Site icon Aparadh Bichitra

বন বিভাগের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলীর বেপরোয়া দুর্নীতির তদন্ত আবশ্যক

দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারী অফিসের দুর্নীতি  প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধে এখনও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা  হয়নি। বন বিভাগের কতিপয় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ ইউনুছ আলীর নেতৃত্বে বিগত সময়ে বেপরোয়া দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। যা তদন্ত হওয়া  প্রয়োজন। সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলীর দুর্নীতির কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো। সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলী কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) থাকাকালে সিলেটের বড়শী জোড়া ইকোপার্কের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এ সময় তিনি সিলেটের তৎকালীন ডিএফও এর সাথে আঁতাত করে বনায়ন সৃজন ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ না করে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। মোহাম্মদ ইউনুছ আলী কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক থাকাবস্থায় রিডল্যান্ড এফর স্টেশন প্রকল্পের প্রায় ১৬০০ হেক্টর বাগান না করে (শুধুমাত্র কাগজ-কলমে দেখিয়ে) সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। মোহাম্মদ ইউনুছ আলী দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন ১ কোটি টাকার উপরে ঘরবাড়ি মেরামতের টাকা কোন কাজ না করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। মোহাম্মদ ইউনুছ আলী সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক (সাধারণ) থাকাকালীন বায়োডাইভারসিটি প্রকল্পের প্রায় ৪ কোটি টাকার গাড়ি, কম্পিউটার ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন যা অতি নিম্নমানের। সেগুলো কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই মালামাল এখনও গুদামজাত অবস্থায় আছে।
দায়িত্ব পালনে অদক্ষতাঃ
সারাদেশের বন বিভাগের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরের প্রায় একশো কোটি টাকার উপরে সরকারি রাজস্ব অনাদায়ী রয়েছে। উক্ত রাজস্ব আদায়ে মোহাম্মদ ইউনুছ আলী প্রধান বন সংরক্ষকের দায়িত্ব পালনকালীন অবস্থায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
অবৈধভাবে নিয়োগঃ
বিধি-বিধান লংঘন করে বন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনে ক্যাডার কর্মকর্তার পরিবর্তে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের  বিনিময়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা পোস্টিং দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষিত ঃ
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বদলির নীতিমালা লংঘন করে ফরেস্টার আতাউর রহমান দীপুকে (ফৌজদারহাট চেক স্টেশনে কর্মরত) রাঙামাটি সার্কেল থেকে চট্টগ্রাম সার্কেলে বদলি করেন জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলী। এছাড়া চেক স্টেশনে ১ বছরের বেশি দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকলেও ফরেস্টার দীপু ২ বছর দায়িত্ব পালন করছেন এবং কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করছেন যার ভাগ সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক নিয়মিত পেয়েছেন।
সুয়াগাজী চেক স্টেশনঃ
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের অধীন সুয়াগাজী ফরেস্ট চেক স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা জনাব রেজাউল আলম তার আস্থাভাজন ছিলেন। রেজাউল আলম বদলি ও নিয়োগ বিধি লংঘন করে ১ বছরের অধিককাল সুয়াগাজী চেক স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে উপার্জন করেছেন। তিনি পুনরায় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে পোস্টিং পেয়েছেন এবং লোভনীয় পোস্টিং বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
স্ত্রী ও সন্তানদের
মালয়েশিয়া ভ্রমণঃ
প্রায় বছর দেড়েক পূর্বে স্ত্রী ও সন্তানদের  মালয়েশিয়া পাঠিয়ে সেখানে সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন।
ডিএফও এবং সিএফ মিশনঃ
অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা জনাব শাহ-ই-আলম নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা থাকাকালীন বাগান সৃজনে ব্যর্থ হওয়ায়  ইউনুছ আলীকে তিনি ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দেন। ওয়ান ইলেভেনে পালিয়ে যাওয়া চট্টগ্রামের বর্তমান বন সংরক্ষক  মোঃ আব্দুল লতিফ মিয়া চট্টগ্রামের বন  সংরক্ষকের দায়িত্বে আসার জন্য সাবেক সিসিএফ জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলীকে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। বন কর্মকর্তা আরএসএম মনিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলী ৩০ লাখ টাকা উৎকোচ দেন এবং পরবর্তীতে আরো ৩০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে সাবেক সিসিএফ জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ আলী তাকে সিলেট বন বিভাগে বদলির প্রস্তাব করেন। এছাড়া বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পর অনেক জ্যেষ্ঠ বন কর্মকর্তা থাকার পরও তার আজ্ঞাবহ সাবেক ডিএফও (বর্তমানে সিএফ প্রশাসন) জনাব রাকিবুল ইসলাম মুকুলকে অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে বদলির প্রস্তাব করেন।
জব্দকৃত বনজ দ্রব্যঃ
সারাদেশে বন বিভাগে কোটি কোটি টাকার জব্দকৃত বনজ দ্রব্য বিক্রয়ের কোন ব্যবস্থা জনাব ইউনুছ আলী গ্রহণ করেননি। যার ফলে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সোনারগাঁও চেক স্টেশনঃ
ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে একটি চেক স্টেশন রয়েছে। সেখানে বিগত কয়েক মাস পূর্বে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের উন্নয়নের অর্থ তছরূপকারী জনাব শিব প্রসাদ ভট্টচার্যকে পোস্টিং দেওয়া হয়। যেখানে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, লামা বন বিভাগ, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ থেকে ট্রাকভর্তি প্রতিটি গাড়ি থেকে নির্ধারিত হারে সোনারগাঁও চেক স্টেশনসহ ঐ পথে আসা সকল স্টেশনে ঘুষ দেওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ফার্নিচারের গাড়ি কিংবা ট্রাক এবং জোতের গাছ (নিজের বাগানে লাগানো গাছ) বহনকারী গাড়ি থেকেও ঘুষ দিতে হয় সোনারগাঁও চেক স্টেশনের স্টেশন অফিসার শিব প্রসাদ ভট্টচার্যকে। অবৈধ টাকার জোরে তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি ইউনুছ আলীর ডানহস্ত বলে পরিচিত। এছাড়া প্রতাপশালী ফরেস্ট রেঞ্জার জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান সমস্ত বিধি বিধান লংঘন করে প্রায় ৪ বছর সোনারগাঁও চেক ষ্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি আনুমানিক ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাকে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি অবশ্যই প্রমাণিত হবে।