রামগড় বিদ্যুতের আবাসিক প্রকেীশলীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

0
969

শিবব্রত
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে বিদ্যুত অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা গ্রাহক হয়রানিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘোরতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিয়ত ও প্রতিদিন ঘোরতর অন্যায় করলেও ওই আবাসিক প্রকৌশলী মোস্তফা কামালের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও উদাসীন বলে জানায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। বৃহত সংখ্যক এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় বেরিয়ে আসে বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলী মোস্তফা কামালের ঘোরতর অভিযোগ সম্পর্কে।

 

কে এই মোস্তফা কামাল: ২০০৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী রামগড়ে যোগদান করেন এবং অদ্যাবধি তিনি রামগড়ে চাকুরী করে যাচ্ছেন। সরকারী সার্ভিস বিধি অনুযায়ী ৩ বছর পর পর কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মস্থল পরিবর্তন হয়। কিন্তু আবাসিক প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল উক্ত সার্ভিস রুলের অন্তভুক্ত হননি।
মোস্তফা কামালের দুর্নীতি সমূহ: এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায যে, তার প্রতিনিয়িত দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়ম ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অফিসের অন্য কর্মচারীগণ তার উপর ক্ষুব্দ। সোহেল নামে ওই অফিসের এক কর্মচারী মোস্তফা কামালের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় তাকে রামগড় থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
গর্জনতলী গ্রামের অবসর প্রাপÍ শিক্ষক জগন্নাথ পাড়ার সুনীল দেবনাথ তাদের বিদ্যুত বিল লাইন ও মিটারের অসংগতি নিয়ে মোস্তফা কামালের সাথে কথা বলতে তার অফিসে গেলে তিনি তাদের সাথে রুঢ় আচরণ করে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে আবার তাদের ডেকে নিয়ে জন প্রতি এক হাজার টাকা করে দিলে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান ওই মোস্তফা কামাল যা অভিযোগ কারীদের থেকে জানা যায়।
অভিযোগে জানা যায়, মোস্তফা কামালের যোগসাজেসে বিদ্যুত বিভাগের লোকেরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ট্রান্সফরর্মারে ওভার লোডিং সংযোগ দেওয়াতে সৃষ্টি হচ্ছে লোভোল্টেজ যাতে সমস্যায় পড়ছে পুরা এলাকা বাসী। অপর এক অভিযোগে জানা যায় আপদ কালীন সময়ের জন্য মজুদ দুটি ট্রান্সফর্মার বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রকাশ্যভাবে রামগড়ে অবস্থিত প্রাইম ব্যাংক ও নাইটংঙ্গল ডাইগোনস্টিক সেন্টারের জন্য দিয়ে দেয় মোস্তফা কামাল। অভিযোগে আরো জানা যায় ব্যাটারি চালিত তিন চাকার গাড়ি, টমটম বাণিজ্যিক মিটারের পরিবর্তে আবাসিক মিটার এবং লাইন সম্প্রসারণে প্রতি খুটি ২০০০০ টাকা ও সুবিধাজনক স্তানে বৈদ্যুতিক খুটি বসানোর নামে মোট অংকের অর্থ আদায়, মাসিক বরাদ্দ ও লাইন মেরামতের কাজ না করে টাকা আত্মসাত, সামান্য বৃষ্টি বা বাতাসে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, করাত কল, রাইস মিল ও ওয়ার্কশপ থেকে নিয়মিত মাসুরা আদায় ও বৈদ্যুতিক খুটি তে ডিস লাইনের সুযোগ দিয়ে ডিস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় সহ অনৈতিক সুবিধা আদায় করা। উক্ত অভিযোগে আরো জানা যায়, লামকু পাড়ার হোসেন মেম্বার ও তৈচালার ওবায়দুল হক থেকে ও লাইন সম্প্রসারণের কথা বলে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়েছেন যা তাদের অভিযোগে জানা যায়।
বল্টুরাম গ্রামের শ্যামল ত্রিপুরা জানান তার এলাকায় বিদ্যুত সম্প্রসারণের জন্য মোস্তফা কামাল ১০০০০ টাকা দাবি করলে তিনি তাকে উক্ত টাকা দেন কিন্তু পরে এ বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে টাকা ফেরত দেন। তিনি আরো জানান নতুন মিটার বসাতে গেলে গ্রাহকদের হয়রানির সীমা থাকেনা। ৬০০ টাকার মিটারে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত অবৈধভাবে আদায় করেন মোস্তফা কামাল। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অমল লিখিত অভিযোগে জানান যে, অন্যের সুবিধার জন্য মোস্তফা কামাল ১৫০০০ টাকা ঘুষ নিয়ে ১ টি খুটি জোর করে তার বসত ভিটায় বসিযে দিয়েছেন।
সরজমিনে দেখা দুর্নীতির চিত্র: পি ডি বির জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করাতে পাওয়ার ষ্টেশনের সাব সেন্টার টি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায রয়েছে। পি ডি বির কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাকা মার্কেট তৈরী করা হয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিমিয়ে দোকান ঘরগুলো ভাড়াও দেয়া হয়েছে। এই বাণিজ্যিক প্লটগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশে গড়মিল রয়েছে বলে একটি বিশস্ত সুত্রে জানা যায়। পাওয়ার ষ্টেশনের সংলগ্ন জমিতে মার্কেট নির্মাণ করায় ভেতরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতরস্থানে মানুষ সহজে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে ফলে ঘটবে প্রাণহানি সহ অনাকাংিখত ঘটনা যা
এলাকাবাসীর আশংকা ও উদ্বেগের বিষয় বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুতের কতিপয় কর্মচারী জানান সর্বোচ্চ ১০০ ফুট পর্যন্ত দুরত্বে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া যেতে পারে কিন্তু এত কাছে এটা ঝুকিপূর্ণ ও বিপদজনক। সরজমিনে আরো দেখা যায় বৈদ্যুতিক খুটি ছাড়া বেশ কযেকটি স্থানে জীবন্ত গাছে তার বেধে ডালপালার ভেতর দিযে এক-দেড় কিলোমিটার দুরত্বে সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাতাসে তার ছিড়ে গেলে বা ঝুলে গেলে ঘটতে পারে অবর্ণনীয় ঘটনা। অপর একটি সুত্রে জানা যায়, গ্রাহকদের ডিজিটাল মিটার বসাতে বললেও তার নিজ কার্যালয় ও সাব-কোয়ার্টারে রয়েছে সব এ্যানালগ মিটার। অফিস ও স্টাফদের কোয়ার্টারের জন্য দৈনিক ৪০০০ মিটার পানি উত্তোলন করা হয় দুটি মিটার বিহীন বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে যেগুলো সংযোগ রযেছে সাধারণ গ্রাহকদের লাইনে একই সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিনি পানি উত্তোলন বাবদ ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয় যা বছরে দাড়ায় ১৮০০ ইউনিট। এই ইউনিটের মূল্য অজান্তেই পরিশোধ করেন গ্রাহকেরা। আবাসিক প্রকৌশলীর জন্য বাসা বরাদ্দ থাকার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাশের অন্যটি সহ দুটি বাসা ব্যবহার করছেন। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী ১০% শতাংশ বাসা ভাড়া আইন ও তিনি মানছেন না। মিটার রিডার পদে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে ৪ জন স্থলে ৩ জনকে নিয়োগ দেন। সুবল দত্ত, পিতা: শঙ্কর দত্ত গর্জনতলী এই নামে বেতন উত্তোলন হলেও খোজ নিয়ে কাউকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি।
মোস্তফা কামালের সম্পদের বিবরণ: একটি সমর্থিত সুত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ১ যুগের ও বেশি রামগড়ের অবস্থান ও দুর্নীতির সুযোগে রামগড়ে ৩০/৪০ একর টিলাভুমির মালিকসহ নামে বেনামে অবৈধ অর্থ ও সম্পদের অর্থ ও মালিক বনে গেছেন। মাস্টার পাড়া ও নাকাপা এলাকায় বসত জমি, বনজ ও ফলদ বাগান এবং ঢাকার ফতুল্লায় আটতলা বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক।
প্রধান করনিক সুনীল মজুমদার: সুনীল মজুমদার রামগড় বিদ্যুত অফিসের প্রধান করনিক হলেও মোস্তফা কামালের একেবারে কাছের লোক ও দুর্নীতির পরামর্শ দাতা। মোস্তফা কামালের দুর্নীতির সহযোগী হওয়ায় তিনি ও বনে গেছেন অবৈধ অর্থ সম্পদের মালিক আর এরই ধারাবাহিকতায় করনিক সুনীল মজুমদার রামগড় বাজারে বাণিজ্যিক প্লট, জগন্নাথ পাড়ায় জমি, নাকাপায় বনজ ও ফলদ বাগানসহ প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্সের মালিক যা অভিযোগে পাওয়া যায়।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া: রামগড় উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন তার বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সমন্বয় মিটিংএ তার কর্মকান্ডের জন্য তাকে বারবার তিরষ্কার করা হয় কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি শাহাআলম ও উক্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া: মোসÍাফা কামালের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার স্বেচ্ছাচারীতায় অতিষ্ট এলাকাবাসী। তাদের দাবি মোস্তফা কামালকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তাকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হউক। মোস্তফা কামাল জঘন্য দেশদ্রোহী ও বাঙ্গালির কলঙ্ক। এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে জানায় ১০/১৫ বছর এখানে চাকরী করে তিনি দুর্নীতি ও অনৈতিক কজে চ্যাম্পিওয়ন হয়েছে। ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকেও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
প্রকৌশলী মোস্তফা কামালের বক্তব্য: উপরোক্ত দুর্নীতির ব্যাপারে তার কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখেদেন

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × five =