ভালো থাকার আছে যে উপায়

0
1887

ড. মো. সহিদুজ্জামান

সহযোগী অধ্যাপক প্যারাসাইটোলজি বিভাগ বাংল

পিএইচডি করতে জার্মানি গিয়েছি। ড্রেসডেনের এক অ্যাপার্টমেন্টে চার বাংলাদেশি থাকি। শহরে সবই নতুন, রাস্তা-দোকানপাট কিছুই ঠিকঠাক জানি না। অনেক খুঁজে রেলস্টেশন-লাগোয়া একটা দোকান পেলাম, দেশীয় খাবারদাবার পাওয়া যায়। সবাই খুশি- যাক কিছুটা হলেও দেশের খাবারের স্বাদ তো পাওয়া যাবে! বাংলাদেশি বড় বড় চিংড়ি দেখে সবচেয়ে ভালো লাগল। মহা আনন্দে সেই চিংড়ি নিয়ে ফিরলাম। সবাই মিলে আয়োজন করে রান্না করলাম। খাওয়ার সময় বাধল বিপত্তি। চিংড়িতে কামড় দিয়ে মনে হলো বালি বা পাথর কামড়াচ্ছি। রান্নার দোষ? আরেক দিন অন্য দোকান থেকে চিংড়ি কিনলাম- একই ফল। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়ি মাছ নাকি বালিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এ ভেজাল মাছ জার্মানিতে ঢুকল কিভাবে? এক সহপাঠী বলল, জার্মানরা সম্ভবত ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পর্যন্ত ভাবতে পেরেছিল, মাছে যে পেরেক বা বালিও ঢোকানো যায়, অতটা ওদের মাথায় ঢোকেনি। কয়েক মাস যেতে না যেতেই খবর এলো- বাংলাদেশি চিংড়ি নিষিদ্ধ হয়েছে। কারণ তাতে নাইট্রোফুরান নামের এক ধরনের ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত বা বাজারে পাওয়া যায় এমন বেশির ভাগ খাবারই অনিরাপদ অথবা বিভিন্ন মাত্রায় ভেজাল মেশানো থাকে। খাবার প্রস্তুত করা থেকে খাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই এই ভেজাল মেশানো হয়। প্রস্তুতকারক, প্রক্রিয়াজাতকারক, সরবরাহকারী, সবাই এই ভেজাল প্রক্রিয়ায় জড়িত। এসব খাবারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও বিষাক্ত কৃত্রিম রং মেশানো হয়। পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে এগুলো হয়ে ওঠে বিষাক্ত খাবার। এখন দেখা যাক অন্যান্য দেশ কিভাবে এসব না করেও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তার মানুষজনকে খাদ্য দিচ্ছে।

মাছ

পচন ঠেকাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছে ফরমালিন মিশিয়ে থাকে, সবার জানা। ফরমালিন আতঙ্কে মাছটি কোন পরিবেশে বা কী খেয়ে বড় হয়েছে, তা নিয়ে আমরা মাথাই ঘামাই না। অথচ ক্ষতিকর খাবার ও বিষাক্ত পরিবেশে বড় হওয়া মাছ ফরমালিনের চেয়ে কোনো অংশেই কম ক্ষতিকারক নয়। মাছের খাদ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত ট্যানারি বর্জ্য ও অ্যান্টিবায়োটিক। এসব খাওয়া মাছে মার্কারি, লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম থাকতে পারে। এসব বিষাক্ত পদার্থ ক্যান্সার ও কিডনির সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের কারণ।

বাইরে মাছকে খৈল, ভুসি, চালের কুঁড়া, ভিটামিন, মিনারেল, আটা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানো হয়। প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক রেখে মাছের বয়সভেদে এসব খাবারে অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান যোগ করে তারা। আর মাছের খাবারে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকও তারা ব্যবহার করে না, কারণ অ্যান্টিবায়োটিকে পশুপাখির দ্রুত বৃদ্ধি হলেও মাছের হয় না। আমাদের দেশেও প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায় এই খাবার তৈরি করা সম্ভব।

মাছের খাদ্য হিসেবে অধিকতর প্রোটিনসমৃদ্ধ সয়াবিন মিল ব্যবহার করে অনেক দেশ। তবে এটি ব্যয়বহুল। অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ আবার মাছির লার্ভা উৎপাদন করে মাছকে খাওয়ায়। আমরাও এটা করতে পারি। অনেক দেশে গম, ভুট্টা, কাসাভা বা শিমুল আলুও মাছের খাবার। মোট কথা, দেশীয় উপাদান দিয়েই মাছের স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার তৈরি করা সম্ভব। বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন নেই।

আর মাছ যেহেতু দ্রুত পচনশীল, কাজেই দেশব্যাপী মাছ সংরক্ষণের উপযোগী পর্যাপ্ত বরফকল ও হিমঘর না করলে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকানো যাবে না। প্রথমে বিভিন্ন বন্দর ও বাজার এবং মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত হিমাগার ও বরফকল করতে হবে। দেশের ভেতরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাছ পরিবহনে সাধারণত বড় ও মাঝারি বরফবাক্স ব্যবহার করা হয়। ফলে মাছ সংরক্ষণে ছোট বরফবাক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বরফসহ প্রায় ৪০-৫০ কেজি মাছ সংরক্ষণ করা যায়। জিআই শিট, কর্কশিট, লোহার অ্যাঙ্গেল, ফ্ল্যাটবার, শেকল, আংটা, কবজা, রং, রশি, ইত্যাদি ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে এসব বাক্স তৈরি করা সম্ভব। আকারভেদে এসব বাক্স তৈরি করতে আড়াই থেকে সাত হাজার টাকা লাগবে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব বাক্স ব্যবহার করে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের মাছ নষ্ট হওয়া থেকে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার ক্ষতি কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ কে এম নওশাদ আলমের এ প্রযুক্তি এখন আফ্রিকায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে।

পোল্ট্রি

মুরগির খাবারে আছে ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত ট্যানারি বর্জ্য এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। মাংস ও ডিমের মাধ্যমে এসব চলে যাচ্ছে মানবদেহে। এসব অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে আসা ব্যাকটেরিয়া মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। একটা ব্রয়লারের ৪২ দিনে যে ওজন হওয়ার কথা, তা ২৮-৩১ দিনেই করা হচ্ছে। ১০-১২ দিনের সময় ও খরচ বাঁচাতে পোল্ট্রির খাবারে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া আরো কী কী রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, আমাদের জানা নেই। তবে সেটি যদি স্টেরয়েডজাতীয় কিছু হয়, তাহলে তা হবে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

ইউরোপ-আমেরিকায় পোল্ট্রি খাবারে যেকোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেখানে পোল্ট্রির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ভেষজ। বাংলাদেশেও ভেষজ গাছ, প্রোবায়োটিকস, প্রিবায়োটিকস ও অর্গানিক এসিড ব্যবহার করা যায়। কিছু কিছু ঔষধি গাছ অ্যান্টিবায়োটিক বা প্রোবায়োটিকের মতোই ব্রয়লারের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এসব ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে হলুদ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, সিনামোন, নিম, অ্যালোভেরা, তুলসী ইত্যাদি। এ ছাড়া খাবারে এসব ঔষধি গাছের ব্যবহার পোল্ট্রির রুচি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ডিমের উৎপাদনও বাড়ায়। এসব প্রাকৃতিক খাবার গবাদি পশুর ওপর ব্যবহারের ফলে ত্বরান্বিত হয় বৃদ্ধি ও বাড়ে দুধ উৎপাদন। সহজলভ্য এসব প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি পোল্ট্রি ফিডের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, খরচও কম। হারবাল ফিড এডিটিভস নামের প্রাকৃতিক এসব পোল্ট্রি ও এনিম্যাল ফিড ভারত, চীন, মিসর, স্পেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আমাদের দেশে সরাসরি মুরগির খাঁচা থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়। ডিমের খোসায় লেগে থাকে বিষ্ঠা। এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যেমন- ইকোলাই, স্যালমোনেলা থাকে। মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অথচ বাইরে ডিম সংগ্রহ করে ক্লোরিনেটেড পানিতে ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করে বাজারজাত করা হয়। আর গরু মোটাতাজাকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে মাল্টিভিটামিন ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়।

ফলমূল

ফলমূলের বৃদ্ধি বাড়াতে আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয় হরমোন, পাকাতে কার্বাইড ও ইথিলিন এবং পচন রোধে ফরমালিন। পোকা দমন করতে ইদানীং নারকেলেও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফলমূলে এসব ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থের ব্যবহার কমাতে সরকারিভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, বিষাক্ত এসব ফলমূল শনাক্ত করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। সর্বোপরি এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

প্রাকৃতিক উপায়ে ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করে এসব ফলমূলের সেলফ লাইফ বা সংরক্ষণ সময় বাড়ানো যায়। এ ক্ষেত্রে ফল উত্তোলন বা সংগ্রহের সময় রোগাক্রান্ত ফলমূল আলাদা করতে হবে, গায়ে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় এ রকম ছত্রাকনাশক বা জীবাণুনাশক দিয়ে ফলমূলের বাইরের আবরণ মুছে নিতে হবে। সংগ্রহ ও পরিবহনের সময় যাতে কেটে বা থেঁতলে না যায় সে জন্য বাইরের প্রায় সব দেশই আর্দ্রতাশোষক নরম ফোম বা নেট ব্যবহার করে।

সংগ্রহ করা ফলমূল পরিষ্কার, শুষ্ক ও ঠাণ্ডা জায়গায় রেখে কিছুদিনের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া দ্রবণ আকারে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর জৈব পদার্থ ফলমূলের গায়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বাংলাদেশি এক গবেষক সম্প্রতি চিংড়ির খোসা থেকে এ রকম একটি দ্রবণ তৈরি করেছেন। দ্রুত ফল আসার জন্য আমাদের দেশে আনারসে অক্সিমজাতীয় হরমোন ব্যবহার করা হয়। এসব না করে সুষম খাদ্য দিয়েও ফল আসার সময় কমানো যায়। তা ছাড়া একই জাত দিয়ে একই সময়ে উৎপাদন না করে বছরের বিভিন্ন সময়ে চাষ করা যায় এ রকম জাত নির্বাচন করে চাষিদের বিতরণ করা যেতে পারে।

শাকসবজি

আমাদের দেশে শাকসবজি উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক সার। কখনো বা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ছাড়াই, কখনো কীটনাশক বিক্রেতার পরামর্শে এবং কখনো বেশি সতর্কতার কারণে একই ফসলে এক বা একাধিক কীটনাশক ব্যবহার করছে চাষিরা। ফলে একদিকে যেমন উপকারী ও অপকারী উভয় ধরনের কীটপতঙ্গ মরে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণিসম্পদ। এসব কীটনাশক ব্যবহারে কীটপতঙ্গের প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রজনন বৃদ্ধি পেতে পারে।

কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকদের সমিতি গঠনের মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সেবা প্রদান করা যেতে পারে।

বিভিন্ন শস্যের জন্য শস্য অঞ্চল নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে শস্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদের মানসম্মত সেবা প্রদান, শস্যের জাত নির্বাচন ও গাইডলাইন তৈরি করে সে অনুযায়ী শস্য উৎপাদন, সঠিক সময়ে সঠিক কীটনাশকের ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এগ্রো ইকো সিস্টেম অ্যানালাইসিসের ধারণা প্রদানের মাধ্যমে ফসলের উপকারী ও অপকারী পোকামাকড় চিনতে সহায়তা করতে হবে।

অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাষ সাপেক্ষে ফসল উৎপাদনের আগেই ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফসল সংরক্ষণের জন্য অঞ্চলভিত্তিক হিমাগার নির্মাণ করাই ভালো। তবে বাংলাদেশে উদ্ভাবিত বিশেষায়িত কিছু পদ্ধতি যেমন- পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাসহ ছনের ঘর, বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার ইত্যাদি মাঠপর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে দেখা যেতে পারে। নতুন টেকসই প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ থাকে না, কারণ তারা পুঁজিটুকু হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না। তাই ভর্তুকি সাপেক্ষে টেকসই প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষকদের এগিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।

এগ্রোপ্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শস্য প্রক্রিয়াজাত করে দেশ ও বিদেশে রপ্তানি করার উদ্যোগ নিতে হবে। এতে কৃষকরা আরো উৎসাহিত হবে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, চীন, ভারত, ভিয়েতনামকে অনুসরণ করতে পারি।

আইনকানুন ও যন্ত্রপাতি

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা আইনের তুলনায় বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আইন কোনো অংশে কম নয়, বরং অনেকাংশে শক্তিশালী। এসব দেশে খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থ মেশানোর প্রক্রিয়াও প্রায় একই রকম। তবে আইনগত বিষয়ে পার্থক্য আছে। যেমন ইন্দোনেশিয়ায় খাদ্য আইনে জিএম ফুডের (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড) বিষয়ে উল্লেখ আছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে কোনো খাদ্যদ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের আগে খাদ্যের গুণগত মানের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের সামঞ্জস্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখে তারপর অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। আবার মালয়েশিয়ার খাদ্য আইন তেমন কঠোর নয়, কিন্তু প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবলের অভাব। কয়েক মাস আগেই ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্রের কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট থেকে পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। শুধু ঢাকা শহরে ভেজাল পরীক্ষা না করে প্রতিটি জেলা বা বিভাগে এ কাজ করতে হবে। এ জন্য দরকার আধুনিক গবেষণাগার যা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত হবে। বাইরের দেশে এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে কাজ করে। যেমন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চিংড়ি মাছে নাইট্রোফুরান নামে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছিল বেলজিয়ামের গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের দেশেও খাদ্যদ্রব্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি গবেষণাগার থাকা জরুরি। কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করার জন্য থাকবে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রেগুলেটরি বডি, যারা আইনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে। এই রেগুলেটরি বডিতে থাকবেন শুধু সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে তাঁদের মুক্ত রাখতে হবে। কারণ সমন্বয়হীনতা, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল ও স্বাধীনতার অভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

কমপক্ষে ১৫টি আইন দ্বারা বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার বর্তমান আইনি কাঠামো পরিচালিত হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার মতো একটি একক উদ্দেশ্যের জন্য এত আইন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight − 4 =