শিক্ষকরা অনশন ভাঙলেন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে

0
511

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন নন এমপিও শিক্ষকরা। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার  একান্ত সচিব সাজ্জাতুল হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, মাউশির মনিটরিং বিভাগের পরিচালক প্রফেসর সেলিম

মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে অনশনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা শিক্ষকদের জানান,  আপনাদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা আপনাদের পৌঁছাতে আমরা এখানে এসেছি। এরপর শিক্ষকরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই চলমান অনশন কর্মসূচি আমরা প্রত্যাহার করে নিলাম। পরে তিনি মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে আমাদের একদিনও অনশন কর্মসূচি করতে হতো না। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এর আগে সকাল থেকেই সরকারের তরফে অনশন ভাঙানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে এমন খবর আসতে থাকে শিক্ষকদের মাঝে। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা অনশনরত শিক্ষকদের অনশন ভাঙান। এমপিওর দাবিতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষকরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল ৬ষ্ঠ দিনে অনশনসহ টানা ১১ দিনের আন্দোলনে ঠাণ্ডা ও ক্ষুধায় একশোর বেশি শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রেস ক্লাবের সামনে ফুটপাথে স্যালাইন লাগিয়ে অনশন কর্মসূচি করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৬শে ডিসেম্বর থেকে ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিন অবস্থান কর্মসূচি এরপর গত ৩১শে ডিসেম্বর থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে। ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিবেন। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশনস্থল ছাড়েনি। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করিনি। আমরা এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছেয়েছিলাম সেটি পেলাম। সরকারি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষরা এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন ২০১৩ সালে। ওই বছরের ১০ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশ পিপার স্প্রে ব্যবহার করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর একই বছরের ১৫ই জানুয়ারি ন্যাম ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি করতে গেলে মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম পাশে পুলিশ বাধা দেয়। সেই বাধা থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। একপর্যায়ে পিছু হটেন শিক্ষকরা। সোবহানবাগের প্রিন্স প্লাজার সামনে অবস্থান করতে চাইলে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে অবস্থান করে। শিক্ষামন্ত্রী এই ঘটনার পর শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ৩ মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। এই আশ্বাস পেরিয়ে যায় দুই বছর। এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমে শহীদ মিনারে সমাবেশ এবং পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন পালন করে নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। সমাবেশ থেকে বলা হয়, সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে এই আন্দোলন চলবে। সরকার আবারো এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেয়। ওই আশ্বাসের পর কেটে যায় এক বছর। এরপর ২০১৬ সালে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবার রাজপথে নামেন শিক্ষকরা। ওই সময় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার আশ্বাস দেয় সরকার। ওই আশ্বাসের পর শিক্ষকরা ২০১৭ সালের জানুয়ারি আবার অবস্থান নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। প্রায় ২৮ দিন অবস্থান করার পর শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ফিরে যান বিদ্যালয়ে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও এমপিও প্রসঙ্গ না আসার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 + sixteen =