ওসি হুমায়ুন কবির ও মিন্টুর যোগসাজসে চলছে সাধারন মানুষের উপর নির্যাতনের অভিযোগ পরিত্রাণে এলাকায় মানববন্ধন

0
1030

অপরাধ বিচিত্রাঃ
ভোলা লালমোহন থানার ওসি হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারন নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে টাকা আদায়, অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করে চাঁদা আদায়, টাকা না দিলে নির্যাতন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ সহ নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ওসি হুমায়ুন কবির। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক আশির্বাদ পুষ্ট ওসির দাম্ভিকতা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। ওসি বলেন, সরকার আমাদের কথায় চলে, বর্তমান সরকার আমরাই ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছি। ওসি হুমায়ুন কবির দীর্ঘদিন যাবত ভোলা জেলার বিভিন্ন থানায় চাকরির সুবাদে লালমোহন উপজেলার পাশ্ববর্তী উপজেলা তজুমদ্দিন থানায় ওসি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে প্রায় ৬ মাস পূর্বে বর্তমান লালমোহন থানায় কিছু রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে বদলী নিয়ে যোগদান করেন। তজুমদ্দিন থানায় চাকরি করাকালীন ঐ উপজেলার এক রাজনৈতিক নেতার আত্মীয়ের কাছে তার বোন বিবাহ দেন। স্থানীয় ভাবে আত্মীয়তার সুবাদে তিনি ভোলা জেলার কিছু নেতা ও ঐ উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে পুত্রা ওসি নামে পরিচিতি পায়। থানায় কোন ব্যক্তি আইনী সহায়তা নিতে গেলে সাধারন মানুষের সাথে তিনি দুর্ব্যবহার করেন বলে জানান ভুক্তভোগী সাধারন মানুষ। টাকা ছাড়া থানায় কোন জি.ডি কিংবা মামলা নেন না এই কর্তাব্যক্তি। রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে লালমোহন থানা ওসি চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। ওসির দুর্নীতির সাথে হাত মিলিয়ে বর্তমান আরেক দুর্নীতিবাজ ধলীগৌর নগর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিন্টু নদী থেকে জেলেদের নৌকা প্রতি চাঁদা তোলেন ঐ টাকার ভাগ বাটোয়ারা কিছু অসাধু পুলিশদেরকে দিয়ে থাকেন বলে জানা যায়। সরোজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাত ৮ ঘটিকার সময় ওসির নির্দেশে লালমোহন থানার এসআই জহির ও এএসআই দেলোয়ার, এএসআই মাসুদসহ সঙ্গীয় ফোর্স সিভিল ড্রেসে বেলায়েত হোসেন ভুইয়ার বাড়ীর পশ্চিম পাশে কালভার্টের কাছে বেলায়েত হোসেন ভুইয়ার ভাতিজা জসিমকে আটক করেন। এ সংবাদ শুনে বেলায়েত হোসেন ভুইয়াসহ এলাকার লোকজন তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং এসআই জহিরকে তার ভাতিজাকে গ্রেফতার করার কারণ জানতে চাইলে এসআই জানান তাদের কাছে তথ্য আছে, জসিমের কাছে ইয়াবা ট্যাবলেট (মাদক দ্রব্য) আছে। উপস্থিত লোকজন এসআইকে ইয়াবা ট্যাবলেট দেখাতে বলেন কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে কোন ইয়াবা ট্যাবলেট দেখাতে পারেন নাই। তখন সঙ্গীয় ফোর্স দেলোয়ার ও সঙ্গে থাকা অন্যান্য পুলিশ বলেন ওসি সাহেবের কাছে রেকর্ড আছে জসিম ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত তাকে থানায় নিয়ে যেতে হবে এই কথা বলে জসিমকে থানায় নিয়ে যায়। ঐ দিন রাত ৯ ঘটিকার সময় বেলায়েত হোসেন ভুইয়া লালমোহন থানায় গেলে ওসি তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। রাতভর জসিমকে শারীরিক নির্যাতন করেন এবং পরদিন দুপুরে ১০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে একটি মাদকদ্রব্য মামলা করে ভোলা আদালতে প্রেরণ করেন। স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান মিন্টুর জোগসাজসেই ওসি জসিমকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করেন এবং স্থানীয় কাউকে ইয়াবা ট্যাবলেট দেখাতে পারেন নাই। কিন্তু ঐ মাদকদ্রব্য মামলায় যাদেরকে স্বাক্ষী করেছেন তারা পাশ্ববর্তী লর্ডহাডিঞ্জ ও চরভুতা ইউনিয়নের বাসিন্দা। নির্বাচনের সময় ঐ স্বাক্ষীগন বেলায়েত হোসেন ভুইয়ার ছেলে জাকির মেম্বারের হাতের কব্জি কেটে নেয়। স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন জসিমকে গ্রেফতারের সময় কোন ইয়াবা ট্যাবলেট না দেখাতে পারলেও পরে কিভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট তার কাছে পাওয়া যায় এবং স্থানীয় কাউকে স্বাক্ষী না বানিয়ে জাকির মেম্বারের হাতের কব্জি কাটা সন্ত্রাসীদেরকে পুলিশ সাজানো স্বাক্ষী বানিয়েছেন। বিভিন্ন সময় ওসি নিরাপরাধ লোকদেরকে বিনা অভিযোগে থানায় ধরে নিয়ে এসে মিথ্যা মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কোনো মূল্যায়ন নেই। সেখানে চলছে মিন্টুলীগের প্রভাব। গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হেদায়েত ইসলাম ওরফে মিন্টু চেয়ারম্যানের বিপক্ষে অবস্থান করায় আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অত্যাচার নির্যাতন করছে। চলছে পুলিশি হয়রানী। গত বৃহষ্পতিবার ইউনিয়নের চরমোল্লাজি গ্রামের নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত ও মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ করেন লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ বেলায়েত হোসেন ভুঁইয়া ও শতাধিক নেতা-কর্মী। সংবাদ সম্মেলনে মিন্টু চেয়ারম্যান পক্ষের মিথ্যা মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন ও পুলিশি হয়রানি থেকে মুক্তির দাবি করেন। একই দাবিতে ইউনিয়নের চরমোল্লাজি গ্রামে মানববন্ধন করেছে নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা। মো. বেলায়েত হোসেন ভুঁইয়া বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ে আট ভোটের মধ্যে ছয় ভোট পড়ে তৎকালীন ও বর্তমান চেয়ারম্যান হেদায়েত ইসলামের বিপক্ষে। সেখানে সর্বোচ্চ ভোট পায় ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ (উত্তর) সভাপতি মাকসুদুর রহমান। সেটি কেন্দ্র থেকে কিভাবে পাল্টেছে জানি না। মনোনয়ন পেয়ে তিনি ৯টি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদ বিক্রি করেছেন ১০-১১ লাখ টাকায়। তাঁর (বেলায়েত) ছেলে ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন ভুইয়া টিউবওয়েল প্রতীকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করে। তাঁর বিপক্ষে প্রার্থীর কোনো ভোট ছিল না। জাকিরের জনপ্রিয়তা দেখে মিন্টু চেয়ারম্যান ও তাঁর বাহিনী তাঁর প্রার্থীকে জেতাতে তাঁর ছেলে ও তাঁর ওপর কয়েক দফা হামলা করে। ২০ মার্চ প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে ছেলে জাকির হোসেন ভুইয়ার কব্জি কেটে দেয়। শুধু কব্জি কেটে ক্ষ্যান্ত হয়নি। জাকির হোসেন বিপুল ভোটে জিতলেও তাঁর কর্মীদের একের পর এক মাছ চুরি, মেশিন চুরি, মাদক মামলায় জড়িয়ে আসামী করা হচ্ছে। রাত বিরাতে কারণে অকারণে পুলিশ হয়রানী করছে; জঙ্গি আখ্যা দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। পুলিশ তাদের লোকজনকে আটক করে টর্চার করছে। তার পক্ষের কর্মীরা অসহায় দরিদ্র হলেও পরিষদ থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। সাবেকে আওয়ামী লীগ সাংসদ মরহুম মোতাহার হোসেনের জামাতা ও লালমোহন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. শাহাবুদ্দিন ভুইয়া বলেন, তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তাঁদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। আওয়ামী লীগের জন্ম থেকে তাঁর পরিবার দলটির সমর্থন করে আসছে, আজ তাঁদের নিরাপত্তা নেই। রাজাকার আলবদরের সমর্থকরাও মিন্টু চেয়ারম্যানের নিকট সুবিধা নিচ্ছে তাঁকে সমর্থন করার কারণে। ধলীগৌরনগরের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য হেদায়াত ইসলাম মিন্টু তাঁর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। চেয়ারম্যান বলেন, তিনি যদি আওয়ামী লীগ কর্মীদের না ভালোবাসেন, তাহলে কে ভালোবাসবে! এমন লোক ভোলায় নেই। লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 4 =