ফেনী-২ আসনের এমপি নিজামকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবী

3
1858

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের খুনী এবং জেল পলাতক
MG 15MG 12ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
নিজাম ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের খুনী এবং জেল পলাতক। সুতরাং ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজামকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গত ৫ ফেব্রুয়ারী, রবিবার বেলা ১১ ঘটিকায় আমরা ফেনীবাসী কর্তৃক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে বক্তাগন কথাগুলো বলেন। মোঃ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কাজী ফারুক, ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান মোশতাক আহমেদ ভাসানী, আবুল কালাম, মোঃ হান্নান ও আব্দুল মতিন প্রমুখ।
বক্তাগন আরো বলেন, নিজাম ফুলগাজীর জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে ফেনী শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সে সময় সকল জাতীয় দৈনিকে একরামাকে নিজাম খুন করেছে বলে লীড নিউজ করেছে। সুতরাং নিজামকে গ্রেফতার করতে হবে। তাছাড়া অস্ত্র মামলায় নিজামের ১০ বছর সাজা হয়েছে। রিভিউতেও তার সাজা বহাল আছে। আই,জি প্রিজন ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন সাজা কম খেটেছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে। সুতরাং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করতে হবে। অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দুর্বার আন্দোলন চলবে।
নিজাম হাজারীর এমপি পদ থাকা না থাকা
হাইকোর্টের বিভক্ত রায়
ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় এমপি নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা মামলায় হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দিয়েছেন। বিচারপতি মোঃ এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ  এ রায় দেন। রায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোঃ এমদাদুল হক নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকা অবৈধ ঘোষণা করেন। আর কনিষ্ঠ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকা বৈধ ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের দুই বিচারপতির এই দ্বিধাবিভক্ত রায়ের কারণে নিয়মানুযায়ী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে একটি নতুন বেঞ্চ গঠন করবেন। এরপর হাইকোর্ট চূড়ান্ত নিষ্পত্তি দেবেন। এর আগ পর্যন্ত নিজাম হাজারী সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোঃ এমদাদুল হক তাঁর রায়ে বলেন, ‘আমাদের সামনে প্রশ্ন হলো নিজাম হাজারী যথাযথভাবে সাজা ভোগ করেছিলেন কি না এবং আইনত এ রিট আবেদন চলতে পারে কি না। এ ক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্ত হলো— যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এ জাতীয় রিট আবেদন করতে পারেন। আবেদনকারীর এ রিট করার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই। রায়ে বলা হয়, কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া সব নথি, দলিলপত্র ও পক্ষগণের বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে এটা দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, অনুমোদনহীন অস্ত্র রাখার দায়ে নিজাম হাজারীর ১০ বছরের সাজা হয়েছিল। এটা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সাজা ভোগ শেষ করেননি। এর আগেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম আদালতের নথিতেই দেখা যায়, তিনি ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল কারাগারেই ছিলেন। আর নিজাম হাজারীর আইনজীবীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছেন। কারা মুক্তির বিষয়ে নিজাম হাজারীর আইনজীবীর দেওয়া তথ্যের সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম আদালতের দেওয়া আদেশের মিল নেই। রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেউ যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন, তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া অনুমোদনহীন অস্ত্র রাখা নিঃ সন্দেহে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। সংবিধানের ৬৬ (২) অনুযায়ী নিজাম হাজারী সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। যেহেতু তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতাই অর্জন করেননি, তাই তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল ঘোষণা করা হলো।
কনিষ্ঠ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান তাঁর রায়ে বলেন, সংসদ সদস্য পদে প্রার্থিতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালেই আবেদন দিতে হবে। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। সেখানে না গিয়ে হাইকোর্টে রিট করার সুযোগ নেই। সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও সংসদ সদস্য নির্বাচন-সংক্রান্ত যেকোনো বিরোধ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ব্যতীত অন্য কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। এ জন্য এ রিট আবেদনটি চলতে পারে না। রায়ে আরো বলা হয়, আদালতে যেসব নথিপত্র দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু সাংঘর্ষিক ও বিতর্কিত তথ্য রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ একবার বলছে সাজা খেটেই নিজাম হাজারী মুক্তি পেয়েছেন। আবার বলছে তিনি কারাগারে (অন্য এক অস্ত্র মামলা) ছিলেন। ‘সাজা কম খেটে বেরিয়ে গেছেন সাংসদ’—এই শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদলিপি দিয়ে বলেছিল, সাজা ভোগ করে রেয়াত প্রথায় ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর নিজাম হাজারী কারাগার থেকে মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ২০০৬ সালের ১ জুন কারাগার থেকে জামিনে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। রায়ে আরো বলা হয়, অস্ত্র মামলায় তাঁর দশ বছরের সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। যদি ওই সাজা বহাল থাকে তাহলে পরবর্তী সময়ে আরেকটি অস্ত্র মামলায় তিনি কিভাবে জামিনে মুক্তি পেলেন? সেই মামলার কোনো রেকর্ডও নেই। এসব থেকে প্রকৃত ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে উদ্ঘাটন করা যায় না যে নিজাম হাজারী প্রকৃতপক্ষেই সাজা সম্পূর্ণ ভোগ না করে মুক্তি পেয়েছেন। এ ধরনের তর্কিত বিষয় থাকলে রিট আবেদন চলতে পারে না, যে কারণে রিট আবেদনটি খারিজ করা হলো।
রায়ের পর নিজাম হাজারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আর কনিষ্ঠ বিচারপতি রিট খারিজ করে দিয়েছেন। তাই তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকবেন।
এর আগে একবার শুনানি শেষে গত ৩০ আগস্ট রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত। কিন্তু রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিনে (৩১ আগস্ট) নিজাম হাজারীর আইনজীবীরা সন্ধানীর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে বলেন, নিজাম হাজারী ১৩ বার রক্ত দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি বাড়তি রেয়াত পেয়েছেন। এ অবস্থায় রায় ঘোষণা স্থগিত করেন আদালত। পাশাপাশি নিজাম হাজারী কারাভোগের সময় কত ব্যাগ রক্তদান করেছেন এবং এ কারণে কত দিন কারাবাস রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন, সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করে। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্তদানের কোনো রেকর্ড তাদের কাছে নেই। ওই প্রতিবেদনে সন্ধানীর বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। এ অবস্থায় গত ১৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ২২ নভেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়। গত ২২ নভেম্বর আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, কারাবন্দি আসামির সাজার রেয়াত শতকরা কত ভাগ হবে? এ বিষয়ে শুনানিকালে গত ২৮ নভেম্বর আদালতের সামনে আরো একটি অস্ত্র মামলা চলে আসে। এদিন রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী আদালতকে বলেন, আদালতের নথিতে ২০১৪ সালে কারা কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিবেদনের ফটোকপি রয়েছে। তাতে দেখা যায়, নিজাম হাজারীকে ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল আরো একটি অস্ত্র মামলায় (অস্ত্র আইনে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় ১৯৯১ সালের ২৪ জানুয়ারি দায়ের করা মামলা, যা চট্টগ্রাম আদালতে ৭৫৯/৯৯ নম্বর মামলা হিসেবে বিচারাধীন) চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। এদিন ওই আদালতের দেওয়া আদেশের কপি এখানে রয়েছে। অর্থাৎ ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম আদালতের দেওয়া আদেশ অনুযায়ী সেদিন পর্যন্ত নিজাম হাজারী কারাগারে ছিলেন। অথচ হাইকোর্টে নিজাম হাজারীর পক্ষ থেকে দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি অন্য এক অস্ত্র মামলায় (চট্টগ্রাম আদালতে মামলা নম্বর ৭৫৭/৯৯) সাজা খেটে ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৬ সালের ১ জুন তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এই দুই রকম তথ্য পাওয়ায় নিজাম হাজারী ঠিক কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তার মধ্যে সঠিক তথ্য জানা দরকার। শুনানি শেষে আদালত পরের মামলার সর্বশেষ তথ্য ১ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় গত ১ ডিসেম্বর পরের মামলার (৭৫৯/৯৯) নথি উপস্থাপিত হয়। এরপর আদালত রায়ের জন্য ৬ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। গতকাল নির্ধারিত দিনে রায় ঘোষণা করা হয়। প্রথমে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক রুলটি যথাযথ বলে রায় দেন। এতে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকা অবৈধ ঘোষিত হয়। জ্যেষ্ঠ বিচারকের রায় ঘোষণা শেষ হলে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক রায় ঘোষণা শুরু করেন।
নিজাম হাজারীর কারাভোগ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৪ সালে ‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন দাখিল করা হয়। অস্ত্র মামলায় সাজা কম খাটার অভিযোগ এনে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। এ রিট আবেদনে ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে ফেনী-২ আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল দ্বিধাবিভক্ত রায় দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 + five =