান কোঠায় সেই অপূর্ব দৃশ্য অনুপস্থিত। সেই দৃশ্য দেখতে যেতে হবে গ্রামের ছোঁয়ায়। শীতের সকালের সেই দৃশ্য আজো আমাকে টানে দূর থেকে গ্রামবাংলার বুকে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × three =