
সম্প্রতি পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ, ‘সুখসাগর’ পেঁয়াজ চাষ করে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকের খরচের টাকা পর্যন্ত ঊঠছে না। এক হিসেবে দেখা যায়, এ বছর এক বিঘা জমিতে ভারতীয় সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করতে, সব মিলিয়ে চাষিদের খরচ হয়েছিল ৩০-৩২ হাজার টাকা। কিন্তু যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তা বিক্রি করে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি ঘরে আসবে না। মেহেরপুরের বড়বাজার নামের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সুখসাগর পেঁয়াজ এখন পাঁচ থেকে আট টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মিলছে আট থেকে ৯ টাকা। কৃষক পাচ্ছেন মাত্র কেজি প্রতি চার থেকে ছয় টাকা। মণ প্রতি (৪০ কেজি) দাম মিলছে ১৬০ থেকে ২৬০ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কৃষকদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। দেশে বড় আকারের পেঁয়াজের চাহিদা মিটত ভারত থেকে আমদানি করে। সেই চাহিদা মেটাতে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার কৃষকেরা ভারতের সুখসাগর পেঁয়াজ দেশেই চাষ শুরু করেন। জানা যায়, ফলন বেশি হওয়ায় গত এক দশকে আবাদ অনেক বেড়েছে। অনেক কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে সুখসাগরের কল্যাণে। তবে এ বছর সেই সুখসাগরেই ডুবতে হচ্ছে চাষিদের। এ বছর দাম অনেক কমে যাওয়ার কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের অবাধ আমদানি। ফলে ঢাকার পাইকারি বাজারেই সুখসাগরের দাম নেমেছে ১০ টাকায়। এ জাতের পেঁয়াজ সাধারণভাবে ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। তাই লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মতে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত হয়েছে ১৭ লাখ টন পেঁয়াজ। ডিএইর হিসাবে উৎপাদন ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। বাকি পেঁয়াজ মূলত ভারত থেকেই আমদানি করা হয়। দেশের বাজার ঠিক রাখতে ভারত মাঝে মাঝে পেঁয়াজের নূন্যতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়। আবার উৎপাদন বেশি হলে তা তুলে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানিতে কখনো কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় না। বরং পেঁয়াজের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে পেয়াজের আমদানি বেড়েছে।
পরিশেষে, চাষিদের কথা বিবেচনায় রেখে সুখ সাগর পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। তাহলেই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
২. প্রিয় পাঠক, আসছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ সন। নতুন বর্ষে প্রতিটি কৃষকের ঘরে আসুক প্রাপ্তির বারতা। মুছে যাক যত সব জরা ও গ্লানি। আমাদের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়িদের প্রতি কৃষিবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে রইল ‘শুভ বাংলা নববর্ষ-১৪২৩’।