হুমকির মুখে মাছের প্রজনন শত শত জাগ দিয়ে মাছ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা : ডাকাতিয়ায় বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার!

0
622

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের অংশসহ তৎসংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীতে নিষিদ্ধ শত শত জাগ আর জাগের ভেতর বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির মৎসব্যবসায়ী ও জেলেরা। নদীতে শত শত জাগের কারণে মাছ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও বিষ প্রয়োগের ফলে মাছের বিচরণসহ হুমকির মুখে পড়েছে

মাছের প্রজনন স্বাস্থ্য। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করলে ও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য বলে মনে করেন নদীপাড়ের সচেতন এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে নদী থেকে কিছু জাগ অপসারণ করেছে বিআইডল্লিউটিএ। তবে নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের বিষয়টি হাজীগঞ্জ উপজেলা মৎস কর্মকর্তার জানা থাকলে ও বিষয়টি নেই জেলা মৎস কর্মকর্তার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুরের মেঘনা মোহনা থেকে শুরু করে জেলার শাহরাস্তি এলাকা পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য রয়েছে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। ডাকাতিয়াকে টিকিয়ে রাখতে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে নদী খনন কাজ শুরু করেছে বিআইডবিøউটিএ। নদীকে বাঁচাতে সরকার উদ্যোগ নিলে ও নদীর পাড়ে এক শ্রেণির মৎস ব্যবসায়ী আর অসাধু কিছু জেলের কারণে নদীর মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। সরেজমিন দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীতে বেশ কয়েক বছর ধরে আইড়, শোল, বোয়াল, টেংরা, পাবদা, রুই-কাতল, ভেদা মাছসহ সকল প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এই সকল মাছ শিকার সকল শ্রেণির লোকদের জন্য উন্মুক্ত থাকলে ও জাগ দিয়ে নদীর দুই পাড় দখল করে একক সুবিধা ভোগ করছে নদীপাড়ের মুষ্টিমেয় কিছু মাছব্যবসায়ী ও জেলেরা। জেলার হাজীগঞ্জের বড়কুল, এন্নাতলী এলাকা, রামচন্দুপুর, প্রতাপপুর এলাকা, ফরিদগঞ্জের মুন্সীরহাট এলাকা, সদর উপজেলার কামরাঙ্গা বাজার এলাকা, ছোট সুন্দর এলাকাসহ তৎসংলগ্ন নদীপাড়ের বাসিন্দা এমন বেশ কিছু লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে তার ভেতরে বিভিন্ন গাছের ডাল আর উপরি ভাগে কচুরিপানা আটকে রেখে বড় জাগ তৈরি করা হয়। জাগের মাছ ভেড়াতে মালিকরা তার মাঝে খাবার দিয়ে দেন। যে মহল একবার জাগের অংশ দখলে নেয়, অলিখিতভাবে সেই মহলের নামে ওই অংশটুকু দখলে হয়ে যায়। আর এভাবে একটি মহলের কাছেই সবসময় নদীর পাড় দখলে থেকে যায়। হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ধেররা এলাকার কয়েকজন জেলে যারা দৈনিক মজুরি হারে অন্যের জাগে মাছ শিকার করে দেন এমন কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে জানান, একবার জাগের জন্য গাছের ডাল আর বাঁশ কিনলে তা কমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয়। এক থেকে দেড় লাখ টাকায় একটি জাগ তৈরিতে খরচ পড়লে এক সিজনে দুইবার মাছ ধরা হলে তার লাভ গিয়ে দাঁড়ায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায়। নদীতে ঠিক কিভাবে মাছ শিকারের সময় বিষ প্রয়োগ করা হয় এমন তথ্য জানান বেশ কয়েকজন জেলে। নদীপাড়ে বাড়ি জাত জেলে এমন কয়েকজন জেলে জানান, মাছ ধরার জন্য জাগের চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে এক ধরনের ঘের তৈরি করা হয়। জালটি নদীর তলদেশ শুরু হয়ে পানির উপরে কমপক্ষে দুই হাত উঁচুতে রাখতে হয় জালের উচ্চতা। জাল দিয়ে ঘিরে ফেলার পর তার ভেতর অর্থাৎ ঘেরের ভেতর থেকে ধরনের গাছের ডাল আর কচুরিপানাকে সরিয়ে ফেলা হয়। একপর্যায়ে এর পর উচ্চতা ঠিক ঘেরটিকে টেনে এর বিস্তৃতি কমিয়ে আনা হয়। ঘেরটি ছোট হয়ে এলে মাছ ধরা শুরু হয়। মাছ ধরার একেবারে শেষ সময় এসে ঘেরের ভিতরে বিষ দেয়া হয়। বিষের ক্রিয়ায় মাছ কিছুটা দুর্বল হয়ে আসলে সেই মাছ ধরতে অনেক সহজ ও সকল মাছ ধরা সম্ভব হয়ে উঠে। এদিকে মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ ধারা-৩ এর বিধিমালায় ৩ (আ) বলা হয়েছে, মাছ ধরার জন্য নদী বা জলাশায়ে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নদী মধ্যস্থ বেড়া, বাঁধ, টিবি এবং অন্য কোনো কাঠামো নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা-৩ এর বিধিমালায় ৩ (গ) বলা হয়েছে পানিতে বিষ প্রয়োগ, কলকারখানার বজ্য পদার্থ নিক্ষেপ করে মৎস্য চারণক্ষেত্র দূষিত করে বা অন্য কোনো মাছ ধ্বংস করা বা সে মর্মে উদ্যোগ গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এ আইন অম্যানকারীদের সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড তবে এক বছরের নিচে নয়। অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। নদীতে বিপুল সংখ্যক জাগ আর জাগের মধ্যে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি জানা রয়েছে। এ কথা স্বীকার করে জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহমুদ মোস্তফা বলেন, জাগে যখন বিষ প্রয়োজ করা হয় তখন যদি ভাটা থাকে ফলে ওই বিষ পানির সাথে ভাটির দিকে নামে। আবার জোয়ারের সময় বিষ দিলে বিষের পানি উজানে চলে যায়। আর বিষের পানি যেটুকু পর্যন্ত যায় সেটুকু পর্যন্ত সব ধরনের মাছ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। একটু ভিন্ন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিরূপায়। আমাদের জনবল সঙ্কট। জাগ উচ্ছেদ করা খুব কঠিন। তবে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা পেলে জাগ উচ্ছেদ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। নদীতে জাগ দেয়া একেবারে নিষিদ্ধ আর বিষ প্রয়োগর বিষয়টি জানা নেই বলে জেলা মৎস কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে বিআইডবিøউটিএ বেশ কিছু জাগ তুলে ফেলেছে। এ বিষয়ে ব্যাপক সচেতনা দরকার বলে আর সাংবাদিকের সহযোগিতা চান এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine + thirteen =