মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিতে শিক্ষক আবদল্লাহ আল মাহমুদ

0
3411

মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী ঃ
রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকার প্রায় কাছাকাছি দুরত্বে বেশ আগেই গড়ে উঠেছে বিশেষ বৈশিষ্ঠ্যমন্ডিত একটি শিক্ষাপুরী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কিছু নামীদামী ও ঐশ্বর্যমন্ডিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ এই এলাকাটি। দেশের সেরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্টানের মধ্যে মতিঝিল মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ, নটরডেম কলেজ ও আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজতো আছেই। আর ঠিক এই শিক্ষা পুরিতেই মেয়েদের আলোকিত অন্যতম সমৃদ্ধ শিক্ষায়তন মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে। ফলে অনেকটা স্বাভাবিক কারণেই স্বীকার করতে হয় শিক্ষা ও মেধাবিকাশের অন্যতম উৎকর্ষ এলাকা হিসেবেও নামডাক রয়েছে মতিঝিলের এই শিক্ষাপুরীর।
এই এলাকার শিক্ষা, মানুষের মেধাবিকাশে ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ইতিহাসও কমবেশী অনেকেরই জানা আছে। প্রলম্বিত উপনিবেশিক ইংরেজ শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেশিত হয়ে তদানিন্তন পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষ অর্থ-বিত্ত, চাকরি আর শিক্ষাক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়ে । এ অবস্থায় কৃষিনির্ভর পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ চরম মাত্রায় হত দরিদ্র হয়ে পড়ে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ পুরোপুরী অন্ধকারে তলিয়ে যায়। উপনিবেশিক শক্তির  সঙ্গে ব্রান্ম্য চানক্য চক্রের  দূরভিসন্ধিমূলক যোগসাজশ আর চক্রান্তের মাধ্যমে পূর্ববাংলার কৃষিনির্ভর সমাজের বুক থেকে শিক্ষার সর্বশেষ আলোক শিখাও অত্যন্ত জঘন্য কায়দায় নিভিয়ে ফেলা হয়। এ অবস্থায় সমাজের নিঃস্ব ও হীনবল অধিকাংশ মানুষের হৃদয় থেকে শিক্ষার সাধ ও সাধ্য নিদারণ ভাবে মুছে যায়। আর এ প্রেক্ষাপটেই দ্বিজাতিতত্ত্বের নিরিখে ১৯৪৭ সালে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ দ্বিখন্ডিত হওয়ার মধ্যদিয়ে যুগ-যুগান্তরের উপনিবেশিক শাসন-শোষণের ধারা আংশিক হলেও থেমে যায়। পরিবর্তিত রাষ্ট্র কাঠামোর আওতায় ঢাকা প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে নতুন আঙ্গিকে সম্প্রসারিত ও বিকশিত হতে শুরু করে। আর তখনই ঢাকার অন্যান্য স্থাপনাদির সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ওঠে মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা। শিল্প বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তখন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঠিক এ প্রেক্ষাপটে ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। অনেক বাধা-বিপত্তি ও চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে বর্তমানে এই স্কুলটি মেয়েদের শিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত সব পরীক্ষায় এই স্কুলটির শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস নিশ্চিত করেছে। সদ্য প্রকাশিত জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও দেখা যায়, ৩৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে-৩১৭ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাকীরা সব এগ্রেড পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই সফলতার পিছনে স্কুলটির সম্মানিত সকল শিক্ষক ও অভিভাবক মন্ডলীর নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার বিষয়টি অবশ্যই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সফলতা, ব্যর্থতা ও শিক্ষার মান এমনকি পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আমরা বেশ কয়েক জন সম্মানিত অভিভাবকের দেখা পাই। তাঁদের মাধ্যমে কোমলমতি অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও আমাদের কথা হল। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের গোটা বিষয়টি সম্পর্কে খোলামেলা মন্তব্য করে। তাদের এই মন্তব্য থেকে সুস্পষ্ট ভাবেই জানা যায়, আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যথোপযুক্তভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সম্মানিত শিক্ষক বৃন্দ নিরলস ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অভিভাবক ও অনেক শিক্ষার্থীর দাবী তাদের এই বিদ্যালয়টি একদিন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নারী শিক্ষাকে আরো বিকশিত হতে গুরত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ অতিগুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্টানটি। বিশেষ  করে বিদ্যালয়টির সুযোগ্য শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি সহানুভূতি ও যতœশীল আচরণের নানা দৃষ্টান্তের কথাও জানা যায়। সেই সুবাদে বহুল পরিচিত সংবাদ মাধ্যম অপরাধ বিচিত্রা এর পক্ষে মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অত্যন্ত মানবিক গুণ সম্পন্ন সফল এই শিক্ষকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনকারী সুযোগ্য এই শিক্ষক জানালেন “শিক্ষকতার সেবাধর্মী আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে নিছক ডাল-ভাতের সংস্থান কিংবা পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষনের জন্যই শিক্ষকতায় যোগদান করিনি আমি সেবা ও মানবিক মূল্য বোধের  নিরিখে আগামী প্রজম্মের সুনাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের যথোপযুক্তভাবে গড়ে তোলার  কঠিন তাড়নার ওপর ভর করেই শুর হয় আমার শিক্ষকতা জীবন। আর সীমাহীন প্রতিকূলতার  মধ্যেও শিক্ষকতার মানবিক এই মূল্য বোধের ওপর সর্বাবস্থায় অটল থাকার ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আশাবাদী”। আমাদের পর্যবেক্ষণেও দেখা যায়, বর্তমানের অতিজাগতিক এই পরিবেশ-পরিস্থিতির  মধ্যে আবদুল্লাহ আল মাহমুদের মতো উদার মনোভঙ্গি সম্পন্ন অমায়িক ভদ্র শিক্ষকরা সত্যিকার অর্থেই চিরন্তন প্রেরণার উৎস।
ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত নিরহংকারী ও কৃতি এই শিক্ষক ২ সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী আফিফাতুন্নেছা ইতিহাসে অনার্স পর্যন্ত পড়াশুনা করে একজন সুযোগ্য গৃহিণী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৬৯ সালের ২৫ জুলাই বগুড়া শহরের অদূরে গাবতলীতে জন্মগ্রহণ করেন কৃতি এই শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। তাঁর শ্বশুর এমদাদুর রহমানও সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেন। বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ হাইস্কুলে দীর্ঘকাল তিনি শিক্ষকতা করেন। তাঁর পিতা মৃত কলিম উদ্দিন প্রামানিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও একজন উদার প্রাণ ও মহানুভব ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 3 =