Site icon Aparadh Bichitra

পরিবেশ অধিদপ্তরে অন্ত ঃ কোন্দল প্রকাশ্যে

অপরাধ বিচিত্রাঃ
নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম। দুই শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে চাপা দ্ধন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। তবে বর্তমানে তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন কার্যালয়ে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের অপসারণ চেয়ে ব্যানার টানিয়েছেন নিজস্ব কর্মীরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে অধিদপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে কাজ করতে হলে বিশেষ কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। তা দু-এক বছরে অর্জন হয় না। প্রেষণে যারা আসেন, তারা তিন বছরের মধ্যেই আবার চলে যান। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবেশ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। বদলি হয়ে যাওয়ার ফলে অর্জিত জ্ঞান কোনো কাজে আসে না। এখানে নিজস্ব লোকবল থাকলে অর্জিত অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে কাজে লাগত। অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নিজেদের ইচ্ছায় নয়, বরং সরকারের ইচ্ছায়ই তারা এখানে আসেন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিশেষ দক্ষতা থাকে, যার মাধ্যমে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমান সাফল্য থেকেই বিষয়টি মূল্যায়ন করা যায়। শুধু অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা থাকলে অনিয়ম স্থায়ী হতো। পরিবেশ-সংক্রান্ত কার্যক্রমের গতি ধরে রাখতেই প্রেষণে নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এতে অধিদপ্তরের নিজস্ব লোকজন পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন। এ দ্বন্ধ কাজের পরিবেশও নষ্ট করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রাটফর্ম পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের পদোন্নতিসহ  প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করে আসছেন তারা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক করে অ্যাসোসিয়েশন। ওই বৈঠকে তারা প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে সদর দপ্তরসহ সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে ব্যানার টানানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পর তারা ব্যানার টানিয়ে দেন। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণারও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। জানা গেছে, বর্তমানে অধিদপ্তরের ১৩টি পরিচালক পদে প্রশাসন ক্যাডারের প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা রয়েছেন। অন্যদিকে অধিদপ্তরের নিজস্ব পরিচালক রয়েছেন ছয়জন। তারা সবাই উপপরিচালক; চলতি হিসেবে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া উপপরিচালক পদে প্রশাসন ক্যাডারের ১০ কর্মকর্তা প্রেষণে কর্র্মরত। বিপরীতে অধিদপ্তরের নিজস্ব উপপরিচালক রয়েছেন ছয়জন। মহাপরিচালক পদের দায়িত্বেও রয়েছেন প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। যদিও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বিধিতে প্রেষণে ও পদোন্নতির মাধ্যমে মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন উচ্চপদে পদায়নের সুযোগ রয়েছে। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, নিয়োগবিধি অনুযায়ী মহাপরিচালকের একটি পদ ও নতুন সৃষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সাতটি পদ প্রেষণে পদায়নযোগ্য। কিন্তু বর্তমানে পরিচালক ও উপপরিচালক পর্যায়ের অনেক পদে প্রেষণে পদায়ন হয়েছে। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে একই পদে কর্মরত। এতে আরো বলা হয়, উপপরিচালকরা ২১ বছর চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করলেও তাদের পদোন্নতির প্রস্তাব প্রেরণ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা ১০-২২ বছর পর্যন্ত চাকরি করে পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। উপপরিচালকের ১৮টি শূন্যপদ পূরণে পদোন্নতির প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তাদের পদোন্নতি না দিয়ে প্রেষণে নিয়োগের মাধ্যমে শূন্যপদগুলো পূরণ করা হচ্ছে। ফলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত হচ্ছে। এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কারিগরি জ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতাবিহীন কর্মকর্তা প্রেষণে কর্মরত থাকায় এ অধিদপ্তর প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত হতে পারছে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের পদোন্নতিযোগ্য সব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হলে এ অধিদপ্তরের বিরাজমান হতাশা দূর হবে ও কর্মোদ্দীপনা বাড়বে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বন্ধ নিরসনে কাজ করছি। পরিবেশ অধিদপ্তরে জনবলের সংকট আছে। সে কারণেই অনেককে পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। প্রেষণে যারা আসছেন তারা অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদ দখল করে আছেন, বিষয়টি তেমন নয়। সবাইকে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব না হলেও বেশ কয়েকজনকে দেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরে জনবল বাড়লে প্রশাসন থেকে আনা হবে না। নিজেদের মধ্য থেকেই পদোন্নতি হবে।